‘কালবেলা’ নামে নতুন একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের কাজ শুরু করেছিলেন ‘আধিয়ার’ খ্যাত মেধাবী নির্মাতা সাইদুল আনাম টুটুল। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে ছবিটির কাজ অসমাপ্ত রেখেই জীবনের ইতি টানলেন এই নির্মাতা। তার হাত ধরেই এই ছবির মাধ্যমে বড় পর্দায় নাম লিখিয়ে ছিলেন ‘ওয়ার্ল্ড মিস ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ ২০১৭’ খ্যাত তাহমিনা অথৈ।
‘কালবেলা’ ছবিতে অভিনয় করতে যেয়ে তার হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হয়েছিলো সাইদুল আনাম টুটুলের সাথে। নির্মাতার বিচক্ষণতায় তার মনেই হয়নি যে এরআগে চলচ্চিত্রে কাজ করেননি কখনো। এমন গুণী মানুষের ছবিতে অভিনয় করতে পেরে নিজেকে সৌভাগ্যবানদের একজন মনে করেছিলেন অথৈ। কিন্তু ‘কালবেলা’ শেষ না হতেই জীবনের এই নির্মম সত্যের মুখে তাকে দাঁড়াতে হবে, এটা কল্পনাও করেননি অথৈ। সাইদুল আনাম টুটুলের অসমাপ্ত চলচ্চিত্র ‘কালবেলা’য় নিজের অন্তর্ভূক্তি, নির্মাতার সাথে সখ্যতা এবং অভিজ্ঞতার কথা চ্যানেল আই অনলাইনের সাথে অকপটে বলেছেন অথৈ। তার কথা আদ্যোপান্ত শুনে লিখেছেন নাহিয়ান ইমন:
নির্মাতা হিসেবে তিনি যেমন ভালো ছিলেন, একজন মানুষ হিসেবে টুটুল স্যার ছিলেন অমায়িক। তার সঙ্গে কারও তুলনা চলে না। তিনি তার ‘কালবেলা’ ছবির জন্য একজন নতুন মুখ খুঁজছিলেন। নির্মাতা মানিক মানবিক ভাইয়ের মাধ্যমে টুটুল স্যারের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। আমি তখন চট্টগ্রামে। এই তো কয়েকমাস আগে কথা। উনি আমার সঙ্গে কথা বলার জন্য ঢাকায় আসতে বলেন। তার সঙ্গে কথা বলে আমি মুগ্ধ হই। তিনি আমাকে দেখে এবং কথা বলে বুঝতে পেরেছিলেন আমি পারবো। সেজন্য আমাকে তার স্বপ্নের প্রজেক্ট ‘কালবেলা’র প্রধান চরিত্রে নির্বাচন করেছিলেন।
এটি মুক্তিযুদ্ধের গল্পের ছবি ‘কালবেলা’। নারীপ্রধান গল্প। যার কেন্দ্রীয় চরিত্রে আমি অভিনয় করেছি। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে নারীদের ওপর কী অমানবিক অত্যাচার ও নির্যাতন হয়েছিল তা ‘কালবেলা’ দেখলেই দর্শক বুঝতে পারবেন। উনি এই ছবিটা নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করেছিলেন। গল্পের দিকেই জোর দিয়েছিলেন। তিনি নেই কিন্তু তিনি কাজটা শেষ করতে চেয়েছিলেন। যে কোনোভাবেই আমরা এ ছবির কাজ শেষ করবো। জাতীয় নির্বাচনের পর একটা গানের শুটিং ও দুটো দৃশ্যের কাজ বাকি রয়েছে। আমরা যেকোনো ভাবে এর কাজ শেষ করে ছবি মুক্তি দেব।
টুটুল স্যারের সঙ্গে অল্পদিনে আমার পারিবারিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। তার বাসায় যেতাম। ওনার পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতাম। তিনি আমাকে আদর করে বাবু বলে ডাকতেন। প্রথম সিনেমায় তার মতো গুণী নির্মাতার সান্নিধ্য পাবো এটাই ছিল আমার অনেক বড় পাওয়া। শুটিংয়ের আগে তার নির্দেশে মহড়ায় অংশ নিতাম। তিনি শেখাতেন কীভাবে অভিনয়ের মধ্যে ঢুকে পড়তে হয়। অভিনয় দিয়ে নিজেকে কীভাবে পরিণত অভিনত্রী হিসেবে গড়ে তুলতে হয় তার কাছ থেকে শিখেছি।
সেপ্টেম্বরে খুলনা ও কুষ্টিয়ার কয়েকটি লোকেশনে আমাদের শুটিং হয়েছিল। ৯০ শতাংশ কাজ তখনই শেষ হয়েছিল। কাজ আদায়ের ব্যাপারে তিনি ভীষণ চুজি ছিলেন। দেখা গেল, ঠিকমতো অভিনয় বের হচ্ছে না, তিনি রিলাক্স দিতেন। এমনও হয়েছে সেট রেডি সব রেডি কাজ ভালো হচ্ছে না বলে দুদিন শুটিং বন্ধ রাখতেন।
তিনি অসুস্থ হলেন যেদিন, তাদের আগের দিন শিল্পকলায় একটা অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। হঠাৎ করে অসুস্থ হলে আমি হাসপাতালে ছুটে যাই তাকে দেখতে। গতকাল আমার শরীর খারাপ ছিল। বুশরা ভাবি খবর পাঠান তার অবস্থা ভালো না। আমি তড়িঘড়ি করে ছুটে গিয়ে দেখি উনি আর নেই। তার চলে যাওয়া মেনে নিতে পারছিনা। একজন নির্মাতা নন, আমার একজন অভিভাবক ও ভালো মানুষকে হারালাম।