চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

‘মেয়েরা যেন নিজের কথা বলতে কখনো ভয় না পায়’

অবশেষে মুক্তি পেয়েছে মালালার জীবনী নির্ভর চলচ্চিত্র ‘গুল মাকাই’

একটি প্রতীকী পোস্টার এবং টিজারের পরে নোবেল বিজয়ী মালালা ইউসুফ-এর জীবনের উপর ভিত্তি করে নির্মিত আত্মজীবনীমূলক চলচ্চিত্র ‘গুল মাকাই’  অবশেষে বড় পর্দায় মুক্তি পায়। যার সমস্ত খুঁটিনাটি ও ছবিটি নিয়ে নিজেদের জার্নির কথা সম্প্রতি  ব্রাউন গার্ল ম্যাগাজিন (লন্ডন বিভাগ) এর কাছে একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন দিব্যা দত্ত (‘বীর জারা’ এবং ‘মান্টো’ খ্যাত) এবং অতুল কুলকার্নি (‘রঙ দে বাসন্তী’ এবং ‘রইস’ এর মাধ্যমে পরিচিত)। কারণ তারাই এই ছবিতে মালালার বাবা মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। ব্রাউন গার্ল ম্যাগাজিনে দেয়া ‘গুল মাকাই’ নিয়ে নিজেদের অভিজ্ঞতার বয়ান চ্যানেল আই অনলাইনের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো:

পৃথিবীর সবার কাছে মালালা একটি অনুপ্রেরণার উৎস। আপনার অভিজ্ঞতা কেমন অতুল? মালালা-র অভিভাবকের চরিত্রে অভিনয় করার সময় কিংবা এরকম গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজের অংশ হতে পেরে?
মালালার যাত্রাটা তার অভিভাবকের সাথেই শুরু হয়েছিল। খুব ছোটবেলা থেকেই তাকে তার মা-বাবা এমনভাবে গড়ে তুলছিলেন যেন সে দৃঢ় মনোবলসম্পন্ন এবং শিক্ষিত হয়ে গড়ে উঠে। নিজের কথা বলতে যেন কখনো ভয় না পায়। এই সম্পর্কটাকে বড় পর্দায় আমরা দেখাতে পেরেছি, অভিনয়শিল্পী হিসেবে এটা নিঃসন্দেহে গর্ব করার মতো একটা মুহূর্ত আমাদের জন্য। দর্শকদেরও এর মাধ্যমে এটা বলার সুযোগ পেয়েছি যে আমাদের মেয়েদের আর তাদের স্বপ্নগুলোকে উৎসাহিত করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ।

‘গুল মাকাই’ ছবির একটি দৃশ্যে…

দিব্যা, এই আত্মজীবনীমূলক চলচ্চিত্র নির্মাণ প্রক্রিয়ার সময় যে রিসার্চের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে সে সম্পর্কে কিছু বলুন?
আমাদের পরিচালক আমজাদ খান এবং চিত্রনাট্যকার ভাস্বতী চক্রবর্তী চলচ্চিত্রের শুটিং শুরুর আগে প্রায় দুই বছর মালালা-র জীবনের প্রতিটি দিক নিয়ে গবেষণা করেছেন, তথ্য সংগ্রহ করেছেন। প্রথমে তারা মালালার পরিবারের প্রত্যেকের সাথে দেখা করেছিলেন, তারপর ফিল্মের টিম, কাস্ট-ক্রু মেম্বারদের নির্বাচিত করেছেন। প্রতিটা মুহূর্তে বার বার চিত্রনাট্য পড়া হয়েছে, রিসার্চ করা হয়েছে তা আমাদের চিত্রনাট্য যুক্ত হওয়ার আগে। মালালা আর তার পরিবার চলচ্চিত্রটি দেখেছে এবং তারা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে প্রতিটি বিষয়ে। দারুণ একটা যাত্রা এটা।

‘গুল মাকাই’ ছবিতে মালালার বাবা ও মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন বলিউডের অতুল ও দিব্যা

অতুল, ১০টি ক্যামেরা সেট আপের ব্যাপারটা কেমন ছিল? কী কী চ্যালেঞ্জের সম্মুখিন হতে হয়েছিল কলাকুশীলবদের একটা টেকেই দৃশ্য ধারণের ক্ষেত্রে?
এটা তো অবশ্যই চ্যালেঞ্জের ব্যাপার যখন একটা মাত্র টেকেই শট দিতে হয়। আর আমরা অনেকবার মহড়া দিতাম সম্পূর্ণ দৃশ্য যেহেতু কোন শট বিভাজনের ব্যাপার ছিল না। চলচ্চিত্র নির্মাণের খুবই কঠিন স্টাইল এটা। সবচে বড় বিষয় ছিল মানসিকভাবে প্রস্তুত হওয়া, এই ব্যতিক্রমী চলচ্চিত্র নির্মাণ প্রক্রিয়ায় নিজে মেনে নেওয়া। চারিদিকে ক্যামেরা, তাই কোন একটা নির্দিষ্ট দিকে ফোকাস করার চেয়ে ‘কেন্ডিড’ স্টাইলেই দৃশ্য ধারণ বেশি হয়েছে। অধিক মনোযোগের দরকার হয় এসব ক্ষেত্রে, যা সবচে কঠিন। মাঝে মাঝে অভিনয়শিল্পীরা ভেবে নেন যে আচ্ছা এই এঙ্গেলে আমি সংলাপ দিবো বা অভিনয় করবো তারপর ক্যামেরা অন্য জনের দিকে থাকবে, এসময়টুকু আমি রেস্ট নিলাম। কিন্তু এখানে ব্যাপারটা একদমই সেরকম ছিল না। এই চলচ্চিত্র সম্পূর্ণ দৃশ্যটা একবারে মনে রাখার মনোযোগ দাবী করছিল, একদম শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত। এটা সত্যিই দারুণ এক মিশেল থিয়েটার আর গতানুগতিক চলচ্চিত্র দুটোরই।

পশতুতে গান গাইতে কেমন লাগছিল, দিব্যা?

ভয়ঙ্কর! সত্যিই খুবই সুন্দর ভাষা এটা, কিন্তু আমিতো প্রস্তুত ছিলাম না। একেবারে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত ছিল সেটা। আমাদের একটা সংলাপ ছিল পশতুতে যেটাকে সেটেই গানে রূপ দেওয়া হল। ভাষাটা মনে রাখা আবার গানটা ঠিকভাবে গাওয়া একেবারে এক ঘন্টার নোটিশে, কোনরকম হোমওয়ার্ক ছাড়া, কঠিনই ছিল। আমাদের টিম খুবই সহযোগিতাপূর্ণ ছিল এক্ষেত্রে যার জন্য ব্যাপারটা সহজ হয়েছিল। আমি খুব আনন্দিত যে পশতুতে একটা গান গেয়েছি আমি।

অভিনয়শিল্পী হিসেবে অতুল আপনার কেমন লাগছিল অন্যের জীবনে অভিনয় করতে এমন মানুষদের জীবনে অভিনয় করছিলেন যারা সত্যিকার জীবনে বেশ ট্রমা/আতঙ্কের মধ্যে ছিলেন?
সবচেয়ে আগ্রহোদ্দীপক জিনিসই হচ্ছে অন্যের জীবন যাপন করা অভিনয়ের মধ্য দিয়ে। দারুণ ছিল তাদের জীবনের অংশ হয়ে যাওয়া একটা ছোট সময়ের জন্য। যদিও আতঙ্কগ্রস্ত একটা জীবন সেটা কিন্তু আপনি তার মধ্যেই নিজেকে ঢেলে দিচ্ছেন এবং নিজেকে সেটাই হতে দিচ্ছেন। অক্ষরে এই আতঙ্ক যে কোন রূপে থাকতে পারে কিন্তু অভিনয়শিল্পী হিসেবে একটা চরিত্রের প্রতি যথাযথ ন্যায় করার ব্যাপার থাকে। নিজেকে নিজেই এইসমস্ত আতঙ্ক, রাগ, ক্ষোভ, দুঃখ ইত্যাদির মধ্য দিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলাম। যদিও চ্যালেঞ্জিং ছিল ব্যাপারটা কিন্তু প্রশংসাযোগ্য একটা পথ এটা। অন্য সব অভিনয়শিল্পীরাও যথেষ্ট সাহায্য সহযোগিতা করেছেন, যেকারও অতীত আতঙ্ককে নিজের জীবনে ধারণ করারর আলাদা একটা দৃষ্টিভঙ্গি থাকে যা নিজের জন্যও এক আশীর্বাদ।

সবশেষে, দিব্যা কেমন লেগেছিল কাশ্মীরে শুটিং করতে?
কাশ্মীরে ভ্রমণ করা তো সবসময় আনন্দের। শিডিউল খুবই টাইট ছিল। বরফের মধ্যে মূল অ্যাকশন দৃশ্যগুলোর শুটিং হল। আর ১০টা ক্যামেরার সেট আপ অনেকটা সময় নেয় প্রস্তুতির জন্য। একটা বিশেষ দৃশ্য ছিল যেখানে কম করে হলেও ৫০০ মানুষ এক শটে অংশ নিয়েছিল। এবং প্রত্যেককে সেভাবেই প্রস্তুত করা যেন বাস্তবিকভাবেই প্রত্যেকে নিজের অংশের অভিনয় করে এবং তা যেন সত্যিও মনে হয় এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল। যাই হোক, ভালভাবেই হয়েছে সব এবং কাশ্মীর অতিরিক্ত একটা সৌন্দর্য অবশ্যই যোগ করেছে চলচ্চিত্রে। শটের পরে অবসরে বরফের মধ্যে খেলা, বসে থাকা, আগুন জ্বালিয়ে গল্প করা এসবই খুবই মজার মুহূর্ত ছিল।