ভিআইপি বক্স থেকে সোজা যে দিকটা, সেখানে লালের মেলা। মাওলানা হকি স্টেডিয়ামে এশিয়া কাপের প্রথম ম্যাচ থেকেই এই দৃশ্য চোখে পড়ছে। লাল শাড়িতে একদল কলেজ পড়ুয়া কিশোরী। তারা হকি খেলোয়াড়, স্বেচ্ছাসেবিকা।
‘হকি দেখতে এসেছেন, খেলাধুলা করেন তো?’, প্রশ্ন শুনে বিএএফ শাহীন কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী তাপসী রাবেয়া এগিয়ে এলেন। জানালেন, তারা বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোরের (বিএনসিসি) সদস্যা। শরীর চর্চার অংশ হিসেবে বিভিন্ন খেলায় অংশ নিতে হয়। হ্যান্ডবল, ভলিবলও খেলা হয় নিয়মিত।
‘এই মেয়েরা মাত্রই হকি খেলতে শুরু করেছে। স্টিকের গ্রিপটা ধরতে পারে,’ ছাত্রীদের সঙ্গে যোগ দেন শরীর চর্চা বিষয়ক শিক্ষিকা আয়েশা পারভিন, ‘ভবিষ্যতে আমরা আরও বড় পরিসরে খেলাটার চর্চা চালিয়ে যেতে চাই।’
বিমান বাহিনী প্রধানরাই পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের সভাপতি হয়ে আসছেন। বাংলাদেশ বিমান বাহিনী কর্তৃক পরিচালিত বিএএফ শাহীন কলেজে হকির খানিকটা চর্চাও হয়। কিন্তু দেশের বাকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে যেন নামই মুছে যাচ্ছে হকির। স্কুল টুর্নামেন্টগুলোর অবস্থাও তথৈবচ।
অনেকদিন থেকেই দেশে নেই নারী হকি খেলোয়াড় তুলে আনার কোনও প্রক্রিয়া। পাহাড়ি কিশোরীদের নিয়ে কয়েক বছর আগে একটি টুর্নামেন্ট শুরু হলেও পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে তাও আজ নিভু নিভু।
বাংলাদেশ হকির ইতিহাস খুব একটা সমৃদ্ধ নয়। তবে কিছু আবেগ ঠিকই জড়িয়ে আছে। ১৯৮৫ সালের এশিয়া কাপ যেমন। ওই সময়ের ঢাকা স্টেডিয়ামের (বর্তমান বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম) ঘাসের মাঠে দুর্দান্ত খেলে দেশের মানুষের মন জয় করে নিয়েছিলেন শাহাবুদ্দিন চাকলাদার-আবদুল্লাহ পিরুরা। চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছিল তাদের নাম। হকিকে ভালোবেসে তারা যেমন অনেক কিছু পেয়েছেন, হারিয়েছেনও অনেক সময়। বিয়ের আসর থেকেও শাহাবুদ্দিন চাকলাদারের হকি খেলতে যাওয়ার গল্প আছে! এরপর জিমি-চয়নরা নিজেদের একটা পরিচিতি দাঁড় করাতে পারলেও লিখিত-অলিখিত অনেক কারণে আধুনিক যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে পারেননি। ঘরের মাঠে এশিয়া কাপে গ্রুপপর্ব থেকেই বাদ পড়তে হয়েছে। নারীদের অবস্থা আরও খারাপ।
কিছুদিন আগে এশিয়ান হকি ফেডারেশনের প্রধান নির্বাহী তৈয়াব ইকরাম তৃণমূল পর্যায় থেকে খেলোয়াড় তুলে আনার ব্যাপারে দিয়েছেন ‘সর্বোচ্চ সহযোগিতা’র প্রতিশ্রুতি। তার মুখের কথা কী মুখেই থেকে যাবে, নাকি বাস্তবায়ন হবে? উত্তর পেতে অপেক্ষা ভবিষ্যতের।
তার আগে ‘অনিশ্চিত অপেক্ষা’র ভিড়ে ওই লালের মেলা যেন বলে যায়, এখনো সব কিছু শেষ হয়ে যায়নি। আজও তো কোনও বালিকাদল হকির টানে মাঠে আসে!