সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী আর অালী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের অপরাধ নতুন করে আর বলার কিছু নেই। মুক্তিযুদ্ধের সময় তারা গণহত্যায় অংশ নিয়েছে, মানুষ হত্যা করেছে, ধর্ষণ করেছে, ঘর-বাড়িতে আগুন দিয়েছে, লুটপাট চালিয়েছে। এসবই মানবতাবিরোধী অপরাধ যে অপরাধের একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাদেরকে উপযুক্ত শাস্তি দিয়েছিলো। আপিল বিভাগে সেই সর্বোচ্চ শাস্তি বহাল থাকে। এরপর রিভিউ আবেদনও খারিজ হয়ে যায়। এখন ফাঁসি কার্যকরে একমাত্র যে আনুষ্ঠানিকতা বাকি, সেটা হচ্ছে রাষ্ট্রপতির কাছে সাকা চৌধুরী এবং মুজাহিদ প্রাণভিক্ষার যে আবেদন করেছেন তা প্রত্যাখ্যাত হওয়া।
তবে প্রাণভিক্ষার আবেদনকে শুধু যে কোনো আবেদন হিসেবে দেখলে ভুল হবে। প্রাণভিক্ষার আবেদনকে শুধু তাদের বেঁচে থাকার অাকাঙ্খা হিসেবে দেখাটাও ঠিক হবে না। এর আগে আব্দুল কাদের মোল্লা বা কামারুজ্জামান এরকম আবেদন করেননি যেটা করেছেন তাদের নেতা মুজাহিদ এবং একাত্তরে মুজাহিদদের অপরাধের সঙ্গী সাকা চৌধুরী।
প্রাণভিক্ষার আবেদনের মাধ্যমে মুজাহিদ-সাকারা আসলে স্বীকার করে নিয়েছেন যে একাত্তরে তারা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন। সেই অপরাধের শাস্তি কী? এরকম অপরাধের একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আব্দুল হামিদ নিশ্চয়ই সেই বিবেচনাবোধ থেকেই বদর কমান্ডার মুজাহিদ আর আর রাজাকার শিরোমনি সাকা চৌধুরীর আবেদন প্রত্যাখ্যান করবেন।
প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ করতে গিয়ে নিশ্চয়ই রাষ্ট্রপতির চোখের সামনে ভেসে উঠবে শহীদ সেই মুক্তিযোদ্ধাদের মুখ যাদের আত্মত্যাগে স্বাধীন বাংলাদেশ যে বাংলাদেশের আজ তিনি রাষ্ট্রপতি। নিশ্চয়ই তিনি সেই সন্তানহারা মায়েদের কথা, ভাই হারা বোনেদের কথা, প্রিয় সন্তানকে হারানোর পর অসীম শূন্যতায় জীবন কাটানো বাবাদের কথা মনে করবেন বারবার।
সাকা চৌধুরীর স্ত্রী যতোই বলুন কেনো না যে জাতীয় সংসদে আব্দুল হামিদের সাবেক সহকর্মী হওয়ার কারণে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী তাঁর কাছে ‘সুবিবেচনা’ আশা করেন, বাস্তবতা হচ্ছে শুধু এতোগুলো বছর বেঁচে থাকাই নয়, সাকার মতো যুদ্ধাপরাধীর সংসদে যেতে পারা কিংবা মুজাহিদের মন্ত্রী হতে পারাটাই ছিলো জাতির জন্য এক কলঙ্ক।
আজ ক্ষমা নয়, বরং তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেই সেই কলঙ্ক মোচন করবে বাংলাদেশ।
কলঙ্ক মোচনের অংশ হিসেবে সাকা-মুজাহিদের আবেদন নাকচ করতে গিয়ে সই করার সময় একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ নিশ্চয়ই আরেকবার সেই গৌরব বোধ করবেন যে গৌরবে তাঁর পায়ের নীচে আজ ধূলায় লুটোপুটি খাচ্ছে গণহত্যা চালানো অপশক্তি যে অপশক্তি এক ফুঁৎকারে বাংলাদেশের জন্মকে উড়িয়ে দিতে চেয়ে আজ বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির অনুকম্পাপ্রার্থী।
তবে তারা যে সশস্ত্র পথে বাংলাদেশের জন্মের বিরোধিতা করেছিলো সেটা সুস্পষ্ট লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য থেকেই। তারা যে তথাকথিত আদর্শের অনুসারী, তারা এখনও যে তথাকথিত আদর্শ প্রতিষ্ঠা করতে চায় তার জন্যই অখণ্ড পাকিস্তানের চাওয়া ছিলো তাদের; সেজন্যই বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের জন্মেরও বিরোধী ছিলো তারা।
আজ তাই শুধু এদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করাই শেষ কথা নয়, যে তথাকথিত আদর্শ থেকে তারা একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত হয়েছিলো সেই তথাকথিত আদর্শের রাজনীতিও বন্ধ করে দিতে হবে। তা না হলে এদের আণ্ডা-বাচ্চারা বারবারই ছোবল দিতে থাকবে যেমন তারা দিয়েছিলো একাত্তরে।
মুজাহিদের ক্ষমা চাওয়ার খবর অসত্য দাবি করে জামায়াত এরইমধ্যে প্রমাণ করেছে গো. আযম-নিজামী-মুজাহিদদের আদর্শিক আণ্ডা-বাচ্চারা তাদের বাংলাদেশবিরোধী রাজনৈতিক আদর্শ থেকে কখনোই সরে আসবে না।
(এ
বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর
সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)