টি-টুয়েন্টি সংস্করণে বিশ্ব মাতিয়ে বেড়াচ্ছেন লেগস্পিনাররা। রশিদ খান, শাদাব খান, ইস সোধি, চাহাল ও স্যামুয়েল বদ্রি; আইসিসির বর্তমান র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে এই পাঁচ তারকা লেগস্পিনার। মেয়েদের ক্রিকেটে সেরা পাঁচে নাম একটিই। দ্বিতীয় স্থানে ভারতীয় লেগস্পিনার পুনম যাদব।
মেয়েদের ক্রিকেটে অফস্পিনারদের পেছনে ঠেলে রাজত্ব অধিগ্রহণের চেষ্টায় শক্ত অভিযান শুরু করেছেন লেগস্পিনাররা। বাংলাদেশের মেয়েদের ক্রিকেটে পট পরিবর্তনের পেছনেও তো লেগস্পিনের অনেক বড় ভূমিকা।
একটা সময় টিম টাইগ্রেসের সমস্যা ছিল ব্যাটিং। সেটি কাটিয়ে উঠেছে এশিয়া কাপ থেকে। ভয়ডরহীন ব্যাটিং, সঙ্গে দুই লেগস্পিনার রুমানা আহমেদ ও ফাহিমা খাতুনের জুটি বেধে বোলিং। সহজেই ম্যাচের পর ম্যাচ জয় তুলে নিচ্ছে টাইগ্রেস দল। সালমা খাতুনের দল পার করছে মধুর সময়ই।
টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে রুমানা-ফাহিমা দাঁড়াতেই দেননি পাপুয়া নিউগিনি, নেদারল্যান্ডস, আরব আরব আমিরাত, স্কটল্যান্ডের ব্যাটারদের। অল্প রানে প্রতিপক্ষ দলকে বেধে ফেলে শামিমা, আয়শা, ফারজানা, নিগারদের কাজটা সহজ করে দিয়েছেন। দাপুটে সব জয় তুলে অপরাজেয় থেকে ফাইনালে উঠেছে বাংলাদেশের মেয়েরা।
পরিসংখ্যানে চোখ রাখলেই স্পষ্ট হবে লেগস্পিনের অবদান। রুমানা-ফাহিমা বাছাইপর্বের চার ম্যাচে ২৪ ওভার বোলিং করে দিয়েছেন ৬৮ রান। ইকোনমি তিনেরও নিচে (২.৮৩)। বিপরীতে তারা উইকেট নিয়েছেন ১৭টি। এটিই প্রতিপক্ষ দলগুলোর সঙ্গে বড় ব্যবধান গড়ে দিয়েছে।
ফাহিমা ৪ ম্যাচে ১৩ ওভার বোলিং করে ৪০ রান খরচায় নিয়েছে ৯ উইকেট। রুমানা নিয়েছেন ৮ উইকেট। ১১ ওভারে দিয়েছেন ২৮ রান।
রুমানা-ফাহিমার গুরু ইমতিয়াজ হোসেন পিলু মনে করেন জুটি বেধে বোলিং করাতেই সাফল্য বেশি আসছে। খুলনা বিভাগীয় নারী দলের কোচের দায়িত্বে থাকা ইমতিয়াজ হোসেন চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে আলাপে বলেন সেকথাই।
‘লেগস্পিন খেলতে হলে টেকনিক শতভাগ ঠিক থাকা চাই। লেগস্পিন এমন একটা শিল্প যা ব্যাটসম্যান শটস খেলার পরও বুঝতে পারে না বল কোথায় যেতে পারে। কখনও কখনও বোলারেরও বুঝতে সমস্যা হয় ব্যাটের কোথায় লাগলে বল কোন অঞ্চলে যাবে। বাংলাদেশের সুবিধা হল, রুমানা-ফাহিমা জুটি বেধে বোলিং করছে। দুই প্রান্ত থেকেই লেগস্পিনার বল করায় প্রতিপক্ষ ব্যাটার চাপে পড়ে যাচ্ছে। একজন করলে তাকে হয়ত দেখেশুনে খেলতো আর অন্যপ্রান্তের বোলারটির উপর চড়াও হতো।’
বলা হয়ে থাকে লেগস্পিন হল শিল্প। আর লেগস্পিনার শিল্পী। বাংলাদেশ নারী দলে দুই শিল্পীর নাম রুমানা ও ফাহিমা। যাদের ঘূর্ণির কারিকুরি বোঝা প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের জন্য কঠিন পাঠই হয়ে উঠেছে।
মেয়েদের ওয়ানডে সংস্করণে দেশের হয়ে প্রথম হ্যাট্রটিক করেছিলেন রুমানা। টি-টুয়েন্টিতে প্রথম হ্যাটট্রিক এসেছে ফাহিমার হাত ধরে। বিশ্বকাপ বাছাইয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে হ্যাটট্রিক করে ইতিহাসে নাম লেখান।
ক্রিকেটের শুরু থেকেই লেগস্পিনাররা দুর্লভ প্রজাতি। মাঝখানে অনেক বছর মনে রাখার মতো লেগস্পিনারের দেখাই পায়নি ক্রিকেট। বর্তমান সময়ে বেশ কয়েকজন প্রতিশ্রুতিশীল লেগস্পিনার মাতিয়ে বেড়াচ্ছেন বিশ্ব ক্রিকেটও। মুস্তাক আহমেদ, শেন ওয়ার্ন, ম্যাকগ্রিলদের পর ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন রশিদ খান, আদিল রশিদ, ইমরান তাহিররা।
বাংলাদেশের পুরুষ দলে একজন লেগস্পিনার পেতে কম চেষ্টা করছে না বিসিবি। কিন্তু দুর্লভ প্রতিভা মিলছে না। মাঝে জুবায়ের হোসেন লিখন কিছুদিন খেললেও অনেকদিন ধরেই দলের বাইরে। বিপরীতে মেয়েদের ক্রিকেটে দুই লেগস্পিনার দীর্ঘদিন ধরে খেলে যাচ্ছেন। দিয়ে যাচ্ছেন আস্থার প্রতিদান।