চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

যুদ্ধাপরাধের দায়ে গণ-আদালতে মিয়ানমার দোষী সাব্যস্ত

রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের উপর ‘গণহত্যা’ চালানোর অপরাধে মিয়ানমার সরকারকে দোষী সাব্যস্ত করেছে একটি আন্তর্জাতিক গণআদালত। শুক্রবার এই ইস্যুতে মালেশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে রোম ভিত্তিক পার্মানেন্ট পিপলস ট্রাইব্যুনালের (পিপিটি) সাত সদস্যের একটি গণআদালত এমন ঘোষণা দেন।

মিয়ানমারের রোহিঙ্গা, কোচিন এবং অন্যান্য ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের বিরুদ্ধে চলমান হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিশেষ এই আদালতের শুনানিতে বলা হয়, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী তাদের অফিসিয়াল দায়িত্ব পালনের কথা বলে ‘রোহিঙ্গা মুসলিম জনগণকে কৌশলগত লক্ষ্যে’ পরিণত করে গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে, আর এটা অবশ্যই যুদ্ধাপরাধ।

শুনানির পর রায়ে বলা হয়, উপস্থাপিত তথ্য ও উপাত্তের ভিত্তিতে এই ‍বিষয়ে একমত হওয়া যায় যে, মিয়ানমার সরকার তাদের কোচিন ও মুসলিম ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীসমূহের জনগণের উপর ‘গণহত্যা’র প্রয়াস নিয়ে হত্যাযজ্ঞ শুরু করেছে। এমনকি মিয়ানমার তার মুসলিম নৃগোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের উপর গণহত্যার চালানোর অপরাধে দোষী।

গণআদালত মনে করে, যদি এখনই মিয়ানমার সরকারকে থামতে বাধ্য করা না হয়, তাহলে ভবিষ্যতে রোহিঙ্গাদের উপর চলমান গণহত্যা ও বর্বর নিধনযজ্ঞ আরও বৃদ্ধি পাবে। দীর্ঘ ওই প্রাথমিক রায়ের বিভিন্ন অংশ ট্রাইব্যুনালে পাঠ করা হয়।

রায়ের কার্যকর অংশ পাঠ করেন অস্ট্রেলীয় বিচারক জিল এইচ বোয়েরিঙ্গার। মিয়ানমারের ওপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা, মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিদেশে থাকা ব্যাংক হিসাব বাজেয়াপ্ত, ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে আন্তর্জাতিক এবং আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি আহ্বান জানানোসহ সর্বসম্মতিক্রমে দেয়া এই রায়ে মোট ১৭টি সুপারিশ করা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীর জবানবন্দি, বিভিন্ন প্রামাণ্য দলিল ও সাক্ষ্য গ্রহণের ভিত্তিতে মালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের মিলনায়তনে ১৮ থেকে ২১ সেপ্টেম্বর এই গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। গণহত্যা বন্ধ করতে ও রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানের জন্য মিয়ানমার সরকারকে চাপ দিতে এখন এই রায় আন্তর্জাতিক বিভিন্ন অঙ্গ, প্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে জাতিসংঘে পাঠানো হবে। তবে এই রায় বাস্তবায়নের কোন আইনি বাধ্যবাধকতা নেই।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সেনাবাহিনীর বহুদিন ধরে চলমান সংঘর্ষ-সহিংসতা সঙ্কট সমাধানে ২০১৬ সালের আগস্টে গঠিত হয় অ্যাডভাইজরি কমিশন অন রাখাইন স্টেট। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে ওই কমিশন এক বছরের তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের প্রধান অং সান সু চির কাছে জমা দেয় চলতি বছরের ২৪ আগস্ট।

৬৩ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদন জমা দেয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই ২৪ আগস্ট দিবাগত রাতে ত্রিশটি পুলিশ ও সেনাচৌকিতে রহস্যজনক হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় নিহত হয় নিরাপত্তা বাহিনীর ১২ সদস্য। তারপরই হামলার জন্য রোহিঙ্গা ‘জঙ্গি’দের দায়ী করে জবাব হিসেবে সেনাবাহিনী পুরো অঞ্চলে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে।

সেনাবাহিনীর ওই হামলায় এখনও পর্যন্ত প্রায় ৫শ মানুষ মারা গেছে, আর প্রাণভয়ে লাখ লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে পাড়ি জমাচ্ছে বাংলাদেশে। নৌপথে পালিয়ে আসার পথে নৌকাডুবিতেও বাড়ছে মৃতের সংখ্যা।

আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আনান কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়ন না করার উদ্দেশ্যেই মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এই হত্যাকাণ্ড শুরু করে। বিশ্বের সবার সামনে রাখাইন রাজ্যে চলমান বর্বর নিপীড়নের কথা বিশ্ববাসীর সামনে ‘খোলাসা’ করতেই রোম ভিত্তিক পিপিটি গণআদালত এই শুনানির আয়োজন করে।