সারা বিশ্বেই এখন সোশাল মিডিয়ার দাপট। বাংলাদেশও নয় তার ব্যতিক্রম। বিশেষ করে এই অঞ্চলে রয়েছে ‘ফেসবুক’-এর বহুল জনপ্রিয়তা। এই মাধ্যমটিতে বেশ সরব থাকেন দেশের সব অঙ্গনের তারকা সেলিব্রেটিরা! ব্যক্তিগত অনুভূতি জানানোর পাশাপাশি কাজের খবরা খবরসহ ভক্ত অনুরাগীদের সাথেও তারাদের যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুক!
কিন্তু এই মিডিয়ামটি এখন আর নিরাপদ নেই। প্রায়শই হ্যাকিংয়ের শিকার হয়ে খবর হতে দেখা যাচ্ছে দেশের তারকা অভিনেতা, অভিনেত্রী ও শিল্পীদের।
ভার্চুয়ালে একটি দুষ্টু চক্র তারকাদের নিজস্ব ফেসবুক হ্যাক করে ব্যক্তিগত তথ্য কব্জা করে ব্ল্যাকমেইলিংয়ে তৎপর থাকে, এমন খবর কারো অজানা নয়। এরআগে বহুবার বহু তারকা এমন হ্যাকিংয়ের শিকার হয়েছেন। হ্যাক হওয়ার পাশাপাশি সম্প্রতি নতুন করে যুক্ত হয়েছে আইডি ‘গায়েব’ হয়ে যাওয়ার বিষয়টিও!
ভুক্তভোগীদের তালিকায় নতুন করে যুক্ত হলেন ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেতা অপূর্ব, শিল্পী ইমরান, মডেল ও অভিনেত্রী টয়া, শবনম ফারিয়া ও চিত্রনায়িকা পূজা চেরী। সোমবার রাত থেকে তারা প্রত্যেকেই আইডির নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছেন। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তাদের প্রত্যেকের ফেসবুক আইডি ‘ডিজেবল’ দেখাচ্ছে।
এ বিষয়ে অভিনেতা অপূর্ব জানান, সোমবার মাঝরাত থেকে তিনি আইডিতে ঢুকতে পারছেন না। কারা যেন রিপোর্ট করে ডিজেবল করে দিয়েছে। বিষয়টা নিয়ে তিনি বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন। বর্তমানে আইডি ফেরত পাওয়ার চেষ্টা করছেন।
গায়ক ইমরানও তার আইডির নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছেন। চ্যানেল আই অনলাইনকে তিনি বলেন, ভোর চারটার পর থেকে আইডিতে লগ ইন করতে পারছিনা। আইডি ফেরানোর চেষ্টা চালাচ্ছি। তিনি বলেন, যারা এই কাজগুলো করছে তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেওয়া উচিত। এদের কারণে বিপাকে পড়তে হচ্ছে।
চিত্রনায়িকা পূজা চেরী বলেন, মঙ্গলবার দুপুর ১২ টায় আইডি হারিয়েছি। হঠাৎ করে আর আমার আইডি পাচ্ছিনা। একদম ডিজেবল হয়ে গেছে। এখন চেষ্টা করছি ফেরত আনার। আগে এমন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হইনি।
শবনম ফারিয়ার নিজস্ব ফেসবুক আইডিটিও খুঁজে না পাওয়ায় বিব্রত তিনিও। তবে আইডি উদ্ধারে চেষ্টা চালাচ্ছেন এই অভিনেত্রী।
এদিকে, দেশের শীর্ষ তারকা শাকিব খানের অফিশিয়াল ফ্যানস ক্লাবটিও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না দুপুর ১ টার পর থেকে। পুরোপুরি ডিজেবল দেখাচ্ছে। ওই গ্রুপে ৫ লাখের বেশি সদস্য ছিল। গ্রুপটি নিয়ন্ত্রণ করতেন এই নায়কের কয়েকজন ভক্ত। তারা জানান, গ্রুপের সঙ্গে তাদের এডমিন প্যানেলের একজনের আইডিও ডিজেবল হয়ে গেছে। কে বা কারা এই কাজটি করেছেন জানেন না!
একের পর এক আইডি ডিজেবল এবং বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই এর ভুক্তভোগী হচ্ছেন তারকা সেলেব্রেটিরা। তাদের অনেকেই এ বিষয়ে সাইবার সিকিউরিটি এন্ড ক্রাইম বিভাগকে জানিয়েছেন বলে চ্যানেল আই অনলাইনকে জানান ঢাকা মহানগর সাইবার সিকিউরিটি এন্ড ক্রাইম বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. আলিমুজ্জামান।
বিষয়টি নিয়ে সাইবার সিকিউরিটি এন্ড ক্রাইম বিভাগ সজাগ আছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সাইবার সিকিউরিটি ও ক্রাইম ইউনিটের অ্যাডিশনাল ডেপুটি কমিশনার নাজমুল ইসলাম।
চ্যানেল আই অনলাইনকে তিনি বলেন, আমাদের কাছে গত দুই-তিন মাসে বেশকিছু সেলিব্রেটি এসেছেন। বেশীরভাগ সেলিব্রিটির অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়ে গেছে কিংবা ডিজেবল হয়ে গেছে। এরমধ্যে বেশকিছু ফেসবুক স্বপ্রণোদিত হয়ে বন্ধ করে দিচ্ছে আবার কিছু খারাপ চক্র আছে যারা সেলিব্রেটিদের আইডি হ্যাক করে নানাভাবে ব্ল্যাকমেইলিং করে। তবে ‘ডিজেবল’ হয়ে যাওয়ার বিষয়টি বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে ফেসবুকের নিজস্ব পলিসির কারণে হয়ে থাকে। এগুলো নিয়ে আমাদের কাছে অনেকে এসেছেন, আমরা আমাদের সাধ্যমত চেষ্টা করেছি এবং এখনো করছি। হ্যাকিং সংক্রান্ত বিষয়গুলো আমরা আমাদের সর্বোচ্চ ক্ষমতা দিয়ে সমাধান করার চেষ্টা করি।
তিনি আরো বলেন, ফেসবুক হ্যাকড হলে ল এন্ড ফোর্স-এর ব্যাপার থাকে, আমাদের কিছু করণীয় থাকে। কিন্তু ডিজেবল হয়ে যাওয়াটা বেশীর ক্ষেত্রেই ফেসবুক-ই করে। তারা যদি মনে করে তার কমিউনিটির সাথে কোন ভায়োলেশন হচ্ছে তখন এমন সিদ্ধান্ত নেয়। এখানে আমাদের কিছু বলার নেই। ফেসবুক যদি এই কাজটি করে তাহলে সে কখনোই বলবে না যে সে ভুল করেছে। অবশ্যই কোনো না কোনোভাবে কমিউনিটি গাইডলাইন-এর শর্ত ভঙ্গ হলেই তারা এমন সিদ্ধান্ত নেয়। এটা ফেসবুক তার নিজস্ব ম্যাকানিজম এর মাধ্যমে কন্ট্রোল করে, সেখানে আমাদের কিছু করার নেই।
ফেসবুক হ্যাকড বা আইডি ডিজেবল সংক্রান্ত বিষয়ে কথা বলেন চ্যানেল আই আই অনলাইনের ‘ডিজিটাল অ্যান্ড মাল্টিমিডিয়া’ এডিটর তৌফিক আহমেদ। তিনি বলেন, আইডিতে তিনভাবে সমস্যা হয়। কেউ রিপোর্ট করলে, তথ্যে গড়মিল (ফেসবুক খোলার সময় নামের বানান, জন্ম তারিখে অমিল) আরেকটি হচ্ছে ফেসবুকের কিছু কমিউনিটি গাইডলাইন আছে, সেগুলো ভঙ্গ করলে।
তিনি মনে করেন, এগুলো যদি স্ট্যান্ডার্ড রাখা না যায়, তবে আইডি হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই ফেসবুক ব্যবহার খুব সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। রাষ্ট্রদ্রোহী কিংবা সন্ত্রাসবাদ, বিভ্রান্ত ছড়ায় এমন কিছু শেয়ার করাও উচিত নয় বলে মনে করেন এই ডিজিটাল ও মাল্টিমিডিয়া বিশেষজ্ঞ।