সময়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এল ক্লাসিকোতে সুয়ারেজ, মেসি এবং ভিদালের গোলে ৩-০ ব্যবধানে রিয়াল মাদ্রিদকে হারিয়েছে বার্সোলোনা। এই জয়ের পর লা লিগার শিরোপা দৌড় থেকে অনেকটা ছিটকে পড়ল মেসিদের থেকে ১৪ পয়েন্ট পিছিয়ে থাকা রিয়াল।
রিয়ালের মাঠে বার্সেলোনা শনিবার ৪-৪-২ ফর্মেশনে খেলা শুরু করে। বেলকে বেঞ্চে পাঠিয়ে জিদান শুরু করেন ৪-১-৩-২ ফর্মেশনে। প্রথমার্ধে দুর্দান্ত খেলা রিয়াল দ্বিতীয়ার্ধে দশজনের দলে পরিণত হয়ে খেই হারায়। গোললাইন থেকে কারভাহাল হাত দিয়ে বল ঠেকিয়ে লালকার্ড দেখেন। আগের দুটি এল ক্লাসিকোতে জিতেছিল রিয়াল মাদ্রিদ। দুটিই চলতি বছর, স্প্যানিশ সুপার কাপে। ৩-১ ন্যু ক্যাম্পে, অন্যটি ২-০ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে। সব ধরনের প্রতিযোগিতায় বার্সার বিপক্ষে রিয়াল টানা তিন ম্যাচ জিতেছিল ১৯৭৮ সালে। এবার আর সেটি হল না।
শুরু থেকেই আক্রমণে যায় রিয়াল। দুই মিনিট হতে না হতে কর্নার থেকে পাওয়া বল ধরে টনি ক্রুজ ক্রস পাঠান বক্সে। ভারানের হেড একটু এদিক-ওদিক হলেই এগিয়ে যেত রিয়াল। কয়েক সেকেন্ড পরে অফসাইডের ফাঁদে পড়ে রোনালদোর গোল বাতিল হয়।
প্রথমার্ধের প্রথম ৩০ মিনিট বার্সা রিয়ালের কাছে এক প্রকার পাত্তাই পায়নি। রিয়াল এই সময় কাউন্টার অ্যাটাকে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। এক সঙ্গে রক্ষণে যাও, এক সঙ্গে আক্রমণ-এই নীতিতে বার্সাকে রীতিমতো কাঁপিয়ে দেয় দলটি।
ধীরে ধীরে বার্সাও নিজেদের গুছিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। ৩০তম মিনিটে থ্র’বল থেকে বক্সের ঠিক মাঝখানে বল পাঠান মেসি। ওখানে ছিলেন পাউলিনহো। গোলে শটও নেন। নাভাস এ যাত্রায় বাঁচিয়ে দেন। ঠিক পরের মিনিটে রাকিটিচের ক্রসে নেয়া পিকের হেড ব্লকড হয়ে যায়।
ফিরতি আক্রমণে পাওয়া কর্নার থেকে পাওয়া বল ধরে বক্সের ঠিক মাঝে ক্রস পাঠান টনি ক্রুজ। রোনালদো লাফিয়ে হেড নিলে বল অনেক উপর দিয়ে যায়।
৩৪তম মিনিটে রোনালদো ডান দিক থেকে বল নিয়ে উঠে বেনজেমাকে চোখে রেখে বক্সের ঠিক মাঝখানে বল প্লেস করেন। আগুয়ান বেনজেমা শটও নেন। বার্সারক্ষক মার্ক-অ্যান্দ্রে টের স্টেগেন কোনোমতে রক্ষা করেন।
৩৯তম মিনিটে পাউলিনহোর হেড ঝাঁপিয়ে রক্ষা করেন রিয়ালের গোলরক্ষক নাভাস।
৪১তম মিনিটে কারভাহালের পাস থেকে লুকা মদ্রিচ সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ হন। বক্সের বাইরে থেকে ডান পায়ের শটে বাঁ দিকে বল রাখেন। অল্পের জন্য বাইরে দিয়ে যায়।
ঠিক পরের মিনিটে বাঁদিক থেকে রিয়ালের মার্সেলো বার্সার বক্সে আবার দারুণ একটি ক্রস পাঠান। বেনজেমা দ্রুত বলে যান। কিন্তু সঙ্গে লেগে থাকা প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারের কারণে মনের মতো হেড নিতে ব্যর্থ হন। বল বারে লেগে বাইরে যায়।
দ্বিতীয়ার্ধে বার্সা পাসিং ফুটবলে মন দেয়। মাঝমাঠে এবং তার আশপাশে খেলা স্লো করে রিয়ালের রক্ষণ ভাঙার চেষ্টা করে ভালভার্দের শিষ্যরা। বাঁদিক ব্যবহার করে প্রথম সাত মিনিটে দুটি আক্রমণ পায় দলটি। ৫৩ মিনিটে সুয়ারেজের ডান পায়ের শট ঠেকিয়ে দেন নাভাস।
ওই পাসিং ফুটবলে ভর করেই ৫৪তম মিনিটে রিয়ালের রক্ষণ ভেঙে ফেলে বার্সা। মাঝমাঠ থেকে বল নিয়ে গোলমূখে দ্রুত গতিতে এগিয়ে যান রাকিটিচ। বক্সের বাইরে থেকে ডান দিকে টোকা দিয়ে বল দেন রবের্তোকে। সময় নষ্ট না করে প্রথম টাচেই রবের্তো বল দেন বাঁদিক থেকে উঠে আসা সুয়ারেজকে। নাভাসের হাত সাতেক দূর থেকে বল রিসিভ না করেই কাছের বারে বল ঠেলে দেন উরুগুইয়ন তারকা। নাভাস ডান দিকে ডাইভও দেন। কিন্তু তার কয়েক সেকেন্ড আগেই বল জালে জড়ায়।
৬২তম মিনটে চরম নাটকীয় মুহূ্র্ত উপহার দেয় সময়ের অন্যতম সেরা এই ক্লাসিকো। বাদিক থেকে বারবার ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা সুয়ারেজ মেসির পাস ধরে বল নিয়ে বক্সের দিকে চলে যান। রিয়ালের এলমেলো রক্ষণ তখন দিশেহারা। সুয়ারেজের শট সেভ করেন নাভাস। কিন্তু ক্লিয়ার করতে পারেননি। ফিরতি বল পেয়ে যান মেসি। তার শট বারে প্রতিহত হয়ে ফিরে আসে। এবার বল পড়ে রবের্তোর মাথায়। পাগলপারা নাভাস তখন বার ছেড়ে সামনে। রবের্তো হেড করেন। কারভাহাল বাধ্য হয়ে হাত দিয়ে নিশ্চিত গোল বাঁচান। নিয়মানুযায়ী চোখের পলকে লাল-কার্ড বের করেন রেফারি। পেনাল্টি থেকে বাঁপায়ের বিদ্যুতগতির শটে ক্লাসিকোতে নিজের ২৫তম গোল করে দলকে ২-০ গোলে এগিয়ে দেন মেসি।
দশজনের দলে পরিণত হয়ে বেনজেমাকে উঠিয়ে নেন জিদান। ৬৬তম মিনিটে তার পরিবর্তে মাঠে আসেন নাচো। ছয় মিনিট বাদে আরো দুটি পরিবর্তন নিয়ে নেন রিয়াল বস। ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার ক্যাসেমিরোর পরিবর্তে মাঠে আসেন অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার অ্যাসেনসিও। আরেক মিডফিল্ডার কোভাচিচকে উঠিয়ে জিদান স্মরণ করেন উইঙ্গার বেলকে।
তিন পরিবর্তনের পর রিয়ালের আক্রমণভাগ কিছুটা শক্তিশালী হয়। অন্যদিকে ৭৭তম মিনিটে বার্সা ডিফেন্স শক্তিশালী করতে ইনিয়েস্তাকে উঠিয়ে পর্তুগীজ রাইটব্যাক সামেদিওকে নামায়।
৭৮তম মিনিটে বক্সের ঠিক মাঝখানে লুকা মদ্রিচ বল দেন বেলকে। তার দুর্বল শট ঠেকিয়ে দেন বার্সাগোলরক্ষক। পরের মিনিটে বেল আরেকটি বল পান ভারানের কাছ থেকে। এবার বক্সের বাইরে থেকে শট নেন। সেটিও প্রতিহত হয়।
ম্যাচের একদম অন্তিম মুহূর্তে মেসির ক্যাটব্যাক পাস থেকে বক্সের ভেতর আসা বল ভিদালের পায়ে লেগে গোললাইন অতিক্রম করে।
বার্সেলোনা: মার্ক-অ্যান্দ্রে টের স্টেগেন, সার্জি রবের্তো, জেরার্ড পিকে, থমাস ভারমেলান, জর্ডি আলবা, সার্জিও বুসকেটস, ইভান রাকিটিচ, পাউলিনহো, আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা, লিওনেল মেসি, লুইস সুয়ারেজ।
রিয়াল মাদ্রিদ: কেইলর নাভাস, কারভাহাল, কোভাচিচ, সার্জিও রামোস, রাফায়েল ভারানে, মার্সেলো, কাসেমিরো, টনি ক্রুজ, লুকা মদ্রিচ, বেনজেমা, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো।