প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে বাংলাদেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্পে ভারত কমপক্ষে সাড়ে ৩শ’ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ দিতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে অর্থনীতিভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ।
বাংলাদেশ সরকারের নথিপত্রের সূত্র উল্লেখ করে ব্লুমবার্গ জানিয়েছে, ঋণের এ অর্থ পারমাণবিক ও তরল প্রাকৃতিক গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র থেকে শুরু করে বন্দর ও রেলওয়ে নির্মাণ এবং বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা বিষয়ক বিভিন্ন প্রকল্পে ব্যবহৃত হবে।
চীন ও ভারতের মাঝে দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে প্রভাব বিস্তারের লড়াইয়ের অংশ হিসেবে এ ঋণ দেয়া হতে পারে বলে ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
এছাড়া ঢাকা-নয়াদিল্লির মাঝে একটি প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বিষয়ক চুক্তি এবং জাহাজ নির্মাণ ও সীমান্ত বিষয়ক বেশ কিছু সমঝোতা স্মারক প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন ভারত সফরে সই হতে যাচ্ছে বলে বাংলাদেশের আরেকটি সরকারি দলিলের সূত্রে ব্লুমবার্গ জানিয়েছে।
৭ এপ্রিলের সফরটি গত সাত বছরে শেখ হাসিনার প্রথম ভারত সফর। সরকারের হিসেব অনুযায়ী, বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি গত অর্থবছরের ৭.১ শতাংশ থেকে বেড়ে চলতি অর্থবছরে ৭.২ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা মশিউর রহমান বলেছেন, বাংলাদেশকে নতুন ক্রেডিটলাইনের অধীনে ভারত সর্বোচ্চ ৫শ’ কোটি ডলার দিতে পারে, যা একটি নতুন অগ্রগতি। একে অনেক দিক থেকেই দেখা যায়।
তবে অর্থনৈতিক পারস্পরিক সহযোগিতা এখানে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যৌথ বিনিয়োগ এবং যৌথ বাণিজ্যিক উদ্যোগ পারস্পরিক সহযোগিতার নতুন দিক খুলে দেবে বলে মনে করেন তিনি।
অবশ্য ব্লুমবার্গের পক্ষ থেকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গোপাল বাগলে ও তেল মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা শুধু কিছু চুক্তি সই হতে পারে বলে জানিয়েছেন, তবে ক্রেডিটলাইন বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি তারা।
ভারত অনেকদিন ধরেই বাংলাদেশ এবং শ্রীলঙ্কার মতো প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার চেষ্টা করে আসছে। অন্যদিকে চীনও দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোকে বিভিন্ন সময় বন্দর ও অবকাঠামো প্রকল্পে মোটা অঙ্কের অর্থ ঋণ দিয়ে বা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছে। তবে চীনের এ ধরণের কর্মকাণ্ডকে বরাবরই সন্দেহের চোখে দেখে ভারত।
২০১৫ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফরে এসে ২শ’ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ প্রদানের ঘোষণা দেন। এর আগে বাংলাদেশের সড়ক, রেল ও নৌপথের উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য দেশটির পক্ষ থেকে আরো ৮০ কোটি ডলার ক্রেডিটলাইনের ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। সেই হিসেবে তৃতীয়বারের মতো ভারতের পক্ষ থেকে মোটা অংকের এই ক্রেডিটলাইনের ঘোষণা আসলো।
ভারত এভাবে তার চিরশত্রু পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাকি প্রতিবেশীদের এক করার চেষ্টা করলেও চীনের অর্থনৈতিক শক্তির কাছে তা এখনো অনেক কম।
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানে ইতোমধ্যে বিনিয়োগকৃত মোটা অঙ্কের অর্থের পর গত অক্টোবরে বাংলাদেশের অবকাঠামো প্রকল্পগুলোতে আরও ২ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের স্বল্প-ব্যয়ী ঋণ দেয়ার ঘোষণা দেন।
এছাড়া আরও ১ হাজার ৩৬০ কোটি ডলারের যৌথ উদ্যোগে বিনিয়োগের চুক্তিতে সই করেন জিনপিং।