মাঙ্কিপক্স যৌন স্বাস্থ্য সেবার উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে বলে সতর্ক করেছেন ডাক্তাররা।
বিবিসি জানায়, ক্লিনিকের কর্মীরা যদি সংক্রামিত কারও সংস্পর্শে আসেন তবে তাদেরকে আলাদা করতে হবে। যুক্তরাজ্যের লন্ডনে ২০ জনের মাঙ্কিপক্স শনাক্ত হয়েছে ইতোমধ্যেই। সেখানকার যৌন স্বাস্থ্য ক্লিনিকগুলিতে লোকেদের হাঁটাচলা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
জেনিটোরিনারি মেডিসিনের পরামর্শদাতা এবং ব্রিটিশ অ্যাসোসিয়েশন ফর সেক্সুয়াল হেলথ অ্যান্ড এইচআইভির সভাপতি ডা. ক্লেয়ার ডিউসন্যাপ বলেছেন, যৌন স্বাস্থ্য ক্লিনিকের কর্মীরা ইতিমধ্যেই উল্লেখযোগ্য চাপের মধ্যে রয়েছেন। মাঙ্কিপক্স পরিস্থিতিটিকে আরও খারাপ করে তুলছে।
‘কর্মীদের সংক্রামিত কারও সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের কারণে তাদের বিচ্ছিন্ন করতে হলে যৌন স্বাস্থ্য সেবায় ব্যাপক প্রভাব ফেলবে।’
এটিকে আগে যৌন সংক্রামিত ভাইরাস হিসাবে বর্ণনা করা হয়নি। তবে এটি যৌনতার সময় সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে আরেকজনের শরীরে প্রবেশ করতে পারে।
সংক্রমণের সাম্প্রতিক হারকে মাথায় রেখে যুক্তরাজ্যের হেলথ সিকিউরিটি এজেন্সি সমকামী বা উভকামী পুরুষদের কোন অস্বাভাবিক ফুসকুড়ি বা ক্ষত সম্পর্কে সচেতন হতে পরামর্শ দিয়েছেন। উদ্বেগজনক কিছু মনে হলে তাদের স্থানীয় যৌন স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সাথে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
ডাক্তারের সাথে অ্যাপয়েন্টমেন্টের আগে লন্ডনের ক্লিনিকগুলি রোগীদেরকে প্রতিষ্ঠানটির কর্মীদের সাথে আগাম যোগাযোগ করে তাদের রোগের লক্ষণগুলি জানাতে বলেছেন। যাদের মাঙ্কিপক্সের উপসর্গ রয়েছে তাদের ওয়েটিং রুম বা ক্লিনিকে অন্যান্য রোগীদের থেকে দূরে রাখার পরামর্শ দিয়েছে।
তবে আশার কথা হলো যৌন স্বাস্থ্য ক্লিনিকের কিছু কর্মী ইতিমধ্যেই গুটিবসন্তের ভ্যাকসিন নিয়েছেন। ভ্যাকসিনটি তাদের মাঙ্কিপক্স থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করবে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। দুটি ভাইরাস প্রায় একই রকম হওয়ায় গুটিবসন্তের ভ্যাকসিন মাঙ্কিপক্স থেকে অনেকটা সুরক্ষিত রাখতে পারে।
মাঙ্কিপক্স সাধারণত সেন্ট্রাল বা পশ্চিম আফ্রিকা ভ্রমণের সাথে জড়িত। তবে এই দেশগুলির বাইরে আক্রান্তদের অনেকেরই উক্ত অঞ্চলে ভ্রমণের কোন ইতিহাস নেই।
মাঙ্কিপক্স মানুষের মধ্যে সহজে ছড়িয়ে পড়ে না। তবে ভাইরাসটি নিম্নোক্ত উপায়ে সংক্রমিত হতে পারে:
১. মাঙ্কিপক্স ফুসকুড়িতে আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত পোশাক, বিছানা বা তোয়ালে স্পর্শ করা।
২. মাঙ্কিপক্সের ত্বকের ফোসকা বা স্ক্যাব স্পর্শ করা।
৩. আক্রান্ত ব্যক্তির কাশি বা হাঁচির সংস্পর্শ।
মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত হলে প্রথম লক্ষণগুলি দেখা দিতে সাধারণত ৫ থেকে ২১ দিনের মধ্যে সময় লাগে।
লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে জ্বর, মাথাব্যথা, পেশী ব্যথা, পিঠে ব্যথা, লিম্ফ নোড ফোলা, ঠান্ডা লাগা এবং ক্লান্তি।
শরীরে ফুসকুড়ি তৈরি হতে পারে। প্রায়শই মুখ থেকে ফুসকুড়ি শুরু হয়, তারপর শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে। কিছুটা চিকেন পক্সের মতো ফুসকুড়ি পরিবর্তিত হয় এবং বিভিন্ন পর্যায়ে যায়।
অল্পবয়সী শিশু, গর্ভবতী মহিলাদের এবং যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল তাদের ক্ষেত্রে রোগটি আরও গুরুতর হতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ভাইরাসের বিস্তার সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের সাথে একটি জরুরি সভা আহ্বান করছে।
মাঙ্কিপক্স সাধারণত মৃদু ধরনের ভাইরাস। মধ্য এবং পশ্চিম আফ্রিকার বাইরে এটি বেশ বিরল ছিল এতো দিন। তবে বিশ্বের অন্তত ১৩টি দেশে প্রায় ৮০ জনের মাঙ্কিপক্স শনাক্তের কথা নিশ্চিত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
ইতালি, সুইডেন, স্পেন, পর্তুগাল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডা, সেইসাথে যুক্তরাজ্যে সংক্রমণ নিশ্চিত করা হয়েছিল।
যখন কেউ সংক্রামিত ব্যক্তির সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ করে তখন মাঙ্কিপক্স ছড়াতে পারে। ভাইরাসটি চামড়ার ক্ষতের মাধ্যমে বা চোখ, নাক বা মুখ দিয়ে শরীরে প্রবেশ করতে পারে।