ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি সুফিয়া কামাল হলের তিন ছাত্রীকে মাঝরাতে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে হল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। তারা হলেন, শারমীন শুভ (গণিত, তৃতীয় বর্ষ), কামরুন্নাহার লিজা (থিয়েটার অ্যান্ড পারফরমেন্স স্টাডিজ, চতুর্থ বর্ষ) ও পারভীন (গণিত)। হলের প্রাধ্যক্ষ দুই ছাত্রীকে বের করে দেবার কথা স্বীকার করেছেন।
বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে শারমীন শুভকে এবং এরআগে ১০টার পর অন্য দুজনকে বের করে দেওয়া হয়।
রাত সাড়ে ১২টার দিকে রিমি নামের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের এক ছাত্রীর বাবাকে ডেকে আনে হল কর্তৃপক্ষ। রাত সোয়া ১টায় হল থেকে রিমিকে ছাড়াই বের হন তার বাবা ফারুক হাওলাদার। এসময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘হল প্রশাসন বলেছে, রিমি আগে আন্দোলনে জড়িত ছিল। আর যেন কোনও আন্দোলনে সে না যায়।’ তিনি এ বিষয়ে আর কিছু বলতে রাজি হননি।
হলে প্রবেশের আগে ওই অভিভাবক জানিয়েছিলেন হল থেকে একজন মহিলা তাকে ফোন করে তাকে আসতে বলেছিলেন।
রাত ১২টার দিকে আরেক শিক্ষার্থী শারমীন শুভকেও তার বাবা এসে হল থেকে নিয়ে যান। এসময় সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকরা তার সঙ্গে কথা বলতে চাইলেও তিনি কিছু বলেননি। পরে এক পর্যায়ে তিনি বলেন, ‘হল প্রশাসন থেকে আমাদের কোনও কথা বলতে নিষেধ করা হয়েছে। আমরা কিছু বলতে পারব না।’ পরে মেয়েকে নিয়ে তিনি রিকশায় করে চলে যান।
কয়েকটি সূত্র জানায়, গত ১০ এপ্রিল ফেসবুকে ভুয়া আইডি থেকে গুজব ছড়ানোর ঘটনায় জড়িত সন্দেহে এই ছাত্রীদের বের করে দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. সাবিতা রেজওয়ানা রহমান রাত ১০টার দিকে সাংবাদিকদের বলেন, ‘হলের পরিস্থতি শান্ত রাখার জন্য আমরা হল প্রশাসন মেয়েদের দফায় দফায় তলব করছি।’ তিনি দুই ছাত্রীকে হল থেকে বের করে দেওয়ার কথা স্বীকার করেন।
উপাচার্য ড. আখতারুজ্জামান চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘হল কর্তৃপক্ষ মেয়েদের অভিভাবক। তারা যেকোনও বিষয়ে মেয়েদের তলব করার অধিকার রাখে। এ হিসেবে তাদের তলব করা হচ্ছে, হয়রানি করা হচ্ছে না।’ হল থেকে বের করে দেওয়া বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এগুলো গুজব ছড়ানো হচ্ছে। একটি চক্র এসব গুজব ছড়ানোর পেছনে কাজ করছে।’
উক্ত হলের ছাত্রীদের মাধ্যমে জানা যায়, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর হলের প্রাধ্যক্ষ ড. সাবিতা রেজওয়ানা রহমান ‘গুজব’ ছড়ানোর ঘটনায় সন্দেহভাজন ছাত্রীদের ডাকেন। এরপর ওই তিন ছাত্রীকে বের করে দেওয়া হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উক্ত হলের কয়েকজন ছাত্রী চ্যানেল আই অনলাইনকে জানান, হল প্রশাসন ছাত্রীদের ডেকে নিয়ে বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। মামলার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তাদের মোবাইল ফোন আটকে তা চেক করা হচ্ছে।
রাত ১০টার দিকে ওই হলের ভুক্তভোগী এক ছাত্রীর বড় ভাই আব্দুল আউয়াল জানান, রাত ৮টার সময় আমার বোন হল থেকে আমাকে ফোন করে কান্নাকাটি করে বলে, আমি যেন তাকে এসে হল থেকে নিয়ে যাই। আমি কিছুক্ষণ পরে তাকে আবার ফোন দিলে আমার বোনের ফোন একজন শিক্ষিকা রিসিভ করেন। ওই শিক্ষিকা আমাকে বলেন, আপনার বোনকে হল থেকে নিয়ে যান। তার ফোন জব্দ করা হয়েছে।
এদিকে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নুর রাত আড়াইটার দিকে সাংবাদিকদের জানান এ ঘটনার প্রতিবাদে শুক্রবার বিকেল ৪ টায় ঢাবি ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করবে তারা।