একজন গ্রামের নায়ক! তাকে নানা সময়ে নানান চরিত্রে নানা ভাবে দেখা গেছে। ‘লাঠিয়াল’ থেকে শুরু করে ‘সুজনসখী’। কখনো বা ‘সারেং বউ’-এ সারেং হিসেবে, আবার দেখা গেছে ‘মিয়াভাই’ হিসেবেও। এমনকি তাকে সাহেব হিসেবে দেখেছে বাংলার সিনেমাপ্রেমীরা।
এরকম নানান চরিত্রের মধ্যদিয়ে তিনি পাঁচটি দশক পার করেছেন। বর্ণাঢ্য চলচ্চিত্র জীবন তার। এই বর্ণাঢ্য জীবনের কথা নিয়ে বেশ কয়েকবার চ্যানেল আই অনলাইনের মুখোমুখি হয়েছেন তিনি। বিশেষ করে তার জন্মদিনকে ঘিরে। কিন্তু এবারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন, একে তো করোনা তারউপর তুখোর এই অভিনেতা শারীরিক অসুস্থতায় আছেন হাসপাতালের বিছানায়।
হ্যাঁ, বলছি ‘মিয়া ভাই’ খ্যাত তারকা অভিনেতা ফারুকের কথা। ১৮ আগস্ট এই অভিনেতার জন্মদিন। এদিন মধ্য রাত থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুভেচ্ছায় সিক্ত হচ্ছেন তিনি।
চলচ্চিত্রের এই প্রজন্মের অনেকে প্রায়শই জিজ্ঞেস করেন, ফারুককে কেন ‘মিয়া ভাই’ ডাকা হয়? কিংবা মিয়া ভাই ডাকলে তার কেমন লাগে? এসব অনুভূতির কথা জানিয়েছিলেন এই অভিনেতা।
ফারুকের ভাষ্য, ‘মিয়া ভাই’ কেন তা আসলে নিজেও বুঝি না। তবে বিষয়টা ভাল লাগে যখন কেউ ‘মিয়া ভাই’ বলে ডাকে। তবে এটা শুরু হয়েছিল মূলত ‘লাঠিয়াল’ ছবি থেকে। ‘লাঠিয়াল’ ছবিতে একটি সিক্যুয়েন্সে আমার ‘মিয়া ভাই’ ছিলো আনোয়ার হোসেন। সেখানে উনাকে লোকজন বলে তোমার ভাই তো অনেক অন্যায় করছে, জুলুম করছে মানুষের উপর। তো সেটার বিচার তোমাকে করতে হবে। তখন উনি এসে মারতে থাকে আমাকে। এক পর্যায়ে মার খেতে খেতে আমার মনে হয়েছে যে সে আমাকে এভাবে মারছে এটা তো সেও অন্যায় করছে। তখন চিৎকার দিয়ে বলে উঠি ‘মিয়া ভাই’। আর আমার সে চিৎকারে সে থমকে যায় এবং লাঠিটি ফেলে চলে যায়। এরপর থেকেই মূলত ‘মিয়া ভাই’ নামটি প্রচলিত হয়ে ওঠে। সবাই ‘মিয়া ভাই’ বলে ডাকতে শুরু করে। আমি তখন বুঝতাম না কেন সবাই ‘মিয়া ভাই’ বলে ডাকে। তবে এটার কারণটা হলো বিচার-আচার, কারো দুঃখ, কাউকে সাহায্য করা এগুলোর জন্যই মূলত ‘মিয়া ভাই’ বলে ডাকত। মিয়া ভাই ডাকটি বড় অন্তরের ডাক, বড় হৃদয়ের ডাক।
মাঝে মাঝে একটা কথা মনে হলে খুব আনন্দ হয় এবং সেই সাথে কষ্টও পাই। সেটি হলো, যখন এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবো তখন অনেকেই বলবে ‘মিয়া ভাই’ আর থাকলো না। এ বিষয়টি যেমন আনন্দ দেয় ঠিক তেমনি কষ্টও দেয়। কষ্ট দেয় কারণ সবাইকে ছেড়ে চলে যেতে হবে।
জন্মদিন পালন নিয়েও আছে ফারুকের বক্তব্য। শুরুর দিকে ধুমধাম করে এই দিনটি উদযাপন করলেও এখন আর তা করেন না। কেন করেন না, জানিয়েছেন স্পষ্ট। ফারুকের ভাষ্য, একসময় অনেক আনন্দ নিয়ে জন্মদিন পালন করতাম। কিন্তু ছোটবেলায় মায়ের মৃত্যুর পর জন্মদিন উদযাপন থেমে ছিল। এরপর ফিল্ম ইন্ড্রাস্ট্রিতে আসার পর জন্মদিন খুব ধুমধাম করে পালন করতো সবাই। কারণ আমাদের ফিল্ম ইন্ড্রাস্ট্রিতে এই জন্মদিন বা বিশেষ দিন গুলিকে বেশ আয়োজনের মধ্যদিয়েই পালন করার রীতি প্রচলিত ছিল। কিন্ত আমি এটা করি না। করি না কারণ এটা আমার মনের ব্যাপার। মূলত ১৯৭৫-এর পর থেকেই আমি জন্মদিন পালন করা বন্ধ করে দিয়েছি।
ছবি: তানভীর আশিক