মহাকাশ যাত্রা শুরুর সব প্রস্তুতির পরও শেষমূহুর্তে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ না করার কারণ হিসেবে লঞ্চিংয়ের চূড়ান্ত মিনিট নিয়ন্ত্রণ করা কম্পিউটার কন্ট্রোলে সুক্ষ্ম ত্রুটি ধরা পড়ার কথা জানিয়েছে স্পেসএক্স। আজ (১১ মে) বাংলাদেশ সময় দিবাগত রাত ২টার কিছুটা পরে নতুন সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।
টি মাইনাস ওয়ান বা একেবারে শেষ মিনিটে লঞ্চিং গ্রাউন্ডের নির্ধারিত ব্যবস্থা ‘অটো অ্যাবোর্ট’ বা স্বয়ংক্রিয় স্থগিতের বার্তা দেয়ায় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ বহনকারী ফ্যালকন রকেট নির্ধারিত সময়ে উৎক্ষেপণ করা হয়নি।
স্পেসএক্স জানিয়েছে, স্যাটেলাইট এবং রকেট দু’টো যন্ত্রাংশই পুরোপুরি ঠিক আছে।
এছাড়া উৎক্ষেপণ পিছিয়ে যাওয়ার কারণ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।
তিনি তার ফেসবুক পেজে দেওয়া স্ট্যাটাসে জানিয়েছেন, উৎক্ষেপণের একেবারে চূড়ান্ত মূহুর্তগুলো সম্পূর্ণ কম্পিউটারের নিয়ন্ত্রণে থাকে।
‘‘কম্পিউটার নির্ধারিত মানদণ্ডের একটু এদিক-সেদিক হলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে উৎক্ষেপণ স্থগিত করে দেয়। যেমন আজকে উৎক্ষেপণের মাত্র ৪২ সেকেন্ড আগে স্থগিত করে দিয়েছে। স্পেসএক্স সবকিছু খতিয়ে দেখবে এবং আগামীকাল আবার উৎক্ষেপণের চেষ্টা করবে।
এই ঘটনা রকেট উৎক্ষেপণের জন্য অস্বাভাবিক কিছু নয়, কারণ এখানে ঝুঁকি নেওয়া যায় না।’’
মহাকাশযানের উৎক্ষেপণ পিছিয়ে যাওয়া নতুন কিংবা অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। রকেট উৎক্ষেপণে অভিজ্ঞ সংস্থা নাসা’র অভিজ্ঞতা বলছে, দূর থেকে যতো সহজ মনে হয়, রকেট উৎক্ষেপণ ততো সহজ বিষয় নয়।
সাধারণ ধারণায় রকেটকে শক্তিশালী আর নিরেট মনে হয়। এমনকি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল পার হওয়ার সময় তীব্র তাপের মোকাবেলা করে রকেটগুলো। কিন্তু গোটা প্রক্রিয়া এবং রকেট যানগুলো এতো সুক্ষ্ম যে চুল পরিমাণ ঝুঁকি নেয়ার সুযোগ নেই।
ইন্টারনেট ব্যবহার, সামাজিক মাধ্যমে বাংলাদেশকে আপাতত ডিজিটাল বলা গেলেও মহাকাশে স্যাটেলাইট পাঠানোর অভিজ্ঞতা সরকার এবং দেশের জনগণের জন্য একেবারেই নতুন। তাই বারবার উৎক্ষেপণের তারিখ পেছানো নিয়ে জল্পনা-কল্পনার অভাব হয় না। সমালোচনা এবং জনমনে সংশয় বাড়তে থাকে।
স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণে সবচেয়ে বড় ঝুঁকিটি হচ্ছে প্রতিকূল আবহাওয়া। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট নিয়ে ফ্যালকনের ৪ মে উড়াল দেয়ার পথেও সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা ছিলো যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার আবহাওয়া।
প্রতিকূল পরিবেশের কারণে স্পেসশাটলের মতো জটিল ও সুক্ষ্ম সার্কিটের মহাকাশযানের উৎক্ষেপণ পিছিয়ে যাওয়াকে স্বাভাবিক বলেই মনে করে নাসা।
বিজ্ঞানভিত্তিক প্রতিবেদনের অনলাইন পোর্টাল ‘হাউস্টাফওয়ার্কস’-এর প্রতিবেদনে নাসার রকেট উৎক্ষেপণ বিলম্বের কারণগুলো প্রকাশিত হয়েছে।
প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, রকেট বিশেষ করে মনুষ্যবাহী স্পেসশাটল উৎক্ষেপণের আগে চুল পরিমাণ ঝুঁকি থাকলে নাসা উৎক্ষেপণ পিছিয়ে দেয়। এরপর সঠিক সময়ের অপেক্ষা করা হয়। সামান্য ত্রুটি-বিচ্যুতির কারণে ১৯৮৬ সালে বিধ্বস্ত হয় চ্যালেঞ্জার রকেট এবং ২০০৩ সালে বিধ্বস্ত হয় কলম্বিয়া।