যুদ্ধ দেশে দেশে বিপদ ডেকে আনে। আনে বিপর্যয়। মানবতার বাণী কাঁদে নিষ্ঠুরতার সঙ্গে। সভ্যতাকে ব্যাঙ্গ করে যুদ্ধ নামক অসভ্যতা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে একটি অঘটনের শিকার হয় বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের জাহাজ বাংলার সমৃদ্ধি। হঠাৎ এক গোলাগুলিতে পড়ে প্রাণ হারান এক নাবিক। বাকিরা জিম্মি হয়ে পড়ে। অনেক চেষ্টায় সরকার জাহাজের বাকি ২৮ জন নাবিককে উদ্ধার করে পোল্যান্ড নিয়ে আসে। এক্ষেত্রে ভারতের অপারেশন গঙ্গার অধীন এই উদ্ধার কাজটি সম্পন্ন হয়। ভারত সরকারকে বাংলাদেশ বিশেষ ধন্যবাদ জানিয়েছে।
আজ ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে রকেট হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ‘এমভি বাংলার সমৃদ্ধি’র ২৮ নাবিক আজ বুধবার দুপুর ১২টায় দেশে ফেরেন। ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে তাদের বহনকারী ফ্লাইটটি। গতকাল মঙ্গলবার রাতে বিদেশি একটি ফ্লাইটে বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা হন নাবিকেরা। গত রোববার বেলা ১১টার দিকে তারা ইউক্রেন সীমান্ত পেরিয়ে মলদোভা হয়ে রোমানিয়া পৌঁছান। এছাড়া ইউক্রেনে রাখা জাহাজটির তৃতীয় প্রকৌশলী হাদিসুর রহমানের মরদেহও দেশে ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। গত বুধবার বাংলাদেশ সময় রাত ৯টা ২০ মিনিটে অলভিয়া বন্দর জেটির অদূরে নোঙর করে রাখা বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের জাহাজ ‘এমভি বাংলার সমৃদ্ধি’ ক্ষেপণাস্ত্র হামলার শিকার হয়। জাহাজে গোলার আঘাতে তৃতীয় প্রকৌশলী হাদিসুর রহমান নিহত হন। গত বৃহস্পতিবার নাবিকদের একটি টাগবোটে বন্দরের বাইরে একটি বাংকারে নেওয়া হয়। সেখান থেকে রোমানিয়ায় নেওয়া হয়। রোমানিয়া থেকে ঢাকায় ফিরলেন ২৮ নাবিক।
বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের এই জাহাজ তুরস্কের ইরাগলি বন্দর থেকে পণ্য বোঝাই করতে গত ২১ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরের উদ্দেশে রওনা হয়। দুই দিন পর অলভিয়া বন্দরের জলসীমায় নোঙর করে। পরদিন বৃহস্পতিবার ভোরে রাশিয়া ইউক্রেন হামলা করলে জাহাজটি আটকা পড়ে। এক সপ্তাহের মাথায় হামলার শিকার হয়। বুধবারের হামলার পর এমভি বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজে আগুন ধরে যায়। শুরুতে নাবিকেরা আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। অলভিয়া বন্দর থেকে একটি টাগবোট এসে আগুন নেভানোর কাজে অংশ নেয়। নাবিকদের চেষ্টায় জাহাজের আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। হামলায় জাহাজের ব্রিজ ধ্বংস হয়ে গেছে। ধ্বংসস্তূপে নাবিক হাদিসুর রহমানের নিথর দেহ পড়ে ছিল। হাদিসুর রহমানের লাশ এখনও আসেনি।
যুদ্ধের গোলায় সহকর্মীর মৃত্যু দেখা বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজের মাস্টার জি এম নূর ই আলম বাকি নাবিক ও প্রকৌশলীদের নিয়ে দেশে ফিরতে পেরে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। তবে এত দ্রুত সুস্থভাবে সবাই ফেরা সম্ভব হবে, সেটা তিনি ‘ভাবতেও পারেননি’। আলম বলেন: আমরা আতঙ্কিত ছিলাম। আমাদের সরকার যথেষ্ট পদক্ষেপ নিয়েছে। আমরা এখানে সুস্থভাবে আসতে পেরেছি, এটাই বড় কথা। তবে আমরা জার্নি করায় খুব ক্লান্ত।
সরকারের এটিও একটি বড় অর্জন। ২৮ জন নাবিককে সুস্থ অবস্থায় দেশে ফিরিয়ে আনতে পেরেছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের দূতাবাসগুলো যদি এরকম ত্বরিৎ এবং এরকম পদক্ষেপ নেয় তবে বিভিন্ন দেশে থাকা বাংলাদেশিরা প্রবাসীরা স্বস্তি পাবেন।