ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গগামী বিভিন্ন বাসে যাত্রীবেশে উঠতেন ডাকাত দলের সদস্যরা। এরপর সুবিধামতো স্থানে গিয়ে বাসের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ডাকাতি করে পালিয়ে যেতেন তারা।
উত্তরবঙ্গের সড়কে সাম্প্রতিক সময়ে যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতির ঘটনা ব্যপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। এ পরিস্থিতিতে সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের মূলহোতাসহ ৬ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
ডাকাত দলটি গত ৯ মাসে উত্তরঙ্গের বিভিন্ন রুটের ৭-৮ টি বাসে ডাকাতি করেছে। ডাকাতির জন্য তারা পলাশবাড়ী থেকে পীরগঞ্জ পর্যন্ত ৪৮ কিলোমিটারের পথ বেছে নেয়। ডাকাতি শেষে তারা আবার স্বাভাবিক জীবনযাপন করে এবং নতুন করে বাসে ডাকাতির পরিকল্পনা করে আসছিলো।
শুক্রবার (৪ সেপ্টেম্বর) র্যাব -১ ও র্যাব -১৩ এর যৌথ অভিযানে আশুলিয়া ও গাইবান্ধা এলাকা থেকে এই সংঘবদ্ধ চক্রের ৬ জনকে গ্রেফতার করে।
গ্রেপ্তাররা হলেন- মূলহোতা শ্রী সুশীল চন্দ্র রায় (২২), রিয়াজুল ইসলাম ওরফে লালু (২২), ওমর ফারুক (১৯), ফিরোজ কবির (২০), আবু সাঈদ মোল্লা (২৫) ও শাকিল মিয়া (২৬)।
রোববার (৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান সংস্থার আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, সর্বশেষ গত ৩১ আগস্ট রাত আটটায় হানিফ পরিবহনের একটি নন এসি বাস ঢাকা থেকে পঞ্চগড়ের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। সাড়ে আটটায় বাসটি সাভারে পৌঁছালে পূর্ব পরিরিকল্পনা অনুযায়ী গ্রেফতার লালু ও আবু সাঈদ মোল্লাসহ ডাকাত দলের তিনজন টিকিট কেটে যাত্রীবেশে বাসে চড়েন। একইভাবে নবীনগর এলাকা থেকে নয়ন, ওমর ফারুক ও ফিরোজ কবির উঠেন।
রাত আনুমানিক আড়াইটার দিকে গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে পৌঁছালে যাত্রীবেশের ডাকাতরা বাসটির নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় বাসের চালক মনজুরকে ছুরিকাঘাত করে বাসটি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে লালু চালাতে থাকেন। বাস চলমান অবস্থাতেই যাত্রীদের কাছ থেকে আনুমানিক ৩০-৪০ হাজার টাকা ও মোবাইল লুট করে নেয়। পরে তিনটার দিকে পীরগঞ্জ এলাকায় বাসটি ফেলে পালিয়ে যায়। পরবর্তিতে বাস চালক মনজুরকে নিকটস্থ পলাশবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
গ্রেপ্তারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, এই ডাকাত দলে ১০-১২ জন সদস্য রয়েছে। মূলহোতা নয়নের নেতৃত্বে গত নয় মাসে প্রায় ৭-৮ টি যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতি করে। এরমধ্যে রত্না স্পেশাল, সটিবাড়ি স্পেশাল, সৈকত পরিবহন, শ্যামলী পরিবহন, জায়দা পরিবহ, ডিপজল পরিবহন ও সর্বশেষ হানিফ পরিবহনের একটি বাসে ডাকাতি করে।
ডাকাত দলের সদস্যদের কেউ গার্মেন্টসে চাকরি করে, কেউ অটোরিক্সা চালক, কেউ ফল বিক্রেতাসহ ক্ষুদ্র পেশায় জড়িত। তারা ডাকাতি করে স্বাভাবিক জীবনযাপন করে আবার নতুন করে ডাকাতির পরিকল্পনা করতো।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত এই চক্রের সঙ্গে পরিবহনের কারো সংশ্লষ্টতা পাওয়া যায়নি। ডাকাত দলটি ভুয়া নাম্বারে বাসের টিকিট কাটতেন। কাউন্টারের সিসিটিভি ক্যামেরা থাকায় তারা একেক সময় একেক সদস্য গিয়ে একেক পরিবহনের টিকেট কাটতেন।
তারা সবাই উত্তরবঙ্গের বাসিন্দা, তাই সেই এলাকার পথঘাট তাদের পরিচিত। এজন্য সেই এলাকা কেন্দ্রিক পরিবহনই তারা ডাকাতির জন্য নির্বাচন করতো বলে জানা যায়।