যুক্তরাষ্ট্রকে ‘শীতল যুদ্ধের মানসিকতা’ পরিহার করার আহ্বান জানিয়েছে চীন। ক্ষুদ্রতর বোমা দিয়ে নিজেদের পরমাণু অস্ত্র ভান্ডারকে আরও বৈচিত্র্যময় করার আকাঙ্ক্ষার কথা জানায় ওয়াশিংটন। এমন বক্তব্যের পরই চীনের এই প্রতিক্রিয়া।
“যেই দেশটির রয়েছে বিশ্বের সর্ববৃহৎ পরমাণু অস্ত্রের ভান্ডার, তাদের উচিত ট্রেন্ডের বিপক্ষে না গিয়ে, একে অনুসরণ করা।” চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রবিবার এমনটি বলেন। আন্তর্জাতিক পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ চুক্তির প্রতি ইঙ্গিত করেন তিনি।
মার্কিন সামরিক বাহিনী জানায়, তাদের পরমাণু অস্ত্রগুলো ব্যবহারের জন্য অনেক বড় এবং তারা তাদের অস্ত্রের আকার আরও ছোট করার মাধ্যমে আধুনিকায়ন করতে চায়।
রাশিয়া ইতিমধ্যে এই পরিকল্পনার নিন্দা জানিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নীতি আসলে কি?
যুক্তরাষ্ট্র আশঙ্কা করছে তাদের পরমাণু অস্ত্রগুলো সেকেলে হয়ে পড়ছে এবং এগুলো আর বেশিদিন কার্যকর প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিতে সক্ষম হবে না। চীন, রাশিয়া, নর্থ কোরিয়া এবং ইরানকে সম্ভাব্য হুমকি হিসেবে উল্লেখ করে দেশটি।
শুক্রবার পেন্টাগন নিউক্লিয়ার পস্টিউর রিভিউ (এনপিআর) নামে পরিচিত একটি নথি প্রকাশ করে। যেখানে বলা হয়, ক্ষুদ্রাকার পরমাণু অস্ত্রের আধুনিকায়নের মাধ্যমেই এই হুমকি মোকাবেলা করা যাবে। ২০ কিলোটন কম ওজনের ক্ষুদ্রাকার অস্ত্র তুলনামুলক কম শক্তিশালী হলেও এগুলো বিধ্বংসী। এই নীতিতে আরও প্রস্তাব দেওয়া হয়:
- ভূমি-ভিত্তিক ব্যালিস্টিক মিসাইল, সাবমেরিন থেকে উৎক্ষেপনযোপগ্য মিসাইল এবং আকাশ থেকে নিক্ষেপযোগ্য অস্ত্র ব্যাপকভাবে আধুনিকায়ন করতে হবে। সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমল থেকে এই উদ্যোগ শুরু হয়েছিলো বলেও উল্লেখ করা হয়।
- প্রস্তাবিত আধুনিকায়নে সাবমেরিন থেকে উৎক্ষেপনযোগ্য নিউক্লিয়ার ওয়ারহেডকে ক্ষুদ্রকার বা কম শক্তিশালী বিস্ফোরক দেয়া।
- সাগরভিত্তিক নিউক্রিয়ার ক্রুজ মিসাইল ফিরিয়ে আনা।
গত মাসে ঘোষিত আমেরিকার নতুন প্রতিরক্ষা কৌশলের মূল বিষয় ছিলো ‘প্রতিদন্দ্বী দেশগুলোর (যেমন চীন, রাশিয়া) ক্রমবর্ধমান হুমকি’ মোকাবিলা।
চীনের বক্তব্য?
রবিবার যুক্তরাষ্ট্রের পরমাণু নীতি নিয়ে পেন্টাগনের রিভিউয়ের কঠোর সমালোচনা করেছে চীন।
বেইজিংয়ের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, চীনের পরমাণু হুমকিকে অতিরঞ্জিত করছে ওয়াশিংটন। চীনের নীতিকে প্রকৃতিগতভাবে রক্ষণাত্মক, বলেন তিনি।
এক বিবৃতিতে তিনি জানান, “আমরা আশা করি যুক্তরাষ্ট্র তাদের শীতল যুদ্ধের মানসিকতা ত্যাগ করবে, পরমাণু নিরস্ত্রীকরণে তাদের বিশেষ দায়িত্বের ব্যপারে সজাগ হবে, চীনের কৌশলগত উদ্দেশ্য সঠিকভাবে অনুধাবন করবে এবং চীনের জাতীয় প্রতিরক্ষা এবং সামরিক গঠনকে বস্তুনিষ্ঠভাবে দেখবে।”
যুক্তরাষ্ট্রের নীতিকে সমালোচনা করে আগেও চীন ‘শীতল যুদ্ধের আচরণের’ কথা বলেছিলো। গত বছরের শেষ দিকে ওয়াশিংটন তাদের প্রতিরক্ষা কৌশল আধুনিকায়নের ঘোষণা করলে দেশটিকে ‘মান্ধাতার আমলের ধারণা’ থেকে বেরিয়ে আসতে বলেছিলো চীন।
এনপিআর নথিতে, চীনকে তাদের ‘ইতিমধ্যে উল্লেখযোগ্য পরমাণু শক্তি আরও বিস্তৃত করার’ জন্য দায়ী করেছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু চীন তাদের নীতির স্বপক্ষে রবিবার জানায়, তাদের শান্তিপূর্ণ অগ্রযাত্রায় তারা অটল থাকবে এবং প্রকৃতিগতভাবে রক্ষণাত্মক জাতীয় প্রতিরক্ষা নীতিও অব্যাহত রাখবে।
রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া?
রাশিয়ার প্রররাষ্ট্র মন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রকে ‘যুদ্ধে উস্কানীমূলক’ আচরণের জন্য অভিযুক্ত করে বলেন, রাশিয়ার নিরাপত্তা নিশ্চিত করণে তারা যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।
রবিবারের এক বিবৃতিতে তিনি জানান, নথিটি প্রথমবার দেখলেই এর বিদ্বেষপূর্ণ এবং রাশিয়ান-বিরোধী বৈশিষ্ট্য নজরে আসবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রী সের্জেই লাভরোভ যুক্তরাষ্ট্রের এই পরিকল্পনার প্রেক্ষীতে ‘গভীর হতাশা’ প্রকাশ করেন।