চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

যে মিলনমেলায় ঘুচে গেল ‘দূরত্ব’

ম্যানচেস্টার থেকে: ‘ম্যাচের ছবি তোলা ও ভিডিও ধারণ নিষিদ্ধ। করলেই শাস্তি।’ আইসিসি মিডিয়া ম্যানেজার রাজশেখর রায়ের এই কথা শুনে হো-হো করে হেসে উঠলেন সবাই।

সাংবাদিকদের ক্রিকেট ম্যাচে কিসের আবার নিয়ম-কানুন! আসলে মজা করে ভড়কে দিতে চেয়েছিলেন রাজ। চেষ্টা ব্যর্থ হলেও এই ভারতীয়র দুষ্টুমিতে যেন বেরিয়ে এলো অব্যক্ত আপ্তবাক্য। বিশ্বকাপ ম্যাচ ডে-তে সাংবাদিকদের কতটা নিয়মের ঘেরাটোপে রাখা হচ্ছে সেটি ভালো করেই জানা তার।

আইসিসির মিডিয়া ক্রিকেটে রাজ ছিলেন আম্পায়ারের ভূমিকায়। তার সহকর্মী ইমাদ আহমেদ খেলেছেন মাঠে। বাকি দুই মিডিয়া ম্যানেজার ম্যারি ও নাইলি ম্যাচের দর্শক। ডাগআউটে সাংবাদিকদের সঙ্গে গল্প-আড্ডায় মেতেছিলেন তারা। অথচ বিশ্বকাপের ম্যাচের দিন তারাই কখনও কখনও হয়ে ওঠেন সাংবাদিকদের যম! স্টেডিয়াম কম্পাউন্ডে কারও ছবি তুললেই দিয়ে দেন ডিমেরিট পয়েন্ট।

সাউথ ওয়েস্ট ম্যানচেস্টার ক্লাব মাঠে রোববারের দিনটি ছিল একদমই অন্যরকম। ধরাবাঁধা নিয়মের বাইরে ক্রিকেট উৎসবে মেতে ওঠার আনন্দঘন একটি দিন। বিভিন্ন দেশের ৩৩ জন সাংবাদিক পেশাদার কাজের বাইরে নিজেদের মতো হেসেখেলে কাটিয়েছেন মাঠে। বিশ্বকাপে টানা কাজ করার ক্লান্তি কাটাতে এরচেয়ে ভালো আর কী হতে পারে!

এত বড় মাঠ!
ম্যানচেস্টার ক্রিকেট ক্লাবের মাঠ যেন স্টেডিয়ামকেও হার মানায়। বাইরে থেকে কিছুই বোঝার উপায় নেই। শহরের এলিসমেরি রোডে আবাসিক এলাকার মধ্যে ছোট্ট একটা গেট। আরেকটু সামনে দোতলা ভবন। সেটি পেরিয়ে মাঠে ঢুকতেই চক্ষু চড়কগাছ! সীমানা দড়ি মাঠের একদম শেষ প্রান্তে। বেশিরভাগ জায়গা আন্তর্জাতিক ম্যাচের বাউন্ডারির চেয়ে বড়।

গ্রিন উইকেট ও কন্ডিশন
উইকেটে ঘাস থাকলে সাধারণত পেস বোলিং ভালো হয়। কিন্তু মিডিয়া ক্রিকেটে ভালো করেছেন স্পিনাররা। ছোট রানআপে যারা বল করেছেন, তারাও সফল হয়েছেন। তবে যারা গতিকে অস্ত্র বানাতে চেয়েছেন তাদের খেতে হয়েছে বেধড়ক পিটুনি।

কেমন খেললেন বাংলাদেশি সাংবাদিকরা
মিডিয়া ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিল তিনটি দল। যেখানে ইংল্যান্ডের সাংবাদিকরা খেলেছেন একটি দলের হয়ে। বাকি ৯টি দেশের সাংবাদিকদের নিয়ে করা হয় আরও দুটি দল। অবশিষ্ট বিশ্ব একাদশ-১ ও অবশিষ্ট বিশ্ব একাদশ-২ নামে। ম্যাচের দৈর্ঘ্য দশ ওভার হলেও প্রতিটি দল দুটি করে ম্যাচ পাওয়ায় সবাই কমবেশি সুযোগ পেয়েছেন প্রতিভা মেলে ধরার! বাংলাদেশের চার সাংবাদিক ক্রিকইনফোর বাংলাদেশ প্রতিনিধি মোহাম্মদ ইসাম, চ্যানেল আই অনলাইনের সাজ্জাদ খান, যমুনা টিভির সালাউদ্দিন সুমন ও বিবিসি বাংলার ফয়সাল তিতুমীর। সাজ্জাদ ও ফয়সাল রীতিমতো ঝড় তুলেছিলেন ব্যাটে। বোলিংয়ে মন্দ করেননি ইসাম ও সুমন।

বিস্ময়কর ‘টাই’
অবশিষ্ট বিশ্ব একাদশের দুটি দলের মাঝে ম্যাচটা হয়েছে নাটকীয়। বিশ্ব একাদশ-২ এর ৩ ওভারে দরকার ৩২ রান। সাজ্জাদের ব্যাটিং তাণ্ডবে পরের দুই ওভারে আসে ২৮ রান। শেষ ৬ বলে ৪ রানের সহজ সমীকরণ অবশ্য মেলানো যায়নি। শেষ ওভারে স্ট্রাইক প্রান্তে ছিলেন আইসিসির মিডিয়া ম্যানেজার ইমাদ। চেয়েছিলেন ম্যাচটা আরেকটু জমাতে! প্রথম দুই বল ডট করে তৃতীয় বলে আউট! শেষ ৩ বলে আসে ৩ রান। সময় স্বল্পতায় সুপার ওভারে গড়ায়নি ম্যাচের ভাগ্য। করতে হয়েছে পয়েন্ট ভাগাভাগি।

বিশাল ছক্কায় হারাল বল
প্রথম ম্যাচে স্ট্রেইট ব্যাটে বিশাল দুই ছক্কায় মেরে প্রশংসা কুড়ানো সাজ্জাদ শেষ ম্যাচেও জ্বলে ওঠেন ব্যাট হাতে। এক ইংলিশ স্পিনারকে প্রথম দুই বলেই চার মেরে শুরু করা বিশ্ব একাদশের (২) এই ব্যাটসম্যান পড়ন্ত বিকেলে সোজা ব্যাট ছয় মেরে বলই হারিয়ে ফেলেন।

ট্রফি ইংলিশ সাংবাদিকদের
তিন দলের আসরে অপর দুই প্রতিপক্ষকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ইংল্যান্ডের সাংবাদিকদের নিয়ে গড়া দলটি। তবে মাঠের খেলায় খুব বেশি ব্যবধান গড়তে পেরেছে তারা এমনটি নয়। লড়াই হয়েছে হাড্ডাহাড্ডি।

স্কোরকার্ড উধাও
কাগজে-কলমে লেখা হয়েছে ম্যাচের স্কোর। দিনশেষে সেটি উধাও। আইসিসির মিডিয়া ম্যানেজার রাজশেখর একে ওকে জিজ্ঞাসা করতে করতে নেমে এলো সন্ধ্যা। দুপুরে প্রথম ম্যাচ যখন মাঠে গড়ায় তখনও বোর্ডে তোলা হচ্ছিল রান, ওভার, উইকেট। বিকেল গড়াতেই সবার মাঝেই নেমে আসে উদাসীন ভাব। খেলা ছাপিয়ে গল্প-আড্ডাই হয়ে ওঠে গুরুত্বপূর্ণ। আয়োজনটাও তো এজন্যই!