অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের মাঠ ওয়ান্ডা মেট্রোপলিটানো স্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে শুক্রবার রাতে ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে নামবে আর্জেন্টিনা। ম্যাচে একটি পুনরুজ্জীবিত লাইনআপই হয়তো মাঠে নামানো হবে। দলে অভিজ্ঞতা যোগ করতে আট মাস পর ফিরেছেন লিওনেল মেসি। রাশিয়া বিপর্যয়ের পর হোর্হে সাম্পাওলির জায়গায় আনা হয় অনভিজ্ঞ কোচ লিওনেল স্কোলানিকে। যদিও আগের বিশ্বকাপগুলোতে বাজে ফলাফলের পর কোনো পরিচিত মুখকেই আনা হয়েছিল। নিঃসন্দেহে তাদের এবারের পরিকল্পনা ২০২২ কাতার বিশ্বকাপকে মাথায় রেখে।
গত বছরের জুনে ফ্রান্সের কাছে হেরে বিশ্বকাপ থেকে বেদনাদায়ক বিদায়ের পর ভেনেজুয়েলা ম্যাচই হতে যাচ্ছে মেসির প্রথম আন্তর্জাতিক উপস্থিতি। ২০১৯ কোপা আমেরিকা স্কোয়াড ঘোষণার আগে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তেই তার প্রত্যাবর্তন এবং অধিনায়ক ও নতুন কোচিংস্টাফ উভয় পক্ষের অভিপ্রায়ের ফল এটি, যারা পরবর্তীতে প্রজন্মের সেরা খেলোয়াড়দের সাথে সমন্বয় করার আশা করেন। তাছাড়া মেসি বা অন্যদের থাকা মানে এটা বোঝানো যে, সাম্পাওলি, এগার্ডো বাউজা এবং টাটা মার্টিনোর প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরা এখনো পারফর্ম করার যোগ্য।
আগের তিন কোচের পুরনো সৈনিকদের মধ্যে দলে গুরুত্ব পাচ্ছেন বার্সেলোনা তারকা, অ্যাঞ্জেল ডি’মারিয়া এবং নিকোলাস ওটামেন্ডি (ইনজুরির কারণে ডি’মারিয়া ও ওটামেন্ডি বর্তমানে দলের বাইরে)।
তবে এর মধ্যে একটা বড় প্রশ্ন আছে, বিশ্বকাপ ব্যর্থতার নয় মাস পরও কেন সার্জিও আগুয়েরো বনবাসে? এমনই প্রশ্ন সাউথ আমেরিকান বিখ্যাত ফুটবল লেখক ড্যানিয়েল এডওয়ার্ডসের।
আগুয়েরোর অনুপস্থিতি একরকম অগ্রহণযোগ্য। এই মুহূর্তে আক্রমণভাগে তার চেয়ে আর্জেন্টিনা দলে কেউই এগিয়ে নেই।
মৌসুমের মাঝখানে একটু আলো জ্বালালেও গোলের জন্য সংগ্রাম করতে হচ্ছে গঞ্জালো হিগুয়েনকে। এসি মিলান এবং চেলসির হয়ে চলতি মৌসুমে ৩২ ম্যাচে গোল করেছেন মাত্র ১১টি। মাউরো ইকার্দি অবধারিতভাবেই দলে সুযোগ পেতে পারতেন। কিন্তু তার ব্যক্তিগত নাটুকেপনার কারণে ইন্টার মিলান ও জাতীয় দলে উপেক্ষিত।
ইকার্দির জায়গায় যে আরেক তরুণকে নিয়েছে আর্জেন্টিনা, সেই লৌতারো মার্টিনেজ এখনো পরীক্ষিত নন। ঘরোয়া ফুটবলের দুই তরুণ নেতা বোকা জুনিয়র্সের দারিও বেনিদিত্তো এবং রিভার প্লেটের মাতিয়াস সুয়ারেজ আছেন তার পেছনে। যদিও গত মাসের উভয়েই লিগে সাতটি করে গোল করে নিজেদের সামর্থ্যের জানান দিয়েছেন।
এই দুই স্ট্রাইকার ঘরোয়া লিগে নিঃসন্দেহে ভালো পারফর্মার। কিন্তু প্রিমিয়ার লিগ বা ইউরোপের অন্য লিগের টপ স্কোরারের (আগুয়েরো) লেভেলের তারা নন। চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে ৩০ ম্যাচে ২৮ গোল করেছেন আগুয়েরো। যার মধ্যে প্রিমিয়ার লিগে তার গোলসংখ্যা ১৮। এক মেসিকে (চলতি মৌসুমে এ পর্যন্ত ৩৯টি গোল করেছেন, এর মধ্যে লিগে ২৬টি ) বাদ দিলে বাকি চার স্ট্রাইকার মার্টিনেজ, দিবালা, সুয়ারেজ ও বেনিদিত্তো মিলে নিজ নিজ লিগে মোট গোল করেছেন ১৭টি। এই পরিসংখ্যান আগুয়েরোর নিজের জন্য আসলে লজ্জার।
তবে এই উপেক্ষা সত্ত্বেও স্কোলানি প্রকাশ্যেই বলেছেন, আগুয়েরো এখনো কোপা আমেরিকার দলের বিবেচনায় আছেন। কোচ বলেছেন, ‘অন্যদের মতো তারও (আগুয়েরো) কোপা আমেরিকার দলে সুযোগ রয়েছে।’
রাশিয়া বিশ্বকাপে সাম্পাওলির কাজ নিয়ে যারা সবচেয়ে বেশি সমালোচনা করেছেন তাদের একজন আগুয়েরো। আর এটা কোনো গোপন বিষয় নয়। ক্রোয়েশিয়ার কাছে হারের পর টেলিভিশন ক্যামেরার সামনে প্রকাশ্যে কথাও বলেছিলেন। তখন ম্যানসিটি তারকা বলেছিলেন, ‘তিনি (সাম্পাওলি) কী চান সেটা বলতে পারেন।’
সাম্পাওলির ব্যাকগ্রাউন্ড টিমের অংশীদার স্কোলোনি। রাশিয়া বিশ্বকাপের পর এপর্যন্ত ছয়টি প্রীতি ম্যাচ খেলেছে আর্জেন্টিনা। সময়টাতে আগুয়েরোর সঙ্গে দূরত্ব রেখে চলেছেন স্কোলানি। আগুয়েরোর বাদ আগে নতুন মুখের প্রয়োজন বলে ব্যাখ্যা করা হত, কিন্তু মেসি ও ডি’মারিয়া দলে ফেরার পর সেই ব্যাখ্যার পালে হাওয়া খানিকটা কমই পাচ্ছে।
আগুয়েরো সবসময়ই একটু ভিন্নভাবে নিজেকে উপস্থাপন করেন। জাতীয় দল সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, ‘আমি আসলেই দারুণ ফর্মের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। আমার প্রথম ফোকাস এখানে (ম্যানচেস্টার সিটি) কী হচ্ছে সেদিকে। বাকি বিষয়গুলোতে আমার তেমন কিছু জানা নেই।’
তবে নিজে চুপ থাকলেও চুপ করে বসে নেই তার বাবা ডেল কাস্টিলো। একটি বেসরকারি রেডিওকে তিনি বলেছেন, ‘আগুয়েরো যে জাতীয় দলের স্কোয়াডে নেই, এটা আমাকে ব্যথিত করে। এখানে যদি কোনো যুক্তি থাকে সেটা কোপা আমেরিকা। জাতীয় দলের সব স্ট্রাইকারকে যদি একসঙ্গে ধরেন, সেখানে মেসি ছাড়া বাকি সবাই তো রিজার্ভ বেঞ্চের। আমি জানি না, সেখানে কুনের (আগুয়েরো) চেয়ে বেশি ভালো কে।’
ফুটবলের জন্য সর্বোচ্চ শিরোপা জয় এবং ২০২২ বিশ্বকাপের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গে আর্জেন্টিনার শেষ তিনটি টুর্নামেন্টে ব্যর্থ মূল দল বাতিল করে নতুন দল গঠনের সিদ্ধান্ত সঠিক। বিশ্বের অন্যতম প্রতিভাধর খেলোয়াড় তার দেশকে অন্তত আরেকবার বিশ্বকাপে নেতৃত্ব দেবেন বলে কোচ স্কোলানি এবং এএফএ সভাপতি ক্লদিও তাপিয়ে যে মেসির পেছনে ক্রমাগত দৌড়ঝাঁপ করছেন সেটা স্পট।
কিন্তু আগুয়েরো এই পরিকল্পনায় থাকার যোগ্য বা দাবি রাখেন। কারণ তিনি এই মুহূর্তে পারফর্ম দিয়ে তার ক্লাবকে রাঙাচ্ছেন। কোনো ব্যক্তিগত শত্রুতার কারণে যদি তাকে দলে উপেক্ষা করা হয়, সেটা পাগলামি ছাড়া আর কিছুই না।