জঙ্গি অর্থায়ন রোধে মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেনে সীমা বেধে দেয়া এবং হিসাবে স্থিতির (ব্যালেন্স) পরিমাণ কমিয়ে আনলেও এ কারণে আর্থিক সংকটে পড়ার আশঙ্কা করছে এ সংক্রান্ত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ি বা এজেন্টরা। তারা বলছেন: এতে গ্রাহক আগের তুলনায় লেনদেন কমিয়ে দেবে। ফলে তাদের লাভ কমে যাবে। আর গ্রাহকরা বলছেন: তারা নগদ অর্থবহনে আগের মতো ঝুঁকিতে পড়বেন।
মোবাইল ব্যাংকিংয়ে অপব্যবহার রোধে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক এক সার্কুলার জারি করে নির্দেশ দিয়েছে, ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে কোনো গ্রাহক তার মোবাইল ব্যাংকিং (বিকাশ, রকেট, ইউক্যাশ, এম ক্যাশসহ বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংক হিসাব) হিসাবে তিন লাখ টাকার বেশি স্থিতি রাখতে পারবে না। এতদিন গ্রাহকরা যেকোন পরিমাণের অর্থ জমা রাখতে পারতেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন এই নীতিমালা কার্যকর হলে টাকা বহনের ক্ষেত্রে আগের মতো ঝুঁকিতে পড়বেন বলে মনে করেন গ্রাহকেরা।
রাজধানীর পান্থপথে বসুন্ধরা সিটির পাশে ফুটপাথে শার্ট-প্যান্ট বিক্রি করেন জিয়া ইসলাম। তিনি চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: ইসলামপুর থেকে প্রতি সপ্তাহে কাপড় কিনতে যাই। নগদ টাকা নিয়ে রাস্তায় চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় বিকাশের মাধ্যমে টাকা পরিশোধ করি। কিন্তু এখন সীমা বেধে দিলে সমস্যায় পড়বো। আবার আগের মতো নগদ টাকা নিয়ে মালামাল কিনতে যেতে হবে।
অন্যদিকে নতুন এই নীতিমালা কার্যকর হলে এজেন্টদের আয় কমে যাবে বলে মনে করেন মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টরা। রাজধানীর বাংলামোটরে বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের এজেন্ট আতিকুল ইসলাম চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: মোবাইল ব্যাংকিংয়ে মাসে আয় হয় ৫ থেকে ৬ হাজার টাকার মতো। গ্রাহকদের ক্যাশ-ইন ও ক্যাশ-আউটের পরিমাণের ওপর আমরা কমিশন পেয়ে থাকি।
‘কিন্তু নতুন নীতিমালায় দৈনিক এবং মাসিক ভিত্তিতে ক্যাশ-ইন এবং ক্যাশ-আউটের সর্বোচ্চ সীমা কমিয়ে দিলে আয় অনেক কমে যাবে। লেনদেনে সীমা বেধে দিলে গ্রাহকরা কম পরিমাণে টাকা লেনদেন করবে। এতে আয় অর্ধেকে নেমে আসবে।’
তেজগাঁও ট্রাক স্ট্যান্ডের রাসেল নামের বিকাশ এজেন্ট বলেন: নতুন আইন করলে মানুষ টাকা কম উঠাবে, পাঠাতেও পারবে কম। এ কারণে আগের চেয়ে লাভ হবে কম।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, জঙ্গি বা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে যাতে অর্থ লেনদেন না হতে পারে সেজন্যই এই পদক্ষেপ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের নিবন্ধিত গ্রাহক সংখ্যা ৫ কোটি ৭৭ লাখ। দেশের ৭ লাখ ৭৩ হাজার এজেন্টের মাধ্যমে এসব হিসাবধারী লেনদেন করছেন। গত সেপ্টেম্বরে মোট ২১ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে।