চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

রক্তাক্ত ২১ আগস্ট: সেদিন যা ঘটেছিল

কিছুক্ষণের মধ্যেই বঙ্গবন্ধু এভিনিউ থেকে সন্ত্রাস ও বোমা হামলার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের মিছিল হবে। মিছিলে থাকবেন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা। হাজার হাজার মানুষের স্রোত সমাবেশে। হাজারো মানুষের সমাগমে রীতিমতো মহাসমাবেশের রূপ নিয়েছে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের চতুর্দিক।

ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের সামনে গিয়ে মিছিল শেষ হবার কথা। তাই মঞ্চ নির্মাণ না করে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে একটি ট্রাককে মঞ্চ হিসাবে ব্যবহার করা হয়। ট্রাকের ওপর সে সময়ের প্রায় সব কেন্দ্রীয় নেতা রয়েছেন। চারিদিকে দু’বার ঘুরেছি। গরমে ত্রাহি অবস্থা!

ভ্যাপসা গরমে সেদিনের সেই বিকেলে আমরা বেশ কয়েকজন সাংবাদিক রমনা ভবনের সিঁড়িতে বসে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের নোট নিচ্ছিলাম। নিয়মিত তার বিভিন্ন রাজনৈতিক অনুষ্ঠানের বক্তব্য কাভার করায় বুঝতে পারছিলাম তিনি তার বক্তব্যের শেষ দিকে রয়েছেন।

সন্ত্রাস ও বোমা হামলার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের সেই মিছিলপূর্ব সমাবেশে হঠাৎ বিস্ফোরণের প্রথম আওয়াজ আর সমাবেশে যোগ দেয়া মানুষের ছোাঁছুটির মধ্যে দ্বিতীয় বিস্ফোরণে বুঝতে বাকী রইল না কী ঘটছে। এর আগে বরিশালের গৌরনদীতে শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলার ঘটনাসহ তার ওপর বেশ কয়েক বার হামলা হয়েছে। কিন্তু এই হামলাটি ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রকৃতির। রাজধানী ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে প্রকাশ্য জনসমাবেশে এমন হামলা শুধু অভূতপূর্ব না, বরং এটি ছিল বাংলাদেশের রাজনৈতিক সন্ত্রাসের ইতিহাসে ঘটে যাওয়া সবচেয়ে নির্মম ও জঘন্যতম ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের দ্বিতীয় অধ্যায়, যা সফল হলে আবারো হয়ত বদলে যেত বাংলাদেশের সবকিছু! 

দ্বিতীয় বিস্ফোরণের পরই রমনা ভবনের সিঁড়ি বেয়ে চলে গেলাম দোতলায়। মূল উদ্দেশ্য: যে ট্রাকটির ওপর শেখ হাসিনা দাঁড়িয়ে বক্তব্য রাখছিলেন সেটি দেখা। লম্বা বারান্দার কাছে যাবার আগেই উপুড় হয়ে শুয়ে ক্রল করে এগিয়ে গিয়ে যে দৃশ্য দেখলাম তা বর্ণনাতীত। অসংখ্য মানুষের ছিন্নভিন্ন দেহ পড়ে রয়েছে। এর আগে পহেলা বৈশাখে রমনার বটমূলে বোমা হামলার পর ঘটনাস্থলে থাকায় যে দৃশ্য দেখেছিলাম, এই দৃশ্য ছিল তার চেয়েও ভয়াবহ। ছিন্নভিন্ন মানুষের রক্তে রক্তাক্ত পুরো ঘটনাস্থল!

ইতোমধ্যেই হাতের মোবাইল ফোনে সংযোগ পেতে চেষ্টা করছিলাম বার্তা সংস্থা ইউএনবি’র চিফ অফ করেস্পন্ডেন্টস শামীম আহমদের ফোনে। রিং হচ্ছে কিন্তু তিনি ধরছেন না। এক মুহূর্ত দেরি না করে ফোন দিলাম সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট জাহিদ নেওয়াজ খান জুয়েলকে। অ্যাড্রিনালিন রাশে আমি ছিলাম উত্তেজিত! ‘জুয়েল ভাই, শেখ হাসিনার সমাবেশে হামলা হইছে! ভয়াবহ অবস্থা! বহু লোক মারা গেছে! শামীম ভাইকে ফোনে পাচ্ছি না, আপনি জলদি আসেন!’ ওদিক থেকে জুয়েল ভাইয়ের পাল্টা প্রশ্ন: ‘তুমি ঠিক আছো তো?’

নেত্রীর বুলেটপ্রুফ মার্সিডিজ বেঞ্জ জিপটিকে চলে যেতে দেখেছি। থেমে থেমে গুলির আওয়াজও পাচ্ছিলাম। নেত্রী কি জীবিত আছেন? অসংখ্য নেতাকর্মীর রক্তাক্ত দেহ পড়ে রয়েছে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে! হাজারো জুতা স্যান্ডেল পড়ে রয়েছে! এরই মধ্যে পুলিশের টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ চলছে। তবে কী সবই পূর্ব পরিকল্পিত? মনে ঘুরছে নানান প্রশ্ন। উত্তর খুঁজছি গত ১৩ বছর ধরে!

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)