সাদেক হোসেন। তিনি ছিলেন একজন মেস বয়। দিনে ও রাতে মেসে রান্নাবাড়ার ফাঁকে পড়াশোনা করে এসএসসি পাস করেছিলেন। এইচএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্র তিনি। তার বাবা মোহাম্মদ নূর প্যারালাইসিসে আক্রান্ত। মা গৃহিণী। ৩ ভাই আর ৩ বোনের মধ্যে দ্বিতীয় সাদেক।
পরিবারের বোঝা বহন করে গত ১০ বছর ধরে কাজ করছে মেস বয় হিসেবে। সম্প্রতি কক্সবাজার জেলায় ১০৩ টাকায় পুলিশ নিয়োগের মাইকিং শুনে অন্য কয়েকজন বন্ধুর মতো সাদেক হোসেনও সোনালী ব্যাংকে ব্যাংক ড্রাফট জমা দিয়ে পুলিশ লাইনে গিয়ে লাইনে দাঁড়ান।
এরপর সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে চূড়ান্তভাবে শিক্ষানবিশ পুলিশ কনস্টেবল পদে (টি আর সি) নিয়োগ পান তিনি। এভাবেই পুলিশে ভর্তি হবার অভিজ্ঞতা আর নিজের জীবনের কথা প্রতিবেদকের কাছে বলছিলেন সাদেক হোসেন।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদ হোসেন বলেন, দেশের অন্য জেলার মত কক্সবাজারে পুলিশের কনস্টেবল নিয়োগের জন্য বিজ্ঞাপন দেওয়ার পর আমার কাছে মনে হলো বিষয়টি আরেকটু খোলাসা করা দরকার। সে কারণে পরীক্ষার ৩ দিন আগে থেকে বিশেষভাবে পুরো কক্সবাজার জেলায় মাইকিং করা হয়। তাতে দালালের খপ্পরে না পড়ে সরাসরি যোগাযোগ এবং কোন টাকা পয়সা লেনদেন না করার বিষয়টি স্পষ্টভাবে ঘোষণা দেওয়া হয়। এরপর নির্ধারিত দিনে নারী-পুরুষসহ দেড় হাজার প্রার্থী লাইনে দাঁড়ায়। তার মধ্যে প্রাথমিক বাছাইয়ে আসে ৭৫৩।
‘‘এরপর লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করে ৬১৯। সবশেষ শিক্ষানবিশ পুলিশ কনস্টেবল ( টি আর সি ) হিসেবে চূড়ান্ত নিয়োগ পেয়েছেন ৩৮৬ জন। এর মধ্যে ৩৮ জন নারী, ৩৪৮ জন পুরুষ, ২ জন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও ৪ জন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান।’’
নিয়োগ পাওয়া মহেশখালী উপজেলার হোয়ানক ইউনিয়নের টাইম বাজার এলাকার পান চাষী ফরিদুল আলমের ছেলে ইয়ার মোহাম্মদ মিজান বলেন: ৬ বন্ধু মিলে মাইকিং শুনে আবেদন করি। কিন্তু একশ তিন টাকায় যে চাকরি হবে তা স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি। আমার বাবা একজন পান চাষী। চার ভাই-বোনের মধ্যে সবার বড় আমি। অনেক কষ্ট করে পড়াশোনা করেছি। এই চাকরিটা আমার বড়ই প্রয়োজন ছিল।
নিয়োগ পরীক্ষায় প্রথম হওয়া চকরিয়া বরইতলীর কৃষক জসিম উদ্দিনের পুত্র মোহাম্মদ হানিফ বলেন: এক টাকা ঘুষ না দিয়ে পুলিশের চাকরি পেলাম। অথচ বন্ধুরা বলত পুলিশের চাকরিতে নাকি অনেক টাকা ঘুষ লাগে। যে কদিন পুলিশের চাকরিতে থাকবো আমিও প্রতিজ্ঞা করছি এক টাকা ঘুষ ও খাবো না। পুলিশ সুপার সৎ ছিলেন বলে, আমার মত কৃষকের সন্তান চাকরি পেলো।
নিয়োগ পাওয়া মহেশখালীর গোরকঘটা সরদারপাড়ার ভুবন চন্দ্র দের সন্তান অখিল দে বলেন: আমি যে ১০৩ টাকার চাকরি পেয়েছি তা আমার বন্ধু আত্মীয়স্বজনসহ এলাকার অনেকেই বিশ্বাস করতে চায়নি। পরে অবশ্য সবাই বিশ্বাস করেছে। এতে করে সাধারণ মানুষের পুলিশের প্রতি সম্মান বেড়েছে।
এ ব্যাপারে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদ হোসেন বলেন: কনস্টেবল ভর্তি নিয়ে কড়া নির্দেশ ছিল মহাপুলিশ পরিদর্শকের। স্যারের নির্দেশের পাশাপাশি চাকরি জীবনের প্রথম পুলিশ সুপার হিসেবে পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ নিজের সততা দিয়ে নিয়োগের একটি প্রতিজ্ঞা ছিল আমার। সেই সাথে কনস্টেবল পরীক্ষার জন্য আমার সহকর্মীরা ও আন্তরিকতার সাথে কাজ করেছে।
‘‘কনস্টেবল নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পর, নিজের উদ্যোগে পুরো জেলায় মাইকিং করেছি যাতে মানুষ হয়রানির শিকার না হয়, দালালের খপ্পরে না পড়ে। আমি মনে করি আমারা পুলিশ মহাপরিদর্শকের নির্দেশ মতো সহকর্মীদের সহযোগিতায় স্বচ্ছতার সাথে কাজটি সম্পন্ন করতে পেরেছি।’’