মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসির আদেশ বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। এর আগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ১ তাকে মানবতাবিরোধী চারটি অভিযোগে ফাঁসির আদেশ দেন।
২০১০ সালের ১৬ ডিসেম্বর গাড়ি পোড়ানো মামলায় গ্রেফতার হন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। এর পর ২০১১ সালের ১৭ জানুয়ারি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। ওই বছরের ১৪ নভেম্বর তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। ২০১২ সালের ৪ এপ্রিল আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ তার বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, ধর্মান্তরে বাধ্য করার মতো মানবতাবিরোধী ২৩টি অভিযোগ গঠন করেন। এর মধ্য দিয়ে তার বিচারকাজ শুরু হয়।
এরপর ট্রাইব্যুনালে ২৩টি অভিযোগের মধ্যে ৯টি প্রমাণিত হয়। এর মধ্যে ৪টি অভিযোগে তাকে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়। অভিযোগগুলো হলো-
১৯৭১ সালের ১৩ এপ্রিল সকাল সাড়ে ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে রাউজানের গহিরা এলাকায় কুন্ডেশ্বরী ঔষধালয়ের মালিক নূতন চন্দ্র সিংহের বাড়ি ঘিরে ফেলা হয়। প্রার্থণারত অবস্থা থেকে নূতন চন্দ্রকে সালাউদ্দিন কাদেরের উপস্থিতিতে টেনে বাইরে নিয়ে আসা হয়। এরপর সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর নির্দেশে পাকিস্তানী সেনারা নূতন চন্দ্রের ওপর গুলি চালানো হয়। পরে নূতন চন্দ্রের মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য তাকে গুলি করেন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। এ অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে ফাঁসির আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।
১৯৭১ সালের ১৩ এপ্রিল দুপুর ১টার দিকে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও তার সহযোগীরা পথ দেখিয়ে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীকে রাউজানের সুলতানপুর গ্রামের হিন্দুবসতিপূর্ণ বণিকপাড়ায় নিয়ে যায়। সেখানে হিন্দুদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালানো হলে নেপাল চন্দ্র ধর, মণীন্দ্র লাল ধর, উপেন্দ্র লাল ধর ও অনীল বরণ ধর নিহত হয়। এ অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ট্রাইব্যুনাল ফাঁসির আদেশ দেন।
১৯৭১ সালের ১৩ এপ্রিল বিকাল ৪টা থেকে ৫টার মধ্যে রাউজানের হিন্দু বসতি ঊনসত্তরপাড়া গ্রামে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যায় সালাউদ্দিন কাদের ও তার কয়েকজন সহযোগী। সভায় যোগ দেয়ার কথা বলে গ্রামের ক্ষিতিশ মহাজনের পুকুরপাড়ে নিয়ে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী তাদের ওপর ব্রাশফায়ার করে ৭০ জনকে হত্যা করা হয়। এদের মধ্যে চন্দ্র কুমার পাল, গোপাল মালী, সন্তোষ মালী, বলরাম মালীসহ ৫০ জনের পরিচয় জানা গেলেও বাকিদের পরিচয় পাওয়া যায়নি। এ অভিযোগে তাকে ফাঁসির আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।
১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল বেলা ১১টায় চট্টগ্রামের হাটহাজারী এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজাফফর তার পরিবারসহ রাউজান থেকে চট্টগ্রাম শহরে আসার পথে হাটহাজারীর তিন রাস্তার মোড় এলাকায় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর নেতৃত্বে ও সহযোগিতায় শেখ মুজাফফর ও তার ছেলে শেখ আলমগীরকে তাদের প্রাইভেট কার থেকে নামিয়ে হাটহাজারী বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপরে বিভিন্ন সময়ে তাদের মুক্তির জন্য সালাউদ্দিন কাদেরের বাবা ফজলুল কাদের চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা দু’জন কখনো ফিরে আসেননি। পরে তাদের দুজনকে হত্যা করা হয়। এ অভিযোগে সাকা চৌধুরীকে ফাঁসির আদেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল।