মিয়ানমারে জাতিগত নিধনের ঘটনায় জাতিসংঘের তদন্তে দেশটির ৬ সেনা কর্মকর্তার নাম এসেছে। জাতিসংঘ জেনেছে দেশটির বেশিরভাগ জনগণের কাছে ইন্টারনেট মানেই ফেসবুক। তাই যারা জাতিগত ঘৃণা ছড়াতে চেয়েছে তারা ফেসবুককেই বেছে নিয়েছে।
রোহিঙ্গাদের প্রতি ছড়ানো অনলাইন ঘৃণার দিকে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিভিন্ন গণমাধ্যম প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওইসব প্রতিবেদনে জানানো হয়, দেশটির ফেসবুক ব্যবহারকারীদের অনেকেই রোহিঙ্গাদের জাতিগত পরিচয়কে অস্বীকার করে বাঙালি বলে এবং তাদের কুকুর, কীট, ধর্ষক হিসেবে দেখে। এমনকি কেউ কেউ এদেরকে শুকরের খাদ্য হিসেবে ছুড়ে দেয়ার আহ্বানও জানায়! একটি পেজে তো রীতিমতো মুসলিমদের গণহত্যা করারও আহ্বান জানানো হয়!
শুধু তাই নয় জাতিসংঘের তদন্তের খবর প্রকাশ করা বিভিন্ন প্রতিবেদনের অনলাইন সংস্করণের নীচে ফেসবুকে নানা ঘৃণাপূর্ণ মন্তব্য ছুড়ে দেয় মিয়ানমারের অনেকেই। এরকম ঘৃণা ছড়াচ্ছেন খোদ মিয়ানমারের সেনা প্রধান মিন অং হ্লাই।
এবার দেখা যাক মিয়ানমারের সেনা প্রধানের অনলাইন কর্মকাণ্ডের দিকে। ফেসবুকে তার দু’টি অ্যাকাউন্ট। বার্তা সংস্থা এএফপি জানাচ্ছে, তার একটি অ্যাকাউন্টে আছে ১৩ লাখ ফলোয়ার, অন্যটিতে আছে ২৮ লাখ।
এক ফেসবুক পোস্টে মিয়ানমারের সেনা প্রধানও রোহিঙ্গাদের জাতি হিসেবে অস্বীকার করে তাদের ‘বাঙালি’ বলে অভিহিত করেন। এখানে তিনি বলেন,‘রোহিঙ্গা শব্দটি মনগড়া’।
এই বার্মিজ জেনারেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তের পর গণহত্যার দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে তার বিচার দাবি করেছে জাতিসংঘ। মিয়ানমারে ফেসবুক ‘জন্তুতে পরিণত হয়েছে’ বলেও মন্তব্য করেছিলো জাতিসংঘ।
জাতিসংঘের এই অবস্থানের পর নড়েচড়ে বসতে বাধ্য হয়েছে এতোদিন রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞের অনলাইন হাতিয়ার হওয়া ফেসবুক। এখন ফেসবুকও বলছে সেনা প্রধান নিজের ফেসবুক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে জাতিগত নিধনের আগুনে ঘি ঢেলেছেন।
এসব প্রেক্ষাপট উল্লেখ করে ফেসবুক মিয়ানমারের সেনাপ্রধানের ফেসবুক অ্যাকাউন্টসহ ১৮টি অ্যাকাউন্ট এবং ৫২টি পেজ বন্ধ করে দিয়েছে।
কিন্তু ফেসবুকের এমন পদক্ষেপ মানতে পারছে না মিয়ানমার। মিয়ানমার টাইমসকে দেশটির প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র জ্যাও তে বলেন,‘সরকারের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই ফেসবুক এসব অ্যাকাউন্ট বন্ধ করেছে’।
তিনি জানান, তারা এসব অ্যাকাউন্ট পুনরুদ্ধারে ফেসবুকের সঙ্গে আলোচনা করছেন।