এএফসি কাপে মালদ্বীপের টিসি স্পোর্টসকে ৫-১ গোলে উড়িয়ে বিশাল জয় তুলেছে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংস।
লিওনেল মেসির জাতীয় দল সতীর্থ খেলবেন, টিসি স্পোর্টসের বিপক্ষে সমর্থকদের তাঁতিয়ে তুলতে এটাই ছিল যথেষ্ট। মাঠে নেমেছিলেনও মেসির এককালের সতীর্থ হার্নান বার্কোস। দেখান জাদুও। বয়স যতই হোক, নামের মর্যাদা রেখে একহালি গোলে এএফসি কাপে বসুন্ধরাকে এনে দিয়েছেন বিশাল জয়।
বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে বুধবার টিসি স্পোর্টসের বিপক্ষে এএফসি কাপে গ্রুপ ‘ই’তে নিজেদের প্রথম ম্যাচে নেমেছিল বসুন্ধরা কিংস। জেতার জন্য কোমর বেঁধেই নেমেছিল ক্লাবটি। মালদ্বীপের ক্লাবটিকে দাঁড়াতেই দেয়নি।
বার্কোসের প্রথম ঝলকের দিনে আনিসুর রহমান জিকোর নৈপুণ্য না উল্লেখ করাটা সুবিচার হবে না। একদিকে আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড যখন গোল করে চলেছেন, অন্যপ্রান্তে নিজেদের জাল সামলে রেখেছেন বসুন্ধরা গোলরক্ষক। তিনবার পেনাল্টি পেয়ে মাত্র একবারই গোল পেয়েছে টিসি।
বাংলাদেশে এসে প্রথমবারের মতো মাঠে নেমেই কোস্টারিকান অধিনায়ক কলিন্দ্রেসের সঙ্গে দারুণ বোঝাপড়ায় প্রথম গোলটি উপহার দেন বার্কোস। ১৮ মিনিটে ডি-বক্সের বাইরে অধিনায়ককে ব্যাকহিলে বলের জোগান দিয়েছিলেন কিরগিজ মিডফিল্ডার বখতিয়ার দুশানবে। বাম থেকে ডান পায়ে নিয়ে বল উড়িয়ে নতুন সতীর্থদের দিকে বাড়িয়ে দেন কলিন্দ্রেস। বক্সের মাঝেই ছিলেন আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড, কড়া পাহারায়ই রেখেছিলেন টিসির দুই খেলোয়াড়। উচ্চতায় সেই দুজনের থেকে অনেক লম্বা বার্কোসের বল রিসিভে কোনো সমস্যা হয়নি, জোরাল হেডে বল জড়ান জালে।
পিছিয়ে পড়ার তিন মিনিট বাদেই অবশ্য সমতায় ফেরে টিসি। বসুন্ধরা ডি-বক্সে দলটির তারকা ফরোয়ার্ড আলি আশফাক ফাউলের শিকার হলে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। স্পটকিক নিতে আসেন ইসমাইল ঈসা। তার প্রথম শটটা ফিরিয়ে দিয়েছিলেন গোলরক্ষক আনিসুর, কিন্তু বিপদমুক্ত করতে পারেননি। ফিরতি শটে সমতা এনে দেন ঈসা।
সমতায় থাকা ম্যাচে বার্কোস নৈপুণ্যে ২৬ মিনিটে দ্বিতীয়বার এগিয়ে যায় বসুন্ধরা। এবারে তার গোলের মূল কারিগর উইঙ্গার বিপলু আহমেদ। কলিন্দ্রেসের থেকে বল পেয়ে টিসির এক খেলোয়াড়কে কাটিয়ে উড়িয়ে ক্রস দেন বার্কোসকে। এবারও তাকে পাহারায় রেখেছিলেন টিসির দুই খেলোয়াড়, লাভ হয়নি। উচ্চতা দিয়েই দুজনকে হার মানিয়ে হেডে এএফসি কাপে নিজের প্রথম ম্যাচে জোড়া গোল আদায় করে নেন বার্কোস।
প্রথমার্ধে বসুন্ধরার নায়ক যদি হন অভিষিক্ত আর্জেন্টাইন, দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে ম্যাচের আলোটা পুরোপুরি কেড়ে নিয়েছেন গোলরক্ষক জিকো। ৫০ মিনিটে টিসির পক্ষে দ্বিতীয়বারের মতো পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। এবারও শট নেন ঈসা। ডানে শট নিয়েছিলেন টিসি ফরোয়ার্ড, ঝাঁপিয়ে ঠেকান জিকো।
শট ঠেকালেও তা বিধিসম্মত না হওয়ায় আগেরটি বাতিল করে নতুন করে শট নেয়ার নির্দেশ দেন রেফারি। সঙ্গে হলুদ কার্ড দেখান জিকোকে। পরের মিনিটে তৃতীয়দফা ঈসা শট নিলে বাম পাশে ঝাঁপিয়ে সেই শটও ঠেকিয়ে টিসিকে সমতায় ফিরতে দেননি বসুন্ধরা গোলরক্ষক।
ম্যাচের ৬৭ মিনিটে আবারও পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। এবার বসুন্ধরার পক্ষে। স্পটকিক নিতে আসেন জোড়া গোল করা বার্কোস। তার শট জাল খুঁজে পেলে বসুন্ধরার হয়ে প্রথম ম্যাচেই হ্যাটট্রিক আদায় করে নেন ৩৫ বছর বয়সী আর্জেন্টাইন।
পরে ৭৬ মিনিটে বসুন্ধরার চতুর্থ গোলটি কলিন্দ্রেসের। ডি-বক্সের বাইরে থেকে ডানপ্রান্ত দিয়ে ক্রস করেছিলেন বিশ্বনাথ ঘোষ। ফাঁকায় থাকা কলিন্দ্রেস সুযোগ বুঝে হেডে বল জড়ান জালে।
ম্যাচের অতিরিক্ত সময়ে গোলের হালি পূর্ণ করেন বার্কোস। টিসি গোলরক্ষকের ভুলের সুযোগে বক্সের মাথা থেকে আলতো ভলিতে বল জালে জড়িয়ে বসুন্ধরার বড় জয় নিশ্চিত করেন তিনি।