শোক আর প্রতিবাদে যশোর হত্যাকাণ্ডের শহীদদের স্মরণ করেছে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। এসময় যশোর হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা এবং জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানানো হয়।
বুধবার পূর্ণ হলো যশোর হত্যাকাণ্ডের দুই দশক। এ উপলক্ষে দেশব্যাপী কর্মসূচি পালন করেছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী।
ওই ঘটনায় নিহতদের স্মরণে এবং হত্যাকাণ্ডের পুনঃতদন্ত দ্রুত সম্পন্ন করে প্রকৃত দোষীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবিতে বিকাল ৫টায় উদীচী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে স্থাপিত অস্থায়ী বেদিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, আলোচনা সভা ও প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই অসাম্প্রদায়িক, সাম্যবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ ধর্মভিত্তিক রাজনীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে আসছে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। আর তাই উদীচীর উপরই নেমে আসে বাংলাদেশের ইতিহাসে এ ধরণের সর্বপ্রথম হামলা। পরে একে একে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ, ধর্মীয় উপসনালয়, আদালত, সিনেমা হলসহ সারাদেশে সিরিজ বোমা হামলার মতো নৃশংসতম হত্যাকাণ্ড চালানো হয়।
তারা বলেন, যশোর হত্যাকাণ্ডের দুই দশক পেরিয়ে গেলেও এখনও এ ঘৃণ্য ঘটনার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে পারেনি সরকার। কয়েকটি উগ্র সন্ত্রাসবাদী সংগঠনকে নিষিদ্ধ ও আইনের আওতায় আনলেও এখনো ধরা-ছোঁয়ার বাইরেই রয়ে গেছে এসব সংগঠনের গডফাদার জামায়াত-শিবির গোষ্ঠী। জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার পরিবর্তে তাদেরকে বহাল তবিয়তে রেখে নির্বিঘ্নে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালানোর অধিকার দেয়ায় বারবারই মানবিক বিপর্যয় নেমে এসেছে দেশের সাধারণ মানুষের উপর। তারা যশোর হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা এবং জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানান।
উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সভাপতি অধ্যাপক ড. সফিউদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে ও সহ-সাধারণ সম্পাদক সঙ্গীতা ইমামের সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য রাখেন উদীচীর সাবেক সভাপতি কামাল লোহানী, উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি হাবিবুল আলম, প্রবীর সরদার, সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার তপন, সহ-সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে এবং ঢাকা মহানগর সংসদের সাধারণ সম্পাদক ইকবালুল হক খান প্রমুখ।
১৯৯৯ সালের ৬ মার্চ যশোর টাউন হল মাঠে আয়োজিত বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর দ্বাদশ জাতীয় সম্মেলনের দ্বিতীয় ও শেষ দিনে গভীর রাতে যখন হাজারো জনতা ও সংস্কৃতিকর্মী বাংলার আবহমান সংস্কৃতির ধারক বাউল গানের সুর মূর্ছনায় বিমোহিত হয়েছিলেন, ঠিক তখনই বিকট শব্দে দুই দফা বিস্ফোরণ ঘটে মঞ্চের নিচে আগে থেকে রেখে দেয়া বোমার।
ধর্মান্ধ, মৌলবাদী, সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর চালানো ওই নৃশংস হামলায় প্রাণ হারান নূর ইসলাম, সন্ধ্যা রানী, রামকৃষ্ণ, তপন, বাবুল সূত্রধরসহ অন্তত ১০ জন শিল্পী-কর্মী ও সাধারণ মানুষ। আহত হন দেড় শতাধিক শিল্পী-কর্মী ও সংস্কৃতিমনা সাধারণ মানুষ। মৌলবাদী অপশক্তির ঘৃণ্য হামলার শিকার সেসব সংস্কৃতিকর্মী এখনও পঙ্গুত্বের অভিশাপ বয়ে নিয়ে জীবন যাপন করছেন।