কোটা সংস্কার আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদকে বলেছেন, ‘যেহেতু তারা (সাধারণ শিক্ষার্থী) কোটা চায় না, তাই কোটা থাকবে না। আমার স্পষ্ট কথা কোটার দরকার নেই।
তিনি আরো বলেন, ‘কোটা থাকলেই আন্দোলন হবে, আজ এরা-কাল আরেকজন আসবে। এর থেকে আমি মনে করি কোটা পদ্ধতিই বাতিল করাটাই ভালো হবে।’
এসময় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রেখে সরকারি চাকরিতে সুযোগ রাখার কথাও জানান প্রধানমন্ত্রী।
বুধবার বিকালে জাতীয় সংসদের প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারীত প্রশ্নত্তোর পর্বে ঢাকা ১৩ আসনের সাংসদ জাহাঙ্গীর কবির নানক কোটা বিরোধী আন্দোলনের প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি এ বিষয় নিয়ে বিস্তারিত বলেন ।
সম্পূরক প্রশ্নে নানক বলেন: আমি আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, সাম্প্রতিক কোটা সংস্কার আন্দোলন বিষয়ে। এ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত সাধারণ শিক্ষার্থীদেরে একটি মহল নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারের উদ্দেশ্যে ব্যবহারের চেষ্টা করছে। এখনই এ বিষয়ে আশু পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, নারীসহ তরুণ শিক্ষার্থী এবং জেলা পর্যায়েও শিক্ষার্থীরা যেহেতু কোটা চায় না; তাই কোটা পদ্ধতি রাখার দরকার নেই।
এ সময় তিনি আরো বলেন, যদি কোটা রাখার দরকার হয়, তাহলে জনপ্রশাসন সচিবের নেতৃত্বে গঠিত পর্যালোচনা কমিটি এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন।
আন্দোলনকারীদের শ্রেণিকক্ষে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘লেখাপড়া বন্ধ করে রাস্তায় বসে থাকা। পড়ার টেবিল বাদ দিয়ে তারা রাস্তায় নেমে আসলো। ডিজিটাল বাংলাদেশ আমরা করেছিলাম। ফেসবুক-টুইটার ব্যবহার আমরাই শিখিয়েছিলাম। আর আমাদের বিপক্ষেই এখন এগুলোর অপব্যাবহার করা হচ্ছে।
‘আমরাও আন্দোলন করেছি। কিন্তু এমন তো আমরা কখনও দেখিনি! একজন উস্কানি দিলো-একজন আন্দোলনকারী মারা গেছে। আর সবাই রাস্তায় নেমে এলো। রাত একটার সময় পর্যন্ত, গেটের তালা ভেঙে মেয়েরা বেরিয়ে এসেছে। এমনটা কখনও দেখা যায়নি। যদি তাদের কিছু হতো, এর জবাব কে দিতো।’
এসময় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বাসভবনে হামলার সঙ্গে যারা জাড়িতদের খুঁজে বের করে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভিসির বাসভবনে হামলা হলো। আমি নিজে ভিসির সঙ্গে কথা বলেছি। সব দেখে মনে হয়েছে পাকিস্তানী হানাদাররা ৭১’এ যেভাবে আক্রমণ করেছে, ঠিক একই কায়দায় ভিসির বাসভবনে হামলা করা হয়েছে। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাই। যে শিক্ষার্থীরা তাদের ভিসির বাড়িতে হামলা করতে পারে, তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হতে পারে না।
দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে আন্দোলন করে আসছে কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। অহিংস এ আন্দোলন প্রথম রোববার (৮ এপ্রিল) সহিংস রূপ নেয়। কোটা সংস্কারের দাবিতে একদল শিক্ষার্থী রাজধানীর শাহবাগে অবস্থান নিলে, পুলিশ রাস্তা থেকে সরে যেতে তাদের অনুরোধ করে। কিন্তু আন্দোলনকারীদের দাবি ছিল সংস্কারের ব্যাপারের সরকারের স্পষ্ট বক্তব্য।
দুপুর ২টা থেকে রোড ব্লক কর্মসূচি শেষ পর্যন্ত সাড়ে ৪টার দিকে সংঘর্ষে রূপ নেয়। পুলিশ আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দিতে বল প্রয়োগ করলে সংঘর্ষের শুরু হয়। যা চলে মধ্যরাত পর্যন্ত।
ওইদিন দিবাগত রাত ২টার দিকে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় গিয়ে আন্দোলনকারীদের আশ্বস্ত করেন। এবং সবাইকে হলে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান।
সোমবার বিকালে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সচিবালয়ে আলোচনায় আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধিরা।
সেখান আলোচনার পর ১ মাসের জন্য আন্দোলন স্থগিতের কথা জানায় অান্দোলনকারীদের প্রতিনিধিরা। তবে সেই সিদ্ধান্ত না মেনে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয় সাধারণ আন্দোলনকারীরা।
মঙ্গলবার থেকে আবার নতুন করে আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকে তারা। আন্দোলনের তীব্রতায় এক পর্যায়ে সরকার প্রধান এ বিষয়ে চূড়ান্ত ঘোষণা দেন।