প্রতিবছরের ন্যায় ২০১৮ সালের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পিইসি, অষ্টম শ্রেণির জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট জেএসসি এবং মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। সোমবার সকালে পিইসি, জেএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী। ২ শ্রেণি মিলিয়ে এবছর প্রায় ৫৭ লাখ শিশু শিক্ষার্থী এই প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। তাদের মধ্যে জেএসসি/জেডিসিতে প্রায় ৪ লাখ শিক্ষার্থী, আর পিইসিতে প্রায় ৬৫ হাজার শিক্ষার্থী কৃতকার্য হতে পারেনি।
এবারের জেডিসি পরীক্ষায় পাসের হার ৮৯.০৪ শতাংশ, আর জেএসসি’তে পাসের হার ৮৫.৮৩ শতাংশ। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষায় সারা দেশে এবার পাসের হার ৯৭ দশমিক ৫৯ শতাংশ, আর ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় পাসের হার ৯৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ।
এবছর সারাদেশে ২৫ লাখ ৯৯ হাজার ১৬৯ জন শিক্ষার্থী জেএসসি-জেডিসিতে অংশ নিয়েছিল। তাদের মধ্যে কৃতকার্য হয়েছে ২২ লাখ ৩০ হাজার ৮২৯ জন। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় মোট ২৬ লাখ ৫২ হাজার ৮৯৬ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেয়। আর ২৫ লাখ ৮৮ হাজার ৯০৪ জন শিক্ষার্থী সব বিষয়ে কৃতকার্য হয়েছে।
এই ২ শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষাতে আলোচিত বিষয় হচ্ছে ‘জিপিএ ৫’। এবছর অষ্টম শ্রেণির সমাপনীতে জিপিএ ৫ পেয়েছে ৬৮ হাজার ৯৫ জন শিক্ষার্থী। গতবছর জেএসসিতে জিপিএ ৫ পেয়েছিল ১,৮৪,৩৯৭ জন। সে হিসেবে এবছর জেএসসিতে জিপিএ পাওয়ার সংখ্যা অনেক কমেছে। ঐচ্ছিক চতুর্থ বিষয়ের নম্বর সংক্রান্ত নতুন নিয়মের কারণে জিপিএ প্রাপ্তির সংখ্যা কমেছে বলে জানা গেছে। তবে পঞ্চম শ্রেণির সমাপনীতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ৩ লাখ ৬৮ হাজার ১৯৩ জন জিপিএ–৫ পেয়েছে।
উপরের সংখ্যাগুলো খেয়াল করলে আমরা সহজেই বুঝতে পারি যে, উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষার্থী পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির এই পরীক্ষায় বিভিন্ন কারণে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারেনি। কোমলমতি শিশুদের জ্ঞানভিত্তিক আর মানসিক পূর্ণতা পাবার আগেই এধরণের প্রতিযোগিতামূলক পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হয়েছে, প্রতিবছরই করতে হচ্ছে। শ্রেণি সমাপনীর এই পোশাকি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়ে অনেক শিক্ষার্থীকে আত্মহননের পথও বেছে নিতে দেখা গেছে বিগত বছরগুলোতে। এবছর সেরকম কিছু যেন না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। যেসব শিশু অকৃতকার্য হয়েছে, তাদের অভিভাবকসহ পরিবারের সবার বিষয়টির দিকে মনোযোগী হওয়া উচিত। এই পরীক্ষাই জীবনের সবকিছু না, তা তাদেরকে বুঝতে সাহায্য করতে হবে। তাদের সঙ্গে কোনো ধরণের নেতিবাচক আচরণ না করাসহ দায়িত্বশীল আচরণ করা উচিত বলে আমরা মনে করি।
যারা ওই ২ শ্রেণিতে পাস করেছে, তাদের মধ্যেও রয়েছে সঙ্কট! পাস করেছে কিন্তু ‘জিপিএ ৫’ পায়নি এমন শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনেক। বহুবছর ধরেই অভিভাবক মহলের মধ্যে একটি গণচাহিদা তৈরি হয়েছে, তাদের সন্তান অবশ্যই জিপিএ ৫ পাবে বলে তাদের আশা। জিপিএ ৫ এর নীচের গ্রেডগুলো যেন কোন অর্জনই না। তাই চূড়ান্ত অর্জন ওই জিপিএ ৫ পাবার জন্য পরীক্ষার আগেপরে শিশু শিক্ষার্থীদের উপরে প্রচণ্ড চাপ থাকে, অল্প কিছু নম্বরের কারণে কোনো শিক্ষার্থী জিপিএ ৫ না পেলে অনেকসময় তারা মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে।
উপরোক্ত বিষয়গুলো নিয়ে নানা ধরণের আলোচনা-সমালোচনা রয়েছে চারিদিকে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দায়িত্বশীল মহল এই দুই পরীক্ষার ন্যায্যতা নিয়েও চিন্তা করেছে বিভিন্ন সময়। সামনের দিকে আরও চিন্তা করা উচিত বলে আমরা মনে করি। সেইসঙ্গে শিশু শিক্ষার্থীদের মানসিক দিক ও ভবিষ্যত প্রভাব নিয়েও সকল মহলের ভাবা উচিত। সবশেষে যারা এবছর কৃতকার্য হয়েছে তাদের শুভেচ্ছা, আর যারা অকৃতকার্য হয়েছে তাদেরকে প্রতি ভালোবাসা ও সামনের বছরগুলোর জন্য শুভ কামনা।