চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

যেভাবে ফুলে উঠেছে বার্সা-জুভেন্টাসের অ্যাকাউন্ট!

আর্থার-পিয়ানিচ দলবদল

জুভেন্টাস থেকে বসনিয়ান মিডফিল্ডার মিরালেম পিয়ানিচকে দলে টেনেছে বার্সেলোনা, খরচটা তাদের হিসেবে ৬৫ মিলিয়ন ইউরো। মজার বিষয় হচ্ছে, আদতে এখানে বার্সা যে খরচ দেখাচ্ছে তাতে তাদের খরচের ব্যাপারই নেই, বরং লাভ আরও ৫২ মিলিয়ন ইউরো। কারণ, পিয়ানিচকে ন্যু ক্যাম্পে আনতে তারা জুভদের দিয়েছে নিজেদের ২৩ বছর বয়সী মিডফিল্ডার আর্থার মেলোকে, সঙ্গে পেয়েছে ১০ মিলিয়ন ইউরো। এই অর্থ ঢালার পরও জুভেন্টাসের লাভ ঠিক বার্সার মতো ৫২ মিলিয়ন ইউরোই। সবকিছু মিলিয়ে কেমন একটা গোলমেলে ব্যাপার তাই না!

আসল ব্যাপারটা একটু খোলাসা করলেই সব পরিষ্কার হয়ে যাবে। আর্থার-পিয়ানিচ অদল-বদলে আসলে কীভাবে লাভটা হয়েছে সেটাই পরিষ্কার করেছে সুইস প্রতিষ্ঠান সুইস র‍্যাম্ব। টুইটারে বিস্তর লেখালেখির পর তারা সবাইকে দেখিয়েছে আসলে দলবদলে কী পরিমাণ লাভ হয়েছে বার্সা ও জুভেন্টাসের।

প্রথমে আসা যাক আর্থারের ব্যাপারে। জুভেন্টাসে ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডারের দাম হিসেবে বার্সা দেখিয়েছে ৭২ মিলিয়ন ইউরো, এরসঙ্গে আনুষঙ্গিক হিসেবে ক্লাবটি আরও পাচ্ছে ১০ মিলিয়ন ইউরো। সবমিলিয়ে বার্সার হিসেব অনুযায়ী তাদের অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে ৮২ মিলিয়ন ইউরো।

এবার আসা যাক লাভের বিষয়ে। দুই বছর আগে গ্রেমিও থেকে ৩০ মিলিয়ন ইউরোতে আর্থারকে কিনেছিল বার্সা। চুক্তি ছিল ৬ বছরের। হিসাব বিজ্ঞানের নিয়ম অনুযায়ী ক্রয়কৃত সম্পত্তির একটি নির্দিষ্ট হারে অবচয় থাকবেই। সম্পত্তি আশাকৃত যে কয়বছর ব্যবহার করতে চান, তার উপর ক্রয়মূল্য ভাগ করলেই বের হয়ে আসবে এর অবচয়।

আর্থার মানুষ হলেও হিসাব বিজ্ঞানের নিয়ম অনুযায়ী তিনি ছিলেন বার্সার সম্পত্তি। যেহেতু চুক্তি ছিল ৬ বছরের, এখানে ধরে নিতে হবে আর্থারকে এই সময় পর্যন্ত ব্যবহারের উদ্দেশ্য ছিল কাতালোনিয়ান ক্লাবটির। তার ক্রয়মূল্য ৩০ মিলিয়ন ইউরোর সঙ্গে ৬ বছর ভাগ করার পর বছরপ্রতি আর্থারের অবচয় দাঁড়ায় ৫ মিলিয়ন ইউরো করে।

কিন্তু আর্থার বার্সার হয়ে খেলেছেন দুই বছর। এই দুবছরে তার অবচয় দাঁড়িয়েছে ১০ মিলিয়ন ইউরোতে। যা কেটেকুটে চুক্তির আরও চারবছর বাকি থাকায় তার সম্পত্তিমূল্য তখন পর্যন্ত ছিল ২০ মিলিয়ন ইউরো। জুভেন্টাসের সঙ্গে অদলবদলে যে দাম দেখিয়েছে বার্সা তা থেকে এই ২০ মিলিয়ন ইউরো বাদ দিলে বাকি পুরোটাই তাদের লাভ। অর্থাৎ, এক বিক্রিতে তাদের অ্যাকাউন্ট ফুলে ফেঁপে উঠেছে পুরো ৫২ মিলিয়ন ইউরোতে।

একই হিসাব দেখিয়েছে জুভেন্টাসও। ২০১৬ সালে ৫ বছরের চুক্তিতে ৩৫ মিলিয়ন ইউরোয় এ বসনিয়ান মিডফিল্ডারকে কিনেছিল জুভরা। ফলে বছর প্রতি তার অবচয় ছিল ৭ মিলিয়ন ইউরো করে। দুবছর যাওয়ার পর তার মূল্য যখন দাঁড়িয়েছে ২১ মিলিয়ন ইউরোয়, তখন আরও দুবছরের জন্য পিয়ানিচের সঙ্গে চুক্তি বাড়ায় জুভরা। এই চুক্তির ফলে বছর প্রতি বসনিয়ান মিডফিল্ডারের অবচয় কমে দাঁড়ায় বছরে ৪.২ মিলিয়নে।

জুভেন্টাসের সঙ্গে তিন বছর চুক্তি বাকি থাকা অবস্থায় বার্সাতে খেলতে আসছেন পিয়ানিচ। ইতালিয়ান ক্লাবটির হিসেব অনুযায়ী তখন পর্যন্ত তার দাম ছিল ১৩ মিলিয়ন ইউরো। আর বার্সা তার দাম দেখিয়েছে ৬৫ মিলিয়ন। প্রকৃত দাম আর বার্সার দেখানো দামের ফারাক ৫২ মিলিয়ন ইউরো, যা নিজেদের লাভ হিসেবে দেখাচ্ছে জুভরা।

২৩ বছর বয়সী আর্থারের বদলে ৩০ বছরের পিয়ানিচকে দলে টানায় নিজ সমর্থকদের কাছে অনেক সমালোচনা শুনতে হচ্ছে বার্সাকে। কিন্তু করোনা পরবর্তী সময়ে খেলোয়াড় দলবদলে যে কঠিন নিয়ম চালু করেছে উয়েফা, তাকে বুড়ো আঙুল দেখাতে হলে নিজেদের অ্যাকাউন্টে এই লাভটা দেখাতে হতো দুই ক্লাবকেই। এখন লাভ দেখানোর ফলে অন্তত লৌতারো মার্টিনেজের মতো খেলোয়াড় কেনার পথ সুগম হয়েছে বার্সার জন্য।