পুরনো ঢাকায় কেমিক্যাল কারখানার বিরুদ্ধে এক সপ্তাহের মধ্যে অভিযান শুরুর কথা জানালেও সপ্তাহান্তে শুধু সতর্কই করেছিলেন মেয়র সাঈদ খোকন। আর ওই সতর্কবাণীর ৪৮ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে ঘটে গেলো চকবাজার ট্র্যাজেডি।
গত ১২ ফেব্রুয়ারি নগর ভবনে ‘ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন ও কেমিক্যাল পল্লীতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান স্থানান্তর’ বিষয়ে মতবিনিময় সভা করেন ঢাকা দক্ষিণের মেয়র। সেখানে তিনি ঘোষণা দেন কেউ নিষিদ্ধ রাসায়নিক বিক্রি করছে কি না- তা দেখতে পুরনো ঢাকার রাসায়নিক কারখানা ও গুদামগুলোতে আগামী সপ্তাহে অভিযান শুরু হবে।
সেসময় মেয়র এ-ও জানান, এফবিসিসিআই, পরিবেশ অধিদপ্তর, সিটি করপোরেশন এবং ফায়ার সার্ভিসসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিদের নিয়ে আগামী সপ্তাহের মধ্যে একটি কমিটি করে দেওয়া হবে। রাসায়নিক কারখানার ট্রেড লাইসেন্স নবায়নের আগে যাচাই-বাছাই করবে ওই কমিটি।
মেয়র খোকন সভায় বলেন: নিষিদ্ধ ঘোষিত ২০টি রাসায়নিক যাদের কাছে পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর যাদের কারখানায় নিষিদ্ধ কেমিক্যাল থাকবে না, কমিটির পরামর্শ অনুযায়ী তাদের ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করা হবে।
মেয়র একথাও বলেন, সিটি করপোরেশন ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে চায় না। কিন্তু মানুষের জান ও মালের নিরাপত্তা দিতে হবে সবার আগে।
এক মঙ্গলবারের মতবিনিময় সভার এক সপ্তাহ পর অভিযান শুরু না হলেও পরের মঙ্গলবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) বাবুবাজার মিটফোর্ড এলাকায় কেমিক্যাল বিক্রির দোকান ও কারখানা পরিদর্শনে যান সাঈদ খোকন। সেসময় আবারও তিনি ব্যবসায়ীদের সতর্ক করে বলেন, কোনো দোকান বা গোডাউনে ঝুঁকিপূর্ণ কেমিক্যাল পাওয়া গেলে লাইসেন্স বাতিল ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি সিলগালা করে দেয়া হবে।
মেয়র বলেন, ২৯টি কেমিক্যাল অত্যন্ত দাহ্য। এগুলো অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং এগুলো থেকে যে কোনো সময় অগ্নিকাণ্ড ঘটে প্রাণহানিসহ সম্পদহানি ঘটার আশংকা রয়েছে । তাই এই দাহ্য পদার্থগুলো দোকান বা গোডাউনে না রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
নিয়ম মেনে ব্যবসা করলে ব্যবসায়ীদের সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন: পরিদর্শনের সময় যেসব দোকানে ২৯টি ঝুঁকিপূর্ণ কেমিক্যাল পাওয়া যাবে না, তাদের তাৎক্ষণিকভাবে ট্রেড লাইসেন্স ও অন্যান্য সহযোগিতা দেওয়া হবে।
ওই বৈঠকে মেয়র খোকন বলেন: যে কেমিক্যালগুলো ঝুঁকিপূর্ণ নয় সেগুলো স্যাম্পল হিসেবে দোকানে রাখা যাবে। অতিরিক্ত কেমিক্যাল বোঝাই করা যাবে না। যেগুলো বিক্রি করা হবে সেগুলো আশাপাশের বাসা-বাড়ি বা গোডাউনে না রেখে একটু দূরে কোথাও গোডাউন করে রাখতে হবে। সেখান থেকে সরবরাহ করতে হবে।
নয় বছর আগে নিমতলী ট্র্যাজেডির পর থেকে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন বিভিন্ন সময় নানা উদ্যোগের কথা জানালেও অভিযোগ আছে যে তারা খুব বেশি সফল হতে পারেনি। ২০১০ সালের ৩ জুন রাতে পুরনো ঢাকার নিমতলীতে একটি প্লাস্টিক কারখানায় আগুন লেগে ১২৫ জনের মৃত্যু হয়।
এরপর ঢাকা মহানগরী থেকে দাহ্য রাসায়নিক দ্রব্যের দোকান ও গুদাম কেরানীগঞ্জ বা কামরাঙ্গীরচর এলাকায় সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সিটি করপোরেশেনের উদ্যোগে পুরনো ঢাকার রাসায়নিক কারখানা ও গুদামগুলোতে বিভিন্ন সময়ে অভিযানও চালানো হয়।
মতবিনিময় সভাগুলোতে মেয়র বলেছিলেন: কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, দোকান, গোডাউন বা বাসায় জানমালের হুমকি হতে পারে এমন দাহ্য পদার্থ থাকলে তাদের বিরুদ্ধে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা ব্যবস্থা নেবেন।
তার এসব সতর্কবাণীর মধ্যেই চকবাজারের আগুনে এখন পর্যন্ত ৭৮ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।