সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ সিনেমায় অত্যাচারী রাজার নির্দেশে বিদ্রোহীদের যন্তর মন্তর কক্ষে পাঠানো হত তাদের মগজ ধোলাই করা হত। সম্প্রতি রাজধানীতে একদল প্রতারক চক্রের প্রলোভনে পা দিয়ে মগজ ধোলাইয়ের শিকার হয়েছেন রুহুল আমিন নামের এক ব্যক্তি।
প্রতারক চক্র তাকে বুঝিয়েছে, ‘যন্তর মন্তর’ এর ন্যায় এক মেশিন রয়েছে যেখানে আসল ইউরোর সঙ্গে কালো কাগজ আর বিভিন্ন রাসায়নিক ওষুধ মিশিয়ে মেশিনের ভেতরে রাখলে ২৪ ঘণ্টা পর অধিক পরিমাণে ইউরো বেরিয়ে আসবে।
প্রলোভনে পা দিয়ে রুহুল ওই প্রতারক চক্রটিকে তিন ধাপে ৯৬ লাখ টাকা দেন। কিন্তু ২৪ ঘণ্টা পর ওই তথাকথিত ‘যন্তর মন্তর’ মেশিন থেকে কালো কাগজ ছাড়া টাকা কিংবা ইউরো কিছুই পায় নি রুহুল।
গত ২৮ অক্টোবর (রোববার) রুহুল আমিন বাদি হয়ে রাজধানীর বাড্ডা থানায় একটি প্রতারণার মামলা দায়ের করেন। মামলায় ব্যবসার কথা বলে ৯৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ করেন তিনি। ওই মামলার ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে দু’জন দেশি বিদেশী প্রতারক চক্রের সদস্যকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (উত্তর বিভাগ)।
গত ৩১ অক্টোবর বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানীর উত্তরার হাউস বিল্ডিং এলাকা থেকে আবুল হোসেন ওরফে পংকজ শর্মা (৪২) ও এলেক্স টেনে ওরফে পেট্রিক (৪৫) নামের প্রতারক চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি প্রাইভেট কার, একটি ইলেকট্রনিক লকার, একটি কাঠের বাক্স ও ১২ বান্ডিল কালো কাগজ উদ্ধার করা হয়।
ডিবি পুলিশ জানায়, চলতি বছরের জুন মাসে রুহুল আমিন ব্যবসায়ের কাজের জন্য খিলক্ষেতের একটি অভিজাত হোটেলে যান। সেখানে পরিচয় হয় আবুল হোসেন ওরফে পঙ্কজ শর্মা ও পেট্রিকের সাথে। পরিচয়ের সুবাদে আবুল হোসেন ক্যামেরুনের নাগরিক এলেক্স টেনে, মাইক ও পিটার মিলে ফাঁদ ফেলে রুহুল আমিনকে।
প্রতারকরা ব্যবসার প্রস্তাব দিয়ে রুহুল আমিনকে জানায়, মুরগির খামার, গরুর খামার এবং তেলাপিয়া চাষ করে অনেক আয় করা সম্ভব। এমনকি এই মুরগি, গরু এবং তেলাপিয়া ক্যামেরুনে রফতানি করে বিপুল পরিমাণ অর্থ আয় করা সম্ভব।
প্রতারক চক্রের সদস্যরা দামি গাড়ি নিয়ে বিভিন্ন সময় রুহুল আমিনের বাড়িতে গিয়ে ব্যবসার বিষয়ে আলোচনা করত। এমনকি প্রতারকরা রুহুল আমিনকে ময়মনসিংহের ত্রিশাল, ভালুকা ও মুক্তাগাছায় কয়েকটি তেলাপিয়া মাছের খামারও দেখায়।
এসব ব্যবসার পাশাপাশি রুহুল আমিনকে একটি অভিনব মেশিনের কথা জানায় প্রতারকরা। ওই মেশিনে আসল ইউরোর সঙ্গে কালো কাগজ মিশিয়ে রাখলে ২৪ ঘণ্টা পর অধিক পরিমাণে ইউরো বেরিয়ে আসবে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সিনিয়র সহকারী কমিশনার মহররম আলী মাসুদ চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, প্রতারক চক্রের ফাঁদে পা দিয়ে রুহুল আমিন তিন দফায় ৯৬ লাখ টাকা দেন। ব্যবসার পাশাপাশি অভিনব মেশিনে ইউরো অধিক করার বিষয়টিতে বেশি আকৃষ্ট হয় রুহুল।
তিনি বলেন, এ চক্রের মূলহোতা আবুল হোসেন। তিনি মূলত ইন্ডিয়ান ব্যবসায়ী হিসেবে পঙ্কজ শর্মা নামে মিথ্যে পরিচয় দিতেন। আর তার সঙ্গে গ্রেপ্তার ক্যামেরুনের নাগরিক এলেক্স টেনে ওরফে পেট্রিক ও পলাতক মাইক ও পিটার দীর্ঘদিন ধরে এমন প্রতারণা ও জালিয়াতি করে আসছিল।
গ্রেপ্তার আবুল হোসেন ও পেট্রিককে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। আদালতের নির্দেশে তাদের এক দিনের রিমাণ্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। পলাতকদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান তিনি ।
রুহুল আমিনের করা মামলাটি ডিবি পুলিশে স্থানান্তর হলে ওই দুই প্রতারককে গ্রেপ্তার করা হয়।