দলের সাম্প্রতিক ফর্ম নিয়ে চরম চিন্তায় ছিলেন জিনেদিন জিদান। এক ঝটকায় তাকে চিন্তার সাগর থেকে আকাশে তুলে দিয়েছে শিষ্যরা। রদ্রিগোর হ্যাটট্রিকের সঙ্গে করিম বেনজেমার জোড়া গোলে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে গ্যালাতাসারের বিপক্ষে ৬-০ গোলে জিতেছে লস ব্লাঙ্কোসরা।
লা লিগায় সবশেষ ম্যাচে ড্র করায় বার্সেলোনাকে ছাড়িয়ে শীর্ষে ওঠা হয়নি। তার উপর চলতি মৌসুমের শুরু থেকে একরকম গোলখরায় ভুগছিলেন রিয়ালের ফরোয়ার্ডরা। তবে গ্যালাতাসারে ম্যাচে সব শঙ্কাই কেটে গেছে।
বুধবার রাতে ম্যাচের মাত্র ৭ মিনিটের মধ্যেই ২-০ করে ফেলে রিয়াল। কাজটা করেন ১৮ বছরের রদ্রিগো। ম্যাচের ১৪ মিনিটেই স্কোরলাইন হয় ৩-০। এসময় পেনাল্টি থেকে গোল করেন সার্জিও রামোস। যোগ করা সময়ে নিজের হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন রদ্রিগো। সবচেয়ে কম বয়সী ব্রাজিলিয়ান হিসেবে ইউরোপের টপ ক্লাব পর্যায়ে হ্যাটট্রিকের নজির গড়লেন তিনি। তাছাড়া রাউল গঞ্জালেসের পর দ্বিতীয় টিনেজার হিসেবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে হ্যাটট্রিক করলেন।
প্রথমার্ধের শেষ মিনিটে গোলের হালি পূর্ণ করেন বেনজেমা। এটি রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে তার ৫০তম গোল। যেকোনো এক ক্লাবের হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ৫০ গোল করা মাত্র চতুর্থ খেলোয়াড় হলেন ফরাসি ফরোয়ার্ড।
গ্রুপ ‘এ’র ক্যাম্পেনে বাজে শুরু করেছিল রিয়াল। এখন তৃতীয় স্থানে থাকা ক্লাব ব্রুগের চেয়ে পরিষ্কার পাঁচ পয়েন্টে এগিয়ে তারা। ফলে শেষ ১৬ মোটামুটি নিশ্চিত রিয়ালের। কারণ, দৌড় থেকে এরইমধ্যে ছিটকে গেছে দুটি পরাজয় বরণ করা গ্যালাতাসারে।
চোখ ধাঁধানো এক গোলেই খাতা খোলে রিয়াল ও রদ্রিগো। স্বদেশি মার্সেলোর ক্রস থেকে বল পেয়ে বাঁ-পায়ের শটে নিখুঁত ফিনিশিং দেন ব্রাজিলিয়ান নতুন তারকা। দ্বিতীয় গোল পান গ্যালাতাসারে ডিফেন্সের ভুলে। এবারও বল সরবরাহ করেন মার্সেলো।
১৪ মিনিটে রামোসের গোলের পর আরও একবার গ্যালাতাসারের জালে বল জড়ান রিয়ালের টনি ক্রুজ। তবে ভিএআর দেখে ফাউলের জন্য সে গোল বাতিল করেন রেফারি। অফসাইডের কারণে বাতিল হয় কাসেমিরোর দেয়া এক গোলও। হ্যাজার্ডকে গোলবঞ্চিত করেন উরুগুইয়ান গোলকিপার মুসলেরা। তবে প্রথমার্ধের শেষ মিনিটে হালি পূরণ করেন বেনজেমা। তার গোলের উৎস আবার রদ্রিগো।
বিরতির পর ক্রুজের নিশ্চিত গোল ঠেকিয়ে দেন মুসলেরা। সেই সময়ই বদলি হিসেবে নামা ইসকোর ফিরতি বুলেট শট আটকে দেন গ্যালাতাসারে গোলকিপার। রিয়ালের একের পর এক আক্রমণের ফাঁকে দু-একবার গোলের চেষ্টা করে গ্যালাতাসারে, তবে থিবো কোর্তোয়াকে তেমন কোনো পরীক্ষায় ফেলতে পারেনি তারা। এরমধ্যেই ৮১ মিনিটে ৫-০ করেন বেনজেমা।
এই নিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ভিন্ন ভিন্ন ১৫টি দলের বিপক্ষে গোল করলেন বেনজেমা। একমাত্র ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের রায়ান গিগসই তার চেয়ে বেশি ক্লাবের বিপক্ষে গোল করতে পেরেছেন। রেড ডেভিল তারকার ১৬টি ক্লাবের বিরুদ্ধে গোল করার নজির আছে।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগে রিয়ালের হয়ে এদিন ৫০তম গোল করেন বেনজেমা। এই ক্ষেত্রে তিনি চতুর্থ খেলোয়াড়, যিনি এক ক্লাবের হয়ে এই রেকর্ড করলেন। সামনে কেবল লিওনেল মেসি (১১৩/বার্সা), ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো (১০৫/রিয়াল) ও রাউল গঞ্জালেস (৬৬/রিয়াল)। বেনজেমার রেকর্ড গড়ার পর ম্যাচের যোগ করা সময়ে হ্যাটট্রিক পূর্ণ করার সঙ্গে গোলের সংখ্যা আধাডজন করেন রদ্রিগো।
টানা ১৬টি অ্যাওয়ে ম্যাচ হারল গ্যালাতাসারে। আর দ্বিতীয়বার ৬ গোল হজম করল তারা। এর আগে রিয়ালের বিপক্ষেই ২০১৩ সালে ছয় গোল খেয়েছিল তুর্কি ক্লাবটি। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে রিয়ালের কাছে মোট ২৭ গোল হজম করল তারা। অন্য যেকোনো ক্লাবের কাছে হজম করা গোলের চেয়ে ১৩ গোল বেশি।
জয়ে চার ম্যাচে ৭ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ ‘এ’র দ্বিতীয়স্থানে থাকল রিয়াল। সমান ম্যাচে ১২ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে পিএসজি। চার ম্যাচে দুই পয়েন্ট পেয়ে তিনে ক্লাব ব্রুগ। আর চার ম্যাচে এক পয়েন্ট অর্জন করে তলানিতে গ্যালাতাসারে।