ঢাকা সফরে নরেন্দ্র মোদির কিছু বক্তব্য আর মিয়ানমার ভূ-খণ্ডে ভারতের জঙ্গিবিরোধী অভিযানের পর উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক। ফর্মেশন কমান্ডারদের বৈঠক থেকে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান রাহিল শরীফ ভারতকে হুঁশিয়ার করে বলেছেন, পাকিস্তানের দিকে কারো কুদৃষ্টি দেয়ার সাহস করাও উচিৎ হবে না। পাকিস্তান যে কোনো মূল্যে তার সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করবে।
পাকিস্তান সেনাপ্রধানের এমন বক্তব্যের কারণ খুঁজতে চলতি সপ্তাহের শুরুতে যেতে হবে।
শুরুটা ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরে, যখন সন্ত্রাসবাদ ইস্যুতে পাকিস্তানের ভূমিকার কঠোর সমালোচনা করেন নরেন্দ্র মোদি। তিনি বলেন, পাকিস্তান সবসময়ই ভারতকে বিশৃঙ্খল করার চেষ্টা করে আসছে। তারা সন্ত্রাসবাদকে প্রশয় দিচ্ছে বলেই একের পর এক ঘটনা ঘটেই চলেছে।
১৯৭১-এ বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধে ভারতের সহায়ক ভূমিকা নিয়েও কথা বলেন মোদি।
পুরনো অপমানের কথা মনে করিয়ে দেওয়ায় নরেন্দ্র মোদির ওই বক্তব্য স্বাভাবিকভাবেই ইসলামাবাদের গাত্রদাহের কারণ হয়। প্রথমে মোদির বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা সারতাজ আজিজ।
’৭১ প্রসঙ্গে মোদির বক্তব্যের সমালোচনা করে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলে, এটা দুঃখজনক যে ভারত ‘অন্য দেশের বিষয়ে হস্তক্ষেপ’ করার কথা স্মরণ করে গর্ব বোধ করে।
পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটার ও তেহরিক-ই-ইনসাফ প্রধান ইমরান খানও মোদির বক্তব্যের নিন্দা জানান। ইমরান বলেন, মোদি ভারতের দারিদ্র দূর করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তার সেটা নিয়েই ব্যস্ত থাকা উচিৎ।
ভারতের বক্তব্যের বিষয়ে জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টিও কামনা করে পাকিস্তান।
কূটনৈতিক পর্যায়ে বক্তৃতা-বিবৃতিতে ঘটনা সেখানেই শেষ হয়ে যেতে পারতো। কিন্তু হয়নি।
৪ জুন (বৃহস্পতিবার) ভারতের মণিপুরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ওপর হামলা চালিয়ে ২০ জওয়ানকে হত্যা করে মিয়ানমার সীমান্ত পেরিয়ে ঢোকা জঙ্গিরা। শনিবার ঢাকায় আসেন নরেন্দ্র মোদি। ঢাকায় অবস্থানের সময়েই মিয়ানমার ভূ-খণ্ডে ঢুকে পাল্টা জঙ্গিবিরোধী অপারেশন চালাতে ভারতের সেনাবাহিনীকে সম্মতি দেন তিনি। রোববার মোদি ঢাকা ছাড়েন।
আর সোমবার রাতে স্যাটেলাইট চিত্র ও ড্রোনের সহায়তায় মিয়ানমার সীমান্তের ভেতরে জঙ্গিদের আস্তানা সনাক্ত করে অভিযান চালায় ভারতের সেনাবাহিনী। অপারেশনে ৬০ জঙ্গির মৃত্যু হয়।
সফল অপারেশনের পর ভারতের তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী বলেন, জঙ্গি হুমকি থাকলে ভারত যে কোনো দেশের যে কোনো স্থানে অভিযান চালাবে।
এমন বক্তব্যে ক্ষুব্ধ পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চৌধুরী নিসার আলি খান ভারতকে স্মরণ করিয়ে দেন, পাকিস্তান মিয়ানমার নয়। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বলেন, ভারত যদি শিক্ষা দেয়ার কথা বলে; তবে জেনে রাখা ভালো- পাকিস্তানও ভারতকে শিক্ষা দেয়ার ক্ষমতা রাখে।
পাকিস্তানের রাজনীতিকদের অভিযোগ, কোনো দেশের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করে ভারতের অভিযান চালানোর হুমকি জাতিসংঘের সনদের পরিপন্থী। বরং ভারতের এমন বক্তব্যে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে স্থায়ী সদস্যপদ পাওয়ার সব সম্ভাবনা শেষ হয়ে গেছে।
তবে, সার্বভৌমত্ব রক্ষার কথা বললেও, পাকিস্তানের জন্য নিজের দেশে বিদেশী বাহিনীর জঙ্গিবাদবিরোধী তৎপরতা নতুন কিছু নয়। ২০১১ সালে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে রাতের আঁধারে অপারেশন চালিয়ে আল কায়েদা’র প্রতিষ্ঠাতা ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা করেছিলো মার্কিন সামরিক বাহিনী।
অপারেশনের পর পাকিস্তান সরকার ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো দাবি করে, তাদের অবগতিতেই যুক্তরাষ্ট্র ওই অভিযান চালায়। এছাড়াও, পাকিস্তানের ওয়াজিরিস্তানে ৯/১১ এর পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র জঙ্গি দমনের নামে বারবার ড্রোন হামলা চালিয়ে আসলেও- তা নিয়ে পাকিস্তান সরকারকে খুব কমই সরব হতে দেখা গেছে।