দীর্ঘ আট বছর ধরে সার্ফিং করেন তিনি। প্রথম যখন সাগরের ঢেউয়ের সাথে তার এই অনিন্দ্য সময়ের সূচনা হয় তখন তিনি নিতান্তই শিশু। সেই ১২ বছরের অকুতোভয় কিশোরী আজ ২২ বছরের তরুণী। রক্ষণশীল সমাজের নিন্দা-অপবাদের ভীতি আগ্রাহ্য করে সেই নাসিমা আক্তার মেয়েদের সার্ফিংয়ে আসার কন্টকাকীর্ণ পথকে সুগম করেছেন। তারই স্বীকৃতি মিললো এ বছরের জাতীয় টুর্নামেন্টের সমাপণী অনুষ্ঠানে।
দ্বিতীয়বারের মতো আয়োজিত ব্র্যাক চিকেন জাতীয় সার্ফিং টুর্নামেন্টের সমাপনীতে বাংলাদেশের প্রথম নারী সার্ফার হিসেবে তাকে দেয়া হয় বিশেষ সম্মাননা।
সার্ফিং টুর্নামেন্টের শুরুর দিনই বৃহস্পতিবার (২১ এপ্রিল) চ্যানেল আই অনলাইনের সাথে কথা হয় নাসিমা আক্তারের। স্বীকৃতি প্রশ্নে দীর্ঘ বিলম্ব প্রশ্নে কিছুটা খটকা লাগলেও বাংলাদেশ সার্ফিং এসোসিয়েশনের (বিএসএ) সাধারণ সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন চৌধুরী চ্যানেল আই অনলাইনকে জানান, টুর্নামেন্টেরই শেষ দিন নাসিমাকে সংস্থাটির পক্ষ থেকে এই স্বীকৃতিস্বরূপ এ্যাওয়ার্ড দেয়া হবে। জাতীয়ভাবে গতবছরেই প্রথমবারের মতো আয়োজিত টুর্নামেন্টটিতে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বাংলাদেশের প্রথম সার্ফার জাফর আলমকে সম্মাননা জানানো হয়েছিলো। আর এবার পেলেন নাসিমা।
চ্যানেল আই অনলাইন: আপনার সার্ফিং-এর শুরু এবং প্রত্যাশা সম্পর্কে বলুন?
নাসিমা আক্তার: গত আট বছর ধরে সার্ফিং-এ আছি। আমার বয়স যখন বারো ছিলো তখন থেকেই আমি সার্ফিং করি। সার্ফিং লিজেন্ড জাফর আলম আমাকে সার্ফিং শিখিয়েছে। অসুস্থতার কারণে গতবার খেলতে পারিনি। আমি চাই বাংলাদেশের আরও অনেক সার্ফাররা উঠে আসুক। আর চাই সবাই আমাকে সহযোগিতা করুক। আপনারা সবাই আমাকে সহযোগিতা করবেন আমি যেনো সার্ফিংকে ধরে রাখতে পারি। আরও অনেক সার্ফার যেনো তৈরি করতে পারি। আমার ইচ্ছা আছে আমি সার্ফারদের শেখাবো।
চ্যানেল আই অনলাইন: মেয়ে হিসেবে সার্ফিং শুরু করাটা কতটা কষ্টকর ছিলো? আপনার পরিচিতদের প্রতিক্রিয়া কি ছিলো?
নাসিমা আক্তার: আমি অনেক কষ্ট করে সার্ফিং করছি। আমাকে অনেকে অনেক কথা বলছে। মেয়েদের জন্য সার্ফিং ভালো না এমন অনেক কিছুই বলছে। তারপরও আমি সার্ফিং অব্যাহত রেখেছি। এখন লোকজনে চিনে সার্ফিং কি জিনিস? যারা চিনে তারা খারাপ বলবে না।
চিত্র: ৫ মাস বয়সী ছেলে সন্তানের সাথে নাসিমা
চ্যানেল আই অনলাইন: গতবারের প্রথম জাতীয়ভাবে আয়োজিত সার্ফিং টুর্নামেন্টে অংশ নিতে পারেন নি কেনো?
নাসিমা আক্তার: গতবার আমি টুর্নামেন্টে অংশ নিতে পারিনি। তখন আমি গর্ভবতী ছিলাম। তাই আসতে পারি নাই। আমার স্বামী এগুলো পছন্দ করতো না। আমার শ্বশুর বাড়িতেও পছন্দ করে না। তবে আমি এখন ওয়েভস ফাইটার্স সার্ফিং ক্লাবে যুক্ত রয়েছি। চারজনের এই ক্লাবটির প্রতিষ্ঠাতা শাহ মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ সিফাত। এখানে আমার সাথে সিরুও রয়েছে। এখানে আমি ছোট ছোট ছেলেমেয়েদেরকে সার্ফিং শেখাচ্ছি। (এই ক্লাব থেকেই এবারের টুর্নামেন্টে অংশ নেন নাসিমা। মেয়েদের গ্রুপ থেকে তিনি ষষ্ঠ স্থান অর্জন করেন।)
চিত্র: সাইফুল্লাহ সিফাতের সাথে নাসিমা
চ্যানেল আই অনলাইন: পরিবার থেকে কি বাধার সম্মুখীন হয়েছেন?
নাসিমা আক্তার: আমার বাবা-মা আমাকে সার্ফিং করার ক্ষেত্রে সমর্থন করলেও শ্বশুর বাড়ি থেকে জোড়ালো আপত্তি ছিলো। এই নিয়ে অনেক ঝামেলাও হয়েছে। সর্বশেষ ২০১৪ সালে প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে প্রাইজ পেয়েছিলাম। তবে আর্থিকভাবে আমাকে এখন কেউ সাহায্য করে না।
নাসিমার বাবা বিদ্যুৎ অফিসে কাজ করতেন। তিনি এখন অসুস্থ। বাবা-মার বাড়ি কক্সবাজারের শুকনাছড়ি আর শ্বশুর বাড়ি তার পাশেই কুতুবদিয়া পাড়ায়।
চিত্র: সিরুর সাথে নাসিমা
সার্ফিংয়ে নাসিমার অর্জন সম্পর্কে জানান তার ক্লাবেরই একজন সদস্য সিরু। বলেন, বাংলাদেশে যতবার সার্ফিংয়ের প্রতিযোগিতা হয়েছে ততবারই ও ফার্স্ট হয়েছে (গতবছর জাতীয়ভাবে প্রথম টুর্নামেন্ট আয়োজিত হলেও এর আগে থেকেই (২০০৪-০৫) সার্ফিং দ্য নেশন-এসটিএন এর পক্ষ থেকে টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হচ্ছে)। প্রত্যেক এই টুর্নামেন্ট হয়। সার্ফিং দ্য নেশন টিম এসে আমাদের এখানে প্রত্যেক বছর একবার করে। এই পর্যন্ত নাসিমা ৬-৭ বার প্রথম হয়েছেন।