চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

যতটা না আইনের শাসন তার চেয়ে বেশি উর্দিঅলাদের ইচ্ছাপূরণ

পাকিস্তানের অন্য প্রধানমন্ত্রীদের মতো নিজের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেই তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছেন পিএমএল-এন নেতা নওয়াজ শরিফ। এবার পানামা পেপারসে প্রকাশিত দুর্নীতির অভিযোগে দায়ের করা মামলায় সুপ্রিম কোর্ট তাকে প্রধানমন্ত্রী পদে থাকার অযোগ্য ঘোষণা করলে কোন কালক্ষেপণ না করে কিছুক্ষণের মধ্যে তিনি পদত্যাগ করেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি সন্তানদের মাধ্যমে বিদেশে প্রচুর অর্থ পাচার করেছেন, গড়ে তুলছেন সম্পদের বিশাল পাহাড়। নওয়াজ শরিফ বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করে এলেও পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী যে বরাবরই দুর্নীতিবাজ তাতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু এরপরও তার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দেয়া রায় এবং রায় ঘোষণার পরপরই কোন ধরণের আইনি পদক্ষেপে না গিয়ে তড়িঘড়ি করে মূলত: আর্মির ইশারায় তাকে পদত্যাগ করতে হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন। পাকিস্তানের রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর অনৈতিক হস্তক্ষেপের অতীত ইতিহাস এবং এবারের মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেয়ার পর থেকে বিশেষ করে বিগত কয়েকমাসে গণতান্ত্রিক পন্থায় নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের সঙ্গে আর্মির টানাপোড়েন এই বিষয়টি প্রমাণ করে। সর্বশেষ গত এপ্রিলে ‘ডন লিকস’ নামে পরিচিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘সম্প্রতি একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ সেনাবাহিনীকে সরাসরি অভিযোগ করেন, দেশে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তাদের অনীহা রয়েছে।’ ওসামা বিন লাদেনের মতো সন্ত্রাসীকে আশ্রয় দেয়া সেনাবাহিনী সম্পর্কে নওয়াজের এই তিক্ত সত্য উচ্চারণের পরই তারা নওয়াজের বিভিন্ন সিদ্ধান্তের সরাসরি বিরোধিতা শুরু করে। এমনকি গত এপ্রিলের শেষদিকে প্রধানমন্ত্রী তার প্রধান সহযোগী এবং পররাষ্ট্র বিষয়ক বিশেষ সহকারী তারিক ফাতেমিকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নিলে এর জবাবে সেনাবাহিনী একটি টুইটবার্তা পোস্ট করে জানায়, তারা নওয়াজের এই সিদ্ধান্ত ‘প্রত্যাখ্যান’করছে। এরপর থেকে তারা নিজেদের চিরাচরিত চরিত্র অনুযায়ী তাকে বরখাস্ত করতে নানামুখী খেলা শুরু করে। যেখানে সব কিছু আর্মির নিয়ন্ত্রণে সেখানে সুপ্রিম কোর্টও তাদের ইচ্ছার বাইরে নয়। বরং অতীতে অনেকবার সুপ্রিম কোর্ট সেনা সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে পরিপূরক হিসেবে কাজ করেছে। এর ধারাবাহিকতায় সেনাবাহিনীর ইচ্ছাপূরণে সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ে পাকিস্তানের গণতন্ত্র আবারও বড় ধরণের ধাক্কা খেয়েছে, যদিও বলতে গেলে দেশটিতে কখনোই গণতন্ত্র ছিল না। বলা যায়, এই ঘটনা যতটা না আইনের শাসন তার চেয়ে বেশি উর্দিঅলাদের ইচ্ছাপূরণ।