দেশে নিরাপত্তাহীন না হয়েও ব্লগার পরিচয়ে বিদেশে গিয়ে রাজনৈতিক আশ্রয় নেওয়ার সমালোচনা করেছেন সাংবাদিক ও ব্লগার আরিফ জেবতিক। এরকম মানুষদের কারণে মাঝেমধ্যে তার গলা ছেড়ে কাঁদতে ইচ্ছে করেও বলে ফেসবুক পোস্টে তিনি মন্তব্য করেছেন।
সম্প্রতি একজনের রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী হওয়ার কথা উল্লেখ করে জেবতিক লিখেছেন: দুনিয়ার যে যেখানে ভিজিট ভিসা পাচ্ছে সেখানে গিয়ে আশ্রয় চাচ্ছে। আজকেও একজনের খবর পেলাম, যিনি সারাজীবন ধোড়াসাপের মতো স্ট্যাটাস দেয়া ছাড়া কিছু করেন নাই- অথচ ‘বিপন্ন ব্লগার’ হিসেবে সপরিবারে আশ্রয় নিতে চলে গেছেন। এরেই বলে (কারো ঘাড়ে কোপ আর কারো বায়োস্কোপ।)
চলুন দেখি কী লিখেছেন আরিফ জেবতিক:
অনেকদিন পর সিলেট গেছি, ঢাকায় প্রচন্ড গরম, কিন্তু সিলেটে বৃষ্টি হচ্ছে। আমি আমাদের বাড়ির সামনের বারান্দায় বসে সামনের উঠোনে জলের ধারা দেখছি। বৃষ্টি একটু থেমেছে এখন। এই সময় আমাদের পাড়ারই এক বড়ভাই গেট দিয়ে ঢুকলেন। সঙ্গে তার বখে যাওয়া ছোট ভাই।
অনেকদিন পরে দেখা, আমি আগ্রহ নিয়ে বসালাম। উনি খুব চিন্তিত স্বরে কথা বলা শুরু করলেন, তোমার জন্য চিন্তা হয়, যেভাবে চারপাশে খুনোখুনি হচ্ছে। আমি আর কী বলব, এসব উদ্বেগ প্রিয়জনেরা হরহামেশাই দেখান। আমি শুধু বললাম, ’দোয়া করবেন।’
তিনি মাথা দুলিয়ে বললেন, ‘অবশ্যই, অবশ্যই। দোয়া তো সবসময়ই করি। আমরা তো জানি-ই তুমি কেমন ছেলে।’
তারপর জিজ্ঞেস করলেন, ‘দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা ভাবছো?’
আমি বললাম, ‘না, তেমন করে ভাবছি না।’ ‘আচ্ছা, তোমাদেরকে নাকি আমেরিকায় ফ্রি নিয়ে যাবে?’ আমি হাসলাম, ‘জানি না তো!’
তিনি বিজ্ঞের মতো বললেন, ‘ না, না, কথা সত্যি। পত্রিকায় দেখেছি। যাওয়ার ভাড়া পর্যন্ত ফ্রি।’ আমি বললাম, ‘আমি আসলে জানি না। আমি তো এই বিষয়ে আগ্রহী না, তাই এ নিয়ে খোঁজ রাখি না। নিয়ে গেলে তো ভালোই।’
তিনি এবার আমতা আমতা করে বললেন, ‘একটা কথা বলব, তোমাকে কিন্তু রাখতেই হবে।’
আমি বললাম, ‘ এভাবে বলছেন কেন! অবশ্যই সাধ্যে থাকলে রাখব। কী ব্যাপার?’
তিনি এবার তার পাশে থাকা ছোট ভাইকে দেখিয়ে বললেন, ‘তুমি তো সবই জানো। এর (ছোট ভাইয়ের) তো লেখাপড়া কিছুই হলো না। খারাপ ছেলেদের সঙ্গে মিশে একেবারে সর্বনাশ। ওরে যদি একটু ব্লগার বানাইয়া আমেরিকা পাঠাইয়া দিতা ভাই…।’
(মাঝে মাঝে আমার সত্যিই গলা ছেড়ে কাঁদতে ইচ্ছা করে। সত্যিই।) ( দুনিয়ার যে যেখানে ভিজিট ভিসা পাচ্ছে সেখানে গিয়ে আশ্রয় চাচ্ছে। আজকেও একজনের খবর পেলাম, যিনি সারাজীবন ধোড়াসাপের মতো স্ট্যাটাস দেয়া ছাড়া কিছু করেন নাই- অথচ ‘বিপন্ন ব্লগার’ হিসেবে সপরিবারে আশ্রয় নিতে চলে গেছেন। এরেই বলে কারো ঘাড়ে কোপ আর কারো বায়োস্কোপ।)