দেশের এক স্বনামধন্য স্কুলে শিশুদের ভর্তি করানোর ব্যাপারে একটি আপত্তিকর বিষয় উঠে এসেছে। এত করে শিশু মানস ও অভিভাবকদের মনে সৃষ্টি হয়েছে চূড়ান্ত অসন্তোষ। এক কথায় বলা যায় শিশুদের এই স্কুলে ভর্তির নিয়মে বলা হয়েছে মোটা শিশুকে ভর্তি করা যাবে না। এটি শারীরিক বুলিংয়ের মারাত্মক উদাহরণ।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক সংবাদে জানা যায়: রাজধানী ঢাকার একটি স্কুলে প্লে গ্রুপে শিশু ভর্তির নিয়মাবলি ‘শিক্ষার্থীর যোগ্যতা’ অংশে এমন কিছু শর্ত দিয়েছে, যাকে ‘অগ্রহণযোগ্য’, ‘আপত্তিকর’ ও ‘বৈষম্যমূলক’ বলছেন শিক্ষাবিদ ও অভিভাবকগণ। মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ ২০২২ সালে প্লে গ্রুপে শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট যোগ্যতা ও নিয়মাবলি বেঁধে দিয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। ‘শিক্ষার্থীর যোগ্যতা’ অংশে বয়স, উচ্চতা, ওজন, দুধদাঁত, শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা-সংক্রান্ত নানা শর্ত দিয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি। ভর্তির যোগ্যতা ও নিয়মাবলিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি মোটা হরফে উল্লেখ করেছে, লটারিতে উত্তীর্ণ হওয়ার পরও যদি কোনো শিক্ষার্থী প্রাতিষ্ঠানিক শর্ত পূরণে ব্যর্থ হয়, তবে সে ভর্তির জন্য অযোগ্য বিবেচিত হবে। অর্থাৎ শর্তের অতিরিক্ত ওজন বা কম ওজন, বেশি লম্বা বা খর্ব কোনো শিশু স্কুলটিতে ভর্তি হতে পারবে না।
মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের উল্লেখিত শর্তগুলোকে গ্রহণযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও শিক্ষাবিদ রাশেদা কে চৌধূরী। একই নীতিমালার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ নয়, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে বিধিবদ্ধ কাঠামোর মধ্যে আনতে হবে বলে মনে করেন তিনি।
সংবাদে আরও প্রকাশ, প্লে গ্রুপে শিশুশিক্ষার্থী ভর্তির জন্য স্কুলটিতে ২২ অক্টোবর লটারি হয়। এখন চলছে ভর্তির অন্যান্য প্রক্রিয়া। স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এবার প্লে গ্রুপে বাংলা ও ইংরেজি সংস্করণে ২০০ মেয়ে ও ৯০ জন ছেলে হিসেবে মোট ৫৮০ শিশুকে নেয়া হবে। স্কুলটির ওয়েবসাইটে ২০২২ সালে প্লে গ্রুপে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থীর যোগ্যতা ও নিয়মাবলির একটি বিজ্ঞপ্তি দেওয়া আছে। কয়েকজন অভিভাবকের কাছ থেকে বিজ্ঞপ্তির শর্তের বিষয়টি জানা যায়। বিজ্ঞপ্তিতে দেখা যায়, ‘শিক্ষার্থীর যোগ্যতা’ অংশে তিনটি শর্ত দেওয়া আছে। এগুলো হলো—বয়স, উচ্চতা ও ওজন। বয়সের শর্তে লেখা আছে, ১ জানুয়ারি ২০২২ সালে বয়স চার থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে হতে হবে। উচ্চতার শর্তে বলা হয়েছে, তিন ফুট থেকে তিন ফুট আট ইঞ্চির মধ্যে হতে হবে। ওজনের শর্তে লেখা আছে, ১৩ থেকে ২১ কেজির মধ্যে হতে হবে। ওজনের অংশে তিনটি উপশর্ত দেওয়া হয়েছে। এগুলো হলো—শিক্ষার্থীর সব দুধদাঁত (২০টি) অটুট থাকতে হবে। শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ হতে হবে। ছোঁয়াচে রোগ থাকলে ভর্তির জন্য বিবেচিত হবে না।
‘শিক্ষার্থীর যোগ্যতা’ অংশের কিছু শর্ত ‘অগ্রহণযোগ্য’, ‘আপত্তিকর’ ও ‘বৈষম্যমূলক’ বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেক অভিভাবক। বিষয়টি আমাদের কাছেও খুবই আপত্তিকর বলে মনে হয়েছে।
এরকম একটি অদ্ভুত ও বিচিত্র বিষয় এখনও এই দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বলবৎ রয়েছে ভাবতেই আমাদের অবাক লাগে। সরকার যেখানে দেশের প্রতিটি শিশুকে স্কুলমুখী করার চেষ্টা করছেন। বিভিন্ন ক্যাম্পিং করছেন সেখানে খোদ রাজধানীর একটি স্কুলে শিশু ভর্তির এই অস্বাভাবিক শর্তটি আমাদের বিস্মিত করে। এই ধরণের ঔপনেবেশিক শর্ত আধুনিক সভ্য সমাজ গঠনের পথে মারাত্মক অন্তরায়।
আমরা মনে করি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অতি সত্বর এই স্কুলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। বিষয়টির দ্রুত সুরাহা না হলে শিশুদের মনে বিরূপ প্রভাব পড়বে। এই ধরণের আরও লুকায়িত অনেক শর্তের ফাঁদে বাঁধা দেশের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়ে সরকারের এখনই সিদ্ধান্ত নেয়ার সময়। নতুবা ভবিষ্যতে এরকম আরও বিচিত্র শর্তযুক্ত প্রতিষ্ঠান শিক্ষার মূল ধারাকে ব্যাহত করতে পারে।