চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

যেভাবে গ্রেপ্তার সিরিয়াল রেপিস্ট মজনু

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের ঘটনাটি ছিলো সম্পূর্ণ ক্লুলেস। কোন ধরনের সিসিটিভি ফুটেজ না থাকা স্বত্ত্বেও দুইদিনের মাথায় ধর্ষক মজনুকে শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় র‌্যাব।

র‌্যাব জানায়, গ্রেপ্তার মজনু একজন মাদকাসক্ত এবং সিরিয়াল রেপিস্ট। সে ইতোপূর্বে বিভিন্ন সময় প্রতিবন্ধী-ভিক্ষুক নারীদের ধর্ষণ করেছে বলে প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছে। সে নিজেকে দিনমজুর হিসেবে দাবি করলেও ছিনতাই ছিল তার নিয়মিত পেশা।

বুধবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব তথ্য জানান র‌্যাবের লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম।

ঘটনার বর্ননায় তিনি বলেন, ঘটনার দিন ঢাবি শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাসে করে শেওড়া বাসস্ট্যান্ড নামার কথা থাকলেও ভুলক্রমে কুর্মিটোলা বাসস্ট্যান্ডে নেমে যায়। ধর্ষক মজনু কুর্মিটোলা হাসপাতালে সামনে ঘাপটি মেরে অপেক্ষা করছিল। যখন ওই শিক্ষার্থী কুর্মিটোলা থেকে ফুটপাত ধরে শেওড়ার দিকে যাচ্ছিল তখন মজনু তাকে জাপটে ধরে ঝোপের আড়ালে নিয়ে যায়।

সে বার বার ওই শিক্ষার্থীকে কিল-ঘুসি মারছিলো আর গলা চেপে হত্যার হুমকি দিচ্ছিল। মজনু ওই শিক্ষার্থীকে একাধিকবার ধর্ষণ করে। শিক্ষার্থীও এর মধ্যে কয়েকবার চেতনা হারিয়ে ফেলেন। শিক্ষার্থীর একপর্যায়ে চেতন ফিরলে ধর্ষককে ফাঁকি দিয়ে দৌঁড়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।

এরপর ধর্ষক মজনু মেয়ের মোবাইল-পাওয়ার ব্যাংক নিয়ে ক্যন্টনমেন্ট রেল স্টেশনের দিকে চলে যায়। সেখানে অরুনা বিশ্বাস নামে একজনের কাছে শিক্ষার্থীর কাছে মোবাইলটি ৫০০ টাকায় বিক্রি করে। এর মধ্যে ৪০০ টাকা নিয়ে ট্রেনে করে বিমানবন্দর চলে যায়, এরপর ট্রেনে করে নরসিংদী চলে যায়। সেখানে রাতে গিয়ে স্টেশনে ঘোরাফেরা করে। পরদিন সকালে আবার ট্রেনে বনানী স্টেশনে চলে আসে। তখন থেকে ওখানেই সে অবস্থান করছিল।

মঙ্গলবার কুরাতলী থেকে খায়রুল ইসলাম নামে একজনের কাছ থেকে ভিকটিমের মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করা হয়। এরপর সে জানায় মোবাইলটি অরুনা বিশ্বাস নামে একজন তাকে দিয়েছে। সে অনুযায়ী অরুনা বিশ্বাসকে বের করে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায় মজনু তার কাছে মোবাইলটি বিক্রি করেছে। তখন অরুনার কাছ থেকে মজনুর শারীরিক বিবরণ এবং ভিকটিমের বর্ণনা মিলে যাওয়ায় মোটামুটি নিশ্চিত হওয়া যায় সেই ধর্ষক।

এরপর অভিযান আরো জোরদার করলে গোয়েন্দা তৎপরতায় অবশেষে বুধবার ভোরে শেওড়া রেলক্রসিং থেকে মজনুকে গ্রেপ্তার করা হয়। মজনু গ্রেপ্তারের পরই ধর্ষণের কথা স্বীকার করে এবং ভিকটিমকে মজনুর ছবি দেখালে তাকে শনাক্ত করে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মজনু বিভিন্ন সময় ধর্ষণের কথা অকপটে স্বীকার করে। তবে এসব বিষয়ে সে পুরোপুরি নির্বিকার। সে কয়েকবার ভিকটিমকে মেরে ফেলার উদ্যোগ নিয়েছিল। তবে ভাগ্য ভালো, আমাদের এ ধরনের পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়নি।

সারওয়ার বিন কাশেম বলেন, ভিকটিম অজ্ঞান হলেও সে কোন ক্লোরোফোম বা চেতনানাশক কিছু ব্যবহার করেনি বলে আমরা প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি। তার কাছে কোন ধরনের অস্ত্র পাইনি, এ ধরনের কথাও সে জানায়নি।

ঘটনার পর থেকে র‌্যাব-১ সহ একাধিক টিম টানা কাজ করে ধর্ষককে শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি। মামলাটি যেহেতু ডিবির কাছে রয়েছে, আসামিকে ডিবির কাছে হস্তান্তর করা হবে। তদন্তকারী কর্মকর্তা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আরো বিস্তারিত জানতে পারবেন।