কলসিন্দুরের নারী ফুটবলাররা এখন বাংলাদেশের ফুটবল জগতে এক অনন্য ইতিহাসের রচয়িতা। এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ ফুটবলের গ্রুপ পর্বে চ্যাম্পিয়ন হয়ে তারা প্রধানমন্ত্রীসহ দেশের বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষের শুভেচ্ছা আর প্রশংসা অর্জন করেছেন। অথচ জয় নিয়ে বাড়ি ফিরতে গিয়েই লোকাল বাসে চরম অপমানের মুখে পড়েন তারা।
এ নিয়ে একটি টেলিভিশন প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে তীব্র সমালোচনা আর প্রতিবাদের ঝড় ওঠে সবার মাঝে। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে এই ঝড় প্রকাশ পেতে থাকে। কেউ বাফুফের সমালোচনা করছেন, কেউ এই সোনার মেয়েদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করছেন, কেউ ক্ষমা চাইছেন, কেউ আবার তাদের সাহস দিচ্ছেন নিজের কথার মাধ্যমে।
সামাজিক শিশুদের সংগঠন বাতিঘরের পরিচালক তামান্না সেতু এমনই একটি সাহস দেয়া স্ট্যাটাস পোস্ট করেছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। তিনি লিখেছেন:
‘বাফুফে তোমাদের একা ছেড়ে দিয়েছে। লোকাল বাসে কটুক্তি শুনতে শুনতে বাড়ি গিয়েছ। যেয়েই স্কুল শিক্ষকের কাছে নিজের বাবাকে অপমান হতে দেখেছ।
দু’দিন আগে তোমরা মাথার মুকুট ছিলে আমাদের। ওটা সুন্দর গর্বের ইস্যু ছিল, আমরা গর্ব করেছি। আজ তোমাদের অবস্থা দেখে আমরা প্রতিবাদ করছি কেউ কেউ, এটা বিপ্লবী ইস্যু।
মনে রেখো এটা আমাদের কাছে ইস্যু। যুদ্ধ নয়। আমাদের ইস্যু বদলাবে। আমরা ব্যাস্ত মানুষের দল, অনেক কিছু নিয়ে আমাদের বলতে হয়, লিখতে হয়।
এটা যুদ্ধ শুধু তোমাদের কাছে। এটা একান্ত তোমাদের যুদ্ধ। সফল যাদের তোমরা হেঁটে বেড়াতে দেখো এই পৃথিবীতে তারা সকলেই এই যুদ্ধ করেছে। ধরণটা কিছু আলাদা হতে পারে। কিন্তু যুদ্ধটা করতে হয়। এ জগতে কেউ কাউকে কিছু দেবে না।
আমি পুরুষ নারী আলাদা বলতে চাই না। পুরুষদের যুদ্ধ করতে হয় না, তা একেবারে ঠিক নয়। ওই যে বলেছি ধরনটা হয়তো আলাদা।
তোমরাও নিজেকে ‘আমি মেয়ে বলে এমন হলো’ এই বাক্য বলো না, অনুরোধ। নিজের সাথের যুদ্ধটার প্রথম ধাপে এই বাক্যটাকে জয় কর। ওই বাক্য তোমাদের মনে করিয়ে দেয়ার মানুষ অনেক আছে। নিজেও সে কাজ কর না।
যে সুবিধা তুমি পেলে না, পাবার কথা ছিল তা নিয়ে চোখে চোখ রেখে কথা বলবে। যে সুবিধা পাবার কথা নয় তা উপহার বা দয়া থেকে দিলে নিও না।
তোমার বাবা রিকশা চালায়, এ কথা দুঃখের নয়। এ তার অর্জন। এই অর্জন যেন তোমাদের অর্জনে চাপা না পড়ে।
নিজের যুদ্ধ নিজে কর মেয়ে। যুদ্ধ জয়ের মালা বিয়ের মালা নয়, অন্য কেউ পরিয়ে দেবে না।
একদিন আসবে, আমি দেখেই মরবো দেখো যেদিন তোমাদের পেছনে গাড়ি বহর থাকবে কিন্তু তোমরা চোখে চোখ রেখে বলবে, ‘আমাদের দায়িত্ব আমরা নিতে পারি। আমাদের জন্য ভাববেন না’।
একদিন আসবে যে দিন টিজ করা লোকগুলোকে তোমরা নয়জন পিটিয়ে সোজা করে বাড়ি ফিরবে। আমি সেই দিনের স্বপ্ন দেখি। একদিন অধিকার আদায়ের গাড়িতে করে বাড়ি ফিরবে আমি স্বপ্ন দেখি।
শুধু সাবধান, কেউ যেন তোমাদের দুঃখ বেচে না খায়। তুমি নিজে তো নয়ই। হাজারো প্রতিভা, সফলতা আমি দুঃখের বাজারে বিক্রি হতে দেখেছি।
তুমি যুদ্ধ কর, জিতে দেখাও। আমি অপেক্ষায় আছি।’