চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

যোগ্যতাই যখন মানুষের বড় শত্রু!

প্রিয় নোবেল,
ভিনদেশে, ভিন্ন ও প্রতিকূল পরিবেশে দীর্ঘসময় ধরে চলা একটি রিয়েলিটি শোর জার্নিটা কতো কঠিন, এবং বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে, বাধা-বিঘ্ন অতিক্রম করে, প্রতিটি ধাপ পেরিয়ে একেবারে ফাইনালে চলে যাওয়াটা যে কত বড় কৃতিত্ব ও যোগ্যতার কাজ, তা আমরা যারা নিজ দেশের মানুষের সাফল্য ও কৃতিত্বে সব সময়ই খুশি হই, উল্লসিত হই, গর্ব অনুভব করি, তারা ভালোভাবেই বুঝতে পারি।

কলকাতা এমন এক স্থান, যেখানে বাংলা গানের মহা-মহা শিল্পীরা, রথী মহারথীরা জন্ম নিয়েছেন। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, মান্না দে, জগন্ময় মিত্র, সতীনাথ, শ্যামল মিত্র, কিশোর কুমার, সুমন, নচিকেতাদের পূণ্যভূমিতে যেন-তেন মার্কা গান গেয়ে, গুণী বিচারকবৃন্দসহ সর্বস্তরের শ্রোতাদের মন জয় করাটা যে একটা অচিন্তনীয় ও অকল্পনীয় ব্যাপার এটা বোঝা ও উপলব্ধি করার জন্য গানের খুব সমঝদার আদমি হওয়ার দরকার আছে বলে অন্তত আমার মনে হয় না।

অনুষ্ঠানটিতে হিন্দি, গজল, যা ভিন ভাষী একজন আনকোরা গানের শিল্পীর জন্য মোটেই সহজ হওয়ার কথা নয়, সেই সব গানসহ বাংলা গানের প্রতিটি শাখার একাধিক গান অসামান্য দক্ষতা ও সাবলীলতায় তুমি তোমার সুরের মধুতে ভরপুর দরাজ গলায় উপস্থাপন করেছো। শুধু একমাত্রিক পপ ও রক গান, যা তুমি গাইতে বেশি সাচ্ছন্দ্য অনুভব কর বলেই অনেকের মনে হয়, শুধু সেসব গানে পারদর্শীতার মধ্যেই যদি তুমি আটকে থাকতে, আমরা ভালো করেই জানি, তোমার জার্নিটা কিছুতেই এতো দীর্ঘ হতো না, তোমাকে নিয়ে এতো উচ্ছ্বাস-আবেগ-ভালোবাসা-ঘৃণা-আলোচনা-সমালোচনারও কিছুই থাকতো না। অনুষ্ঠানের কোন এক পর্যায়ে তুমি ঝরে যেতে, যেমন বেশ কয়েকজন বাংলাদেশী প্রতিযোগীসহ কলকাতার অনেক অনেক প্রতিযোগীই বিভিন্ন পর্যায়ে নীরবে, নিভৃতে ঝরে গেছে।

নোবেল,
তুমি খুব ভালোভাবেই প্রমাণ করেছো তুমি ভালো গায়ক, অসাধারণ গান গাও তুমি। নিয়মিত অনুশীলন, নিষ্ঠা, একাগ্রতা, এবং গানের প্রতি গভীর ভালোবাসা ও আবেগটা যদি ধরে রাখতে পারো তবে আমরা নিশ্চিত তুমি বাংলা গানের জগতে একটি ভালো আসন কিংবা অবস্থান তৈরী করে নিতে পারবে।

তবে শিল্পের জগতটা যে মসৃণ নয়, এই জগতে প্রতিভা থাকলেই যে সহজ ও সাবলীল ভাবে হেঁটে যাওয়া যায় না, বিখ্যাত হয়ে উঠার আনন্দ উপভোগের চেয়ে এর জ্বালাটাই যে গায়ে আঁচ লাগায় বেশি (বিশেষ করে বাংলাদেশে) সেটা নিশ্চয়-ই তুমি এতোদিনে কিছুটা হলেও বুঝতে পারছো! আট মাস আগে তোমার একজন অতি প্রিয় সুরকারের একটি গানের প্রতি গভীর ভালোবাসা ও আবেগ অনুভব করে আগ-পিছু না ভেবেই আমাদের প্রিয় জাতীয় সংগীত নিয়ে যে বালকসুলভ মন্তব্যটি তুমি করেছিলে, সেই প্রায় আড়ালে পড়ে যাওয়া গুরুত্বহীন মন্তব্যটিই এখন অতি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে যে তোমাকে হুল ফোটাচ্ছে, কামড়াচ্ছে, ক্ষত-বিক্ষত করছে, এটাই হচ্ছে প্রতিভাবিরল আমাদের দেশটিতে কেউ তার প্রতিভার ঝলক দেখানোর মতো দুঃসাহস দেখাতে চাইলে তার যথাযোগ্য পুরস্কার!

বাংলাদেশ হচ্ছে সেই দেশ, এবং সম্ভবত পৃথিবীর একমাত্র দেশ যেখানে সমালোচকরা (যারা সমালোচনার সঙ্গে নিন্দা ও কুৎসার পার্থক্যটা বোঝেন না, এবং বুঝবেও না কোনদিন) সমালোচনা নামক নর্দমার বিষ্ঠা, কীট এবং ভয়াবহ বিষ নিয়ে একযোগে ঝাঁপিয়ে পড়ে তাদের উপর যাঁরা নিজ দেশের অপেক্ষাকৃত পরিশ্রমী, সৎ, যাঁরা সত্যিকারের মেধাবী ও প্রতিভাবান মানুষ। গুণীদের বিব্রত করতে, তাদের চরিত্রহননের চেষ্টা করতে আসলেই আমাদের কোন জুড়ি নেই। নিজেদের শ্রেষ্ঠ মানুষ, শ্রেষ্ঠ সন্তানদের সমালোচনা নামক কুৎসা ও বিষে জর্জরিত করে আমারা তাঁদেরকে কতোটা কোনঠাসা, কতোটা মুক ও বধির করে ফেলতে পারি, দেশের অন্যতম সেরা সন্তান, একমাত্র নোবেলজয়ীর দিকে তাকালেই তা বুঝতে পারা যায়।

প্রিয় নোবেল,
প্রতিভাবিরল দেশে প্রতিভা, মেধা, যোগ্যতাই হচ্ছে মানুষের বড় শত্রু। তাঁকে ডোবাতে, তাঁর জীবনটাকে বিষময় করে তুলতে, বাইরের শত্রুর আর দরকার নেই। তাঁর নিজের মাঝে ধারণ করা মেধা নামক শত্রুটিই যথেষ্ট। জিবাংলার অনুষ্ঠানটিতে তুমি তোমার মেধা ও প্রতিভার ঝলক দেখিয়েছো। অসম্ভব প্রতিশ্রুতিশীল একজন গায়ক তুমি। কথা-বার্তায় আরো সাবধানী হও, কিছু বলার আগে দশবার ভাবো। যত্রতত্র সাক্ষাতকার দিয়ে বেড়ানোর চেয়ে যেটা তোমার প্রধান কাজ সেই গানের পিছনেই শ্রম ও সময় দাও।

অসাবধানতাবশত একটি অনাকাঙ্ক্ষিত মন্তব্যের জন্য যারা তোমাকে ধুয়ে দিচ্ছে, মুণ্ডুপাত করছে, তোমার সকল যোগ্যতাকে তুরি মেরে উড়িয়ে দিয়ে সমালোচনার নামে তোমাকে নিয়ে উপহাস করছে, কুৎসা রটাচ্ছে তারা কখনোই তোমার সাফল্যকে ভালোভাবে গ্রহণ করেনি, মেনে নেয়নি, তোমার সাফল্যে তারা জ্বলেপুড়ে যাচ্ছে। গো এহেড মাই ডিয়ার, আমরা যারা তোমাকে এবং তোমার গানকে ভালোবাসি, পছন্দ করি, খ্যাতির চূড়ায় তোমাকে দেখার প্রত্যাশায় রইলাম। শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে বীরদর্পে এগিয়ে যাও। আমরা তোমার সাথে আছি।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)