বিশ্বের ১২টি ভাষায় ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গানটি ১২ জন শিল্পীকে দিয়ে গাইয়ে আলোচনায় উঠে এসেছেন আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ-এআইইউব’র ছাত্র নাবিদ সালেহিন নিলয়।
বাংলা ছাড়াও হিন্দি, ইংরেজি, ফরাসি, মালয়, জার্মান, রুশ, আরবি, নেপালি, স্পেনীয়, চীনা এবং ইতালীয় ভাষায় এই গানটি গেয়েছেন ওই শিল্পীরা।
আলোচিত ওই শিল্পীদের গাওয়া গানটি ইউটিউবে প্রকাশের পর থেকেই ভাইরাল হয়ে ছড়িয়ে পড়ে। চ্যানেল আই অনলাইনের কাছে অন্যরকম এ গানটির নির্মাণের পেছনে গল্প তুলে ধরেন নাবিদ।
মূল এ গানটি কবিতা হিসেবে লিখেছিলেন আবদুল গাফফার চৌধুরী। সর্ব প্রথম তাতে সুরারোপ করেন আব্দুল লতিফ। এরপর বিশিষ্ট সুরকার আলতাফ মাহমুদ সুরের পরিবর্তন আনেন। বর্তমানে তার করা সুরেই গানটিই গাওয়া হয়।
বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন। সেই থেকে অর্জিত মাতৃভাষা বাংলা ভাষা এবং একুশে ফেব্রুয়ারি। এরপর তা পরিণত হয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে।
বিশেষ এ দিন বিশেষভাবে শ্রদ্ধা জানাতে এমন ব্যতিক্রমী পদক্ষেপ নেন এআইইউবি’র কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের ছাত্র নাবিদ সালেহিন। তারই নির্দেশনায় ১২টি ভাষায় ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গানটি গাওয়া হয়।
ভাষা দিবসেই চ্যানেল আই কার্যালয়ে কথা হয় নাবিদের সঙ্গে। তুলে ধরেন গানটি বাস্তবায়নের প্রেক্ষাপট।
তিনি বলেন, ‘আমার লক্ষ্য ছিলো বাংলা ভাষার গানকে দেশের বাইরে অন্যভাবে প্রকাশের পাশাপাশি পরিচিত করে তোলা। এর মাধ্যমে এ দেশের শিল্পীদের সঙ্গে অন্য দেশের শিল্পীদের যেন একটা বন্ধুত্বপূর্ণ বন্ধন তৈরি হয়। বর্তমানে বলতে গেলে শুধু ভারতের সঙ্গেই বাংলাদেশের শিল্পীদের এমন সম্পর্ক রয়েছে। এর বাইরে পৃথিবীর অন্য দেশগুলোর সঙ্গে তেমন একটা যোগাযোগ নেই বললেই চলে।’
‘গত বছরের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর থেকেই পরিকল্পনায় ছিলো বিষয়টি। আর গান নির্বাচনের জন্য অনেক চিন্তা-ভাবনার পর একুশে ফেব্রুয়ারি গান আর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকেই বেছে নিলাম। আর এর মাধ্যমে জাতির বিশেষ এ দিনে সারাবিশ্বেরই মাতৃভাষাকে শ্রদ্ধা জানতে পারবো।’
বাইরের শিল্পীদের সঙ্গে যোগাযোগ প্রসঙ্গে নাবিদ বলেন, ‘আমি যখন বাইরের শিল্পীদের আমার দেশের ভাষা আন্দোলনের কথা ইতিহাস ও পটভূমি তুলে ধরি এবং গানটা কি তাৎপর্য বহন করে সেটাও বুঝিয়ে বলি; তখন তারা আমার সঙ্গে এই কাজ করতে রাজি হয়।’
পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সেই বন্ধুর পথ পাড়ি দেওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমি যখন বাইরের শিল্পীদের সঙ্গে যোগাযোগ করি; তখন দেখা গেছে কেউ কেউ ইচ্ছা থাকলেও ইংরেজীতে কথা বলে না। তাদের নিজস্ব মাতৃভাষা ছাড়া বা ইংরেজীতে কথা বলতে পারে না। তখন আমি তাদের ভাষায় কথা বলেছি। এক্ষেত্রে আমার গুগল ট্রান্সলেটরের সাহায্যও নিতে হয়েছে।’
এছাড়াও গুগলের মাধ্যমে বাইরের শিল্পীদের বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করি। পরে তাদের সঙ্গে ই-মেইলে যোগাযোগ করি। আবার কারো ফেসবুক ফ্রেন্ড হই। প্রথমে আমার সঙ্গে তিনটি দেশের যোগাযোগ হয়, পরে আস্তে আস্তে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১২টিতে।’
গানটির প্রোডাকশন সম্পর্কে নাবিদ চ্যানেল আই অনলাইকে বলেন, আজব রেকর্ডস কোম্পানি থেকে গানটি করা হয়েছে। আমার নিজস্ব ব্যান্ড ভেনোমাস অনেক উৎসাহ জুগিয়েছে। আমরা মূলত এই কাজটি করেছি প্রজেক্ট ২১ নামে। আর সবচেয়ে মজার বিষয় হলো শিল্পীসহ মিউজিক, ব্যাকগ্রাউন্ড এবং অন্যসব কাজ শেষ করতেও আমাদের ২১ জন লেগেছে।’
তরুণ এ সঙ্গীত পরিচালক বলেন, ‘আমার ব্যান্ডমেন্ট বন্ধু-বান্ধব, আমার বন্ধু মিলি, অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বড়ভাই জয় শাহরিয়ারসহ যারা এই প্রজেক্টে গান গেয়েছেন; তাদের সবারই সহযোগিতা পেয়েছি। এছাড়াও পূর্ণ সহযোগিতা পেয়েছি আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের প্রধান তাবিন স্যারের কাছ থেকে। আর আজব রেকর্ডসের পক্ষ থেকে।’
তিনি জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন লোকেশনে গানটির দৃশ্যধারণ করা হয়েছে। আর বাইরের দেশ থেকে যারা গান গেয়ে পাঠিয়েছে তারাও তাদের দেশের ঐতিহাসিক স্থানসহ বিভিন্ন দর্শনীয় লোকেশন থেকে ধারন করেছে। কেউ বা আবার সময় স্বল্পতার জন্য স্টুডিওতেই গেয়ে পাঠিয়েছেন।’
নিজের ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে নাবিদ চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, এই গানটি তিনি জাতিসংঘের মাধ্যমে বিশ্বের অন্যান্য দেশেও নিয়ে যেতে চান। কারণ এ সংস্থাটির ঘোষণাতেই আমাদের মাতৃভাষা এখন সারা বিশ্বে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে।’
এছাড়াও গানটির প্রচারে দেশের সকল প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সহযোগিতাও চান এই তরুণ।