একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেছেন, যেসব সন্ত্রাসীরা আমাদের নিরাপত্তা জনিত হুমকি দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে দেশ সমাজ তথা জাতি কেউ নিরাপদে থাকবে না। অন্যদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন জানিয়েছেন, দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা যারা হুমকি পেয়েছেন তাদের বিশেষ নিরাপত্তা দেবার কথা।
জঙ্গি গোষ্ঠী আল-কায়েদা সমর্থিত বাংলা সাময়িকী ‘লোন উলফ’ এর মার্চ সংখ্যায় ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় সভাপতি শাহরিয়ার কবির, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামালকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে ।
ওই সাময়িকীতে বলা হয়, বিশিষ্ট ব্যক্তিদের ইসলামের স্বার্থে হত্যা করা হবে। এছাড়াও গত বছরের মার্চে অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবালের ওপর ‘লোন উলফ’ হামলা করা হয়েছিল।
রোববারের হুমকি বিষয়ে জানতে চাইলে শাহরিয়ার কবির চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, এরকম হত্যার হুমকি বহুবার পেয়েছি, এটা নতুন কিছু না। জিডি অনেক আগেই করা হয়েছে। এখন আমার বাড়িতে পুলিশ মোতায়েন আছে।
‘হুমকি শুধু আমাদের তিনজনের ব্যাপার না, বাংলাদেশে বেশিরভাগ বুদ্ধিজীবি আমাদের মতোই, তারাতো মোল্লা বা সন্ত্রাসী হয়ে যায় নি। সুতরাং আমাদের মতো যারা আছেন মুক্ত চিন্তার মানুষ সবাই তাদের টার্গেট, যেসব গণমাধ্যম মুক্ত চিন্তা করে তারাও ওদের টার্গেট’।
তিনি আরও বলেন, সরকার ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়কে বুঝতে হবে বিষয়টা আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা।এক দুজনের নিরাপত্তার বিষয় না, যারা নিরাপত্তার হুমকি দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
সন্ত্রাসীদের মুক্ত করে আমাকে খাঁচার ভেতর বন্দি করলে বিষয়টা সমাধান হবে না জানিয়ে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় সভাপতি বলেন: আমাকে পুলিশ দিয়ে ঘিরে ফেললে হবে না, ওদেরকে পুলিশ দিয়ে ঘিরতে হবে। আমি মুক্তভাবে আমার দেশে চলাফেরা করব। সন্ত্রাসীদের খাঁচায় ঢুকিয়ে আমাদের মুক্ত করতে হবে।
‘ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি করার পর থেকে সুলতানা কামাল ও তার মা সুফিয়া কামাল, জাহানারা ইমাম, হুমায়ূন আজাদ কাকে হুমকি দেয় নি?’
ক্ষোভের সুরে শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘‘আমি যদি বলি, যারা খোলা চিঠি লিখে ২০১৩ সালে আমাদের হুমকি দিল সেখানে আমিসহ জাফর ইকবাল, রামেন্দু মজুমদার ছিল। যারা এ হুমকি দিয়েছিল তাদের বিরুদ্ধে তখন কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে? সে সময় আমাদের নাস্তিক কাফের বলে যে চিঠি দেওয়া হয়েছিল তা সব গণমাধ্যমেই প্রকাশিত হয়েছে। সাঈদীর ওয়াজ এখনো ইউটিউবে পাওয়া যায়? কেন হুমায়ূন আজাদকে হত্যা করা হলো এসব প্রশ্নের উত্তর কে দেবে?’’
তিনি বলেন, এসব দেখেই তো অন্যরা উৎসাহিত হচ্ছে, যার ফলশ্রুতিতে মুক্তমনা লেখক অভিজিৎ রায়সহ বেশ কয়েকজন ব্লগারকে হত্যা করা হয়েছে, হলি আর্টিজানে হত্যাকাণ্ড হয়েছে; তাই সন্ত্রাসী জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
‘এগুলো তো বন্ধ হচ্ছে না, এগুলো বন্ধ না হলে দেশ সমাজ জাতি কেউ নিরাপদে থাকবে না। আমরা বার বার বলছি যারা হুমকি দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এগুলো চিরদিনের জন্য বন্ধ করে দিতে হবে’। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিশেষ রিপোর্টে ১৫ বক্তার নাম উল্লেখ করা হয়েছে যারা ওয়াজ মাহফিলে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়ানো, জঙ্গিবাদে উস্কানি, নারীবিদ্বেষ, গণতন্ত্র ও দেশী সংস্কৃতিবিরোধী কর্মকাণ্ডের প্রমাণ মিলেছে।
এ বিষয়ে জানাতে চাইলে শাহরিয়ার কবির বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় থেকে যে ১৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, সেটা আমাদের দেখানো হয়েছে। এ বিষয়ে আমরা দ্বিমত প্রকাশ করেছি। এ তালিকা কখনো ১৫ জন হতে পারে না। কমপক্ষে ১৫০ থেকে ২০০ জনের তালিকা হবে। এখানে দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর নাম নেই, আহমদ শফীর নাম নেই, যারা ওয়াজের নামে সন্ত্রাস প্রচার করে। সাঈদী তো বহু বছর আগে আমাকে হত্যা করাতে হবে বলেছে, তো তার বিরুদ্ধে কী হয়েছে? সে তো যুদ্ধাপরাধের অপরাধে জেলে আছে, এসব নিয়ে তো কোনো মামলা হয় নি। এ বিষয়েতো দেশের সরকার মামলা করবে। এটা দেশের সংবিধান বিরোধী কাজ, এটা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা না বরং সংবিধান বিরোধিতা।
দেশের বিশিষ্ট নাগরিকদের ওপর জঙ্গি হামলার হুমকি প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর কাছে থেকে যেসব বাংলাদেশি নাগরিক হত্যার হুমকি পেয়েছেন, তাদের জন্য বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। হুমকির ঝুঁকি মোকাবিলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে।
জঙ্গি সংগঠন থেকে হত্যার হুমকি আসায় ইতিহাসবিদ মুনতাসির মামুন রোববার দুপুরে ধানমন্ডি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। এর আগে গতকাল শনিবার একই অভিযোগে সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন আরেকজন বিশিষ্ট নাগরিক মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল।