ফতুল্লায় একজন পেস বোলার নিয়ে টেস্ট খেলতে নেমেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসে এই নিয়ে দ্বিতীয়বার এমন ঘটনা। ফতুল্লার আগে গত বছর চট্টগ্রামে শ্রীলংকার বিপক্ষেও এক পেসার নিয়ে টেস্ট খেলার সাহস দেখিয়েছিলো টিম-টাইগার্স। সেই একমাত্র পেসার ছিলেন আল-আমিন হোসেন। যে আল আমিনকে নিয়ে তখন এতোটাই ভরসা তৈরি হয়েছিলো সেই আল-আমিন এখন বাংলাদেশ দলের ২৩ জনের মধ্যেও নেই।
বিশ্বকাপ থেকে চলে আসতে বাধ্য হওয়ার পর কি অজানা কারণে বাংলাদেশ স্কোয়াডের বাইরে আছেন, তিনি নিজেও জানেন না। মিরপুরে বিসিবির ক্রিকেট একাডেমিতে তিনি কথা বলেছেন চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে।
চ্যানেল আই অনলাইন: আল-আমিন, বাংলাদেশ-ভারত টেস্ট লড়াই ফতুল্লায়, অথচ আপনি মিরপুরের একাডেমিতে। কেমন করে বদলে গেলো সবকিছু?
আল-আমিন: (হাসি) আসলে লুকানোর কিছু নেই, এ বিষয়গুলো ভাবলে মন খারাপ হয়ই। বাদ পড়ার আগে টানা দেড় বছর আমি সব ফরম্যাটেই বাংলাদেশ দলের অংশ ছিলাম, এখন নেই; তাই খারাপ লাগে, তবে কিছু করারও নেই।
চ্যানেল আই অনলাইন: কেন নেই আপনি?
আল-আমিন: (দীর্ঘশ্বাস) জানি না, শুধু এটা জানি আমার নাকি পারফরম্যান্স খারাপ। তাই চেষ্টা করছি পারফর্ম করার।
চ্যানেল আই অনলাইন: কোথায় চেষ্টা করছেন?
আল-আমিন: এইতো ঘরোয়া ক্রিকেটের ম্যাচগুলো, একাডেমিতে, জিমে।
চ্যানেল আই অনলাইন: আপনি তো টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পক্ষে হাইয়েস্ট উইকেট টেকার ছিলেন? তাহলে পারফর্ম না করার কথা কিভাবে আসছে?
আল-আমিন: হ্যাঁ, সাত ম্যাচে আমার ১০টা উইকেট ছিলো টি-টুয়েন্টি ওয়ার্ল্ডকাপে। ওয়ানডেতেও ১৭টা মেরেছিলাম গত বছর। সবচেয়ে বড় কথা আমি টানা খেলেছি বাংলাদেশের হয়ে। একজন পেস বোলার খেলালেও আমাকেই নেওয়া হতো। হয়তো ক্যাপ্টেন ভরসা করতেন। যাই হোক যারা খেলছেন তারাও ভালো করছেন। তবে আমি চেষ্টা করে যাবো ফিরে আসার জন্য।
চ্যানেল আই অনলাইন: আপনার কি সবসময়ই মন খারাপ থাকে? বডি ল্যাঙ্গুয়েজ কেমন যেনো পরিবর্তিত লাগছে, কোন বিষয় নিয়ে চিন্তিত?
আল-আমিন: (মলিন হাসি) এটা আমাকে আরও কয়েকজন বলেছেন। হ্যাঁ, আমার চলাফেরায় আগের মতো হাসি খুশি ভাবটা নেই, এটা আমিও বুঝতে পারি। আমার কাছের মানুষজন বলেন। মন থেকে আনন্দ পাচ্ছি না হয়তো। আমি সব সময় মাঠে অনেক মজা করি। চিন্তা আসলে একটাই, কবে আবার দলে ফিরে আসবো।
চ্যানেল আই অনলাইন: কনফিডেন্স লেভেল কি অবস্থায় আছে?
আল-আমিন: ভালো অবস্থায় নেই। দল থেকে হঠাৎ বাদ পড়লে এটা ডাউন থাকাটাই স্বাভাবিক। তবে আমি আমার সেরা চেষ্টা করে যাচ্ছি, দেখা যাক কি হয়।
চ্যানেল আই অনলাইন: আপনার পরিবার থেকে নিশ্চয়ই সমর্থন পাচ্ছেন।
আল-আমিন: আমার ক্রিকেট খেলা না খেলা নিয়ে আমার পরিবারের কোন মাথা ব্যাথা নেই। এটা কখনও ছিলোও না। ক্রিকেট নিয়ে কারও তেমন আগ্রহ নেই। তবে সবাই চায় আমি বাংলাদেশের প্রয়োজনে কাজ করি। আর সেটা করে গেলেই সবাই খুশি।
চ্যানেল আই অনলাইন: তাহলে বিশ্বকাপ থেকে যখন আপনি ফিরে আসলেন, তখন আপনার পরিবারের কেউ মন খারাপ করেন নি?
আল-আমিন: না, সবাই বলেছে এবার হয়নি পরের বার হবে।
চ্যানেল আই অনলাইন: আচ্ছা কেন আপনাকে পাঠানো হলো, অনেক মানুষ আমাদের কাছে ভেতরের ঘটনাটা জানতে চান?
আল-আমিন: এইতো, সেদিন আমি রাতে ফিরতে এক ঘন্টা দেরি করে ফেলেছিলাম, এটাই কারণ। আমাকে বলা হলো আমি টিমের নিয়ম ভেঙ্গেছি এবং এটা বিশ্বকাপের মতো বড় টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ দলের নিয়মের বাইরে। এছাড়া আর যতো কথা বাতাসে উড়ে এর সব কিছুই মিথ্যা। বিশ্বাস করুন আমাকে, লোকের কাছে আমি অন্তত তিনটা মিথ্যা শুনেছি। এক নম্বর- যেটা শোনা যায় আমি ক্যাপ্টেনের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছি, দুই ম্যানেজারের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছি এবং তিন, আমি জুয়াড়িদের সঙ্গে গোপনে সম্পর্ক গড়ে তুলেছি। এসবই আসলে ডাহা মিথ্যা কথা। আজ থেকে ৫ বছর পরও যদি কিছু প্রমাণ হয় আমি যেকোন শাস্তি মেনে নেবো।
চ্যানেল আই অনলাইন: কিন্তু আপনিইতো তখন বলেছেন ভারতের কোন এক এয়ারপোর্টে কার কার সঙ্গে আপনার যেনো কি কথাবার্তা হয়েছে?
আল-আমিন: (হাসি) এই মূহূর্তে আপনার সঙ্গেও তো আমার কথা হচ্ছে, তো আমি কি সেটা অস্বীকার করবো? আর রাস্তায় চলতে পথে এমন অসংখ্য মানুষের সঙ্গে কথা হয়। আমাকে কেউ কিছু জিগেগশ করেলে আমি শুধু তার প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি। তার সঙ্গে আমার চেহারার পরিচয় আছে ব্যক্তিগত যোগাযোগ নেই।
চ্যানেল আই অনলাইন: তাহলে কি আপনাকে রাতে দেরি করে হোটেলে ফেরার শাস্তি হিসেবেই দলের বাইরে রাখা হয়েছে?
আল-আমিন: আমি জানি না, আর কিছু বলতে চাইও না। বাদ দেন এসব কথা। আমি আর কিছু বলবো না, খালি জাইনেন আমি ‘বাটে’ আছি!