মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্মম নির্যাতনের মুখে প্রাণভয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের দুঃখ-দুর্দশা প্রত্যক্ষ করে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম তাদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করে বলেছেন, ‘আজ আমরা সবাই রোহিঙ্গা।’
রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে করা এক টুইট বার্তায় জিম বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের সাহসিকতায় আমি চরমভাবে মুগ্ধ ও অনুপ্রাণিত। তারা ন্যায়বিচার চায় এবং নিরাপদে বাড়ি ফিরতে চায়। আমরা এদিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারি না। আমরা তাদের সাথে সংহতি প্রকাশ করছি। আজ আমরা সবাই রোহিঙ্গা।’
একইরকম কথা বলেছেন একইসঙ্গে বাংলাদেশে আসা জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। তবে একটু ঘুরিয়ে তিনি বলেছেন, ‘মিয়ানমার থেকে সম্প্রতি পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের কাছে সেখানে হত্যা ও ধর্ষণের যে সংখ্যার কথা শুনেছি তা অকল্পনীয়।’
রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করে চলতি সপ্তাহে একইরকম কথা বলেছেন আন্তর্জাতিক রেডক্রসের প্রেসিডেন্ট পিটার মোরের এবং যুক্তরাজ্যের এশিয়া ও প্যাসিফিক বিষয়ক মন্ত্রী মার্ক ফিল্ড। গত বছরের শেষ দিকে ক্যাথলিক ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস এবং তার আগেও বিশ্বনেতাদের অনেকেই রোহিঙ্গাদের জন্য এমন কথা বলেছেন।
কিন্তু তা শেষ পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের জন্য কোনো সুখবর বয়ে আনেনি। তাদের কথায় আসেনি রোহিঙ্গাদের জন্য নিরাপদ ও সুন্দর ভবিষ্যতের কোনো খবর। ঘুরে ফিরে এসব বিশ্বনেতাদের মুখে প্রায় একই ধরনের কথা আমরা উচ্চারিত হতে দেখেছি।
তারা এক সুরে বলেছেন, রোহিঙ্গা পরিস্থিতি একটি মানবিক বিপর্যয়। রোহিঙ্গাদের শান্তিপূর্ণভাবে দেশে ফেরত নিতে হবে। রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। রোহিঙ্গাদের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ অব্যাহত রাখতে হবে। রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে মিয়ানমারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখতে হবে। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ মানবিকতার পরিচয় দিয়েছে… ইত্যাদি ইত্যাদি।
অথচ আমরা লক্ষ্য করলাম, গত বছরের আগস্টের শেষ দিকে বাংলাদেশের দিকে রোহিঙ্গা ঢল শুরু হলেও মিয়ানমারের বিরুদ্ধে তখন তেমন কেউ কিছু বলেননি। তাদেরকে অামরা তখনই সরব হতে দেখেছি; যখন ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে ফেলেছে।
এর মানে দাঁড়ায়, বিশ্বনেতারা সবই দেখলেন, কিন্তু শক্ত কোনো পদক্ষেপ মিয়ানমারের বিরুদ্ধে নিলেন না। শুধু তাই নয়, প্রায় এক বছর হতে চললেও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারকে বাধ্য করার মতো কোনো পদক্ষেপ আমরা আন্তর্জাতিক কোনো সংস্থাকে নিতে দেখিনি। এ ক্ষেত্রে প্রভাবশালী বিশ্বনেতাদেরও ভূমিকাও কৌশলে পরিপূর্ণ। তাদের অবস্থান ছিল অাসলে ‘ধরি মাছ, না ছুঁই পানি’র মতো। এখনই তাই-ই আছে।
আমরা জানি, অনেক অনেক প্রশ্ন থাকার পরও এখন পর্যন্ত বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী সংস্থা জাতিসংঘ। এমনকি বিশ্ব অর্থনীতির নিয়ন্ত্রক বিশ্বব্যাংকের প্রভাবও কম নয়। এই দুটি প্রতিষ্ঠান প্রধান অ্যান্তেনিও গুতেরেস এবং জিম ইয়ং কিম এক সঙ্গেই বাংলাদেশে এসেছেন। কিন্তু মিয়ানমারকে চাপে রাখবে- এমন স্পষ্ট কোনো পদক্ষেপের কথা তারা কেউই বলেননি।
তাই আর ‘কথার কথা’ না বলে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে শক্ত পদক্ষেপ নিয়ে তাকে বাধ্য করুন নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের মাতৃভূমিতে ফেরাতে। এসব ‘কথার কথায়’ মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের ‘ঘুম’ ভাঙবে না। আপনারা যতোই বলুন ‘আজ আমরা সবাই রোহিঙ্গা’, বাস্তবতা ভিন্ন কথা বলছে।