লিওনেল মেসিকে দলে পেতে কোমড় বেধে নেমে পড়েছে ম্যানচেস্টার সিটি আর পিএসজি। দুই ক্লাবের আড়ালে নিজেদের অর্থনৈতিক শক্তির সুযোগটাও হাতছাড়া করতে চায় না দুই আরব দেশ কাতার ও আরব আমিরাত। ব্যাপারটা এখন তাই যতটা না ফুটবলীয় তার চেয়ে বেশি অহমিকার লড়াই!
২০০৮ সালে আবুধাবি ইউনাইটেড গ্রুপ কিনে নেওয়ার পর থেকেই বদলে যাওয়া শুরু ম্যানসিটির। কাড়ি কাড়ি অর্থ ঢেলে দামি ফুটবলার, দামি কোচ দলে ভেড়ানো ক্লাবটির এখন একটাই উদ্দেশ্য, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়। অর্থ খরচ করতে গিয়ে যে উয়েফার নিয়ম ভাঙ্গা হচ্ছে তাতেও পাত্তা নেই তাদের।
ম্যানসিটির মালিক মনসুর বিন জায়েদ আল নাহিয়ান আবুধাবী রাজপরিবারের সদস্য। ম্যানসিটি ছাড়াও অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন সিটি, জাপানের ইয়োকোহামা, ভারতের মুম্বাই সিটি এফসিও তার মালিকানাধীন। ২০০৮ থেকে এখন পর্যন্ত ক্লাবটির পেছনে সবমিলিয়ে তিনি করেছেন ১.৯ বিলিয়ন ইউরো!
নয় বছরে কম খরচ করেনি প্যারিস সেন্ট জার্মেইন বা পিএসজিও। ম্যানসিটির মতই ২০১১ সালে মালিকানা বদল হয় ক্লাবটির। কাতারের আমির তামিম বিন হামাদ আল থানির কাতার স্পোর্টস ইনভেস্টমেন্টের হাত ধরে এখন পর্যন্ত ১.৩ বিলিয়ন ইউরো খরচ করেছে পিএসজি। ক্লাবটিকে কাতার রাজপরিবারের আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবে মনে করা হয় আর যে কারণে খরচের ব্যাপারেও কোনো লাগাম নেই তাদের।
২০১৭ সালে সৌদি আরব, আরব আমিরাতসহ ছয়টি দেশ কাতারের উপর বাণিজ্যিক-রাজনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে। আরব দেশগুলোর মধ্যে অনেকটা একঘরে হয়ে পড়ে কাতার। সেসময় তাই নিজেদের আর্থিক সক্ষমতা দেখানোর জন্য ফুটবলকে ব্যবহার করেছে কাতারের রাজপরিবার, ২২২ মিলিয়ন ইউরোতে নেইমারকে বিশ্বের সবচেয়ে দামী ফুটবলার বানিয়ে বার্সেলোনা থেকে প্যারিসে নিয়ে আসে পিএসজি।
নেইমারের পাশাপাশি কাইলিয়ান এমবাপের পেছনেও ১৮০ মিলিয়ন ইউরো খরচ করে পিএসজি বুঝিয়ে দিয়েছে তাদের অর্থের জোর কতখানি। এভাবে অর্থ খরচ করার পর পুরোপুরি না হলেও মোটামুটি সাফল্য পেয়েছে পিএসজি, ২০২০ চ্যাম্পিয়ন্স লিগে প্রথমবারের মত ফাইনাল খেলে হয়েছে রানার্সআপ।
কাতারি মালিকানাধীন পিএসজির সাফল্য ম্যানসিটির কাছে অপমানের মত। প্রায় দুই বিলিয়ন ইউরো খরচ করার পর চারবার ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ জিতলেও চ্যাম্পিয়ন্স লিগে তাদের সর্বসাকুল্যে সাফল্য ২০১৬ সালে সেমিফাইনাল খেলা। আর তাই যেভাবেই হোক ইউরোপ সেরা হওয়ার আসায় তারা মেসিকে দলে চাইছে। একই উদ্দেশ্য পিএসজিরও।
মেসির পেছনে টাকা ঢালতে কোনো আপত্তি নেই ম্যানসিটি-পিএসজির। করোনাকালে বিশ্বের সেরা ফুটবলারকে কেনার মত সামর্থ্য আছে হাতে গোণা যেকয়টি ক্লাবের তাদের শীর্ষে এই দুই ক্লাব। উয়েফার ফিন্যান্সিয়াল ফেয়ার প্লে বাধা হয়ে না দাড়ালে হয়তো মেসির জন্য বার্সার বেধে দেওয়া ৭০০ মিলিয়ন ইউরো রিলিজ ক্লজ খরচ করতেও দ্বিধা করতো না ম্যানসিটি-পিএসজি। এই ফিন্যান্সিয়াল ফেয়ার প্লের কারণে দুই মৌসুম চ্যাম্পিয়ন্স লিগ না খেলা থেকে অল্পের জন্য বেচে গেছে সিটিজেনরা, কড়া নজরে আছে প্যারিসের ধনীরাও।
বার্সার আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ডকে পেতে তাই কূটনীতির পথে হাঁটছে দুই ক্লাব। মেসির সাবেক গুরু ও ম্যানসিটি কোচ পেপ গার্দিওলা যতটা পারছেন চেষ্টা করছেন তার সাবেক শিষ্যকে বুঝিয়ে শুনিয়ে ম্যানচেস্টারে আনার। আর মেসির সাবেক সতীর্থ ও প্রিয় বন্ধু নেইমার আর আর্জেন্টাইন উইঙ্গার অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া মেসিকে ফোন দিয়ে অনুরোধ করেছেন প্যারিসে আসার জন্য।
প্রিয় ক্লাব বার্সার মোহ আর শত আকুতি উপেক্ষা করে মেসি শেষ পর্যন্ত স্পেন ছাড়তে পারছেন কিনা সেটা খুব দ্রুতই জানা যাবে। আর গেলে পিএসজি-ম্যানসিটির সম্ভাবনাই বেশি। এই দুই ক্লাবের যেকোনো একটাতে যদি তিনি যান তবে সেটা প্রতিপক্ষের জন্য হবে চরম পরাজয়। যদি ম্যানসিটি মেসিকে আনতে পারে তবে সেটা তাদের জন্য হবে ২০১৭ সালে নেইমারকে কিনে পিএসজির করা অপমানের জবাব। আর পিএসজি যদি মেসিকে আনতেই পারে তাহলে তারা দ্বিতীয়বারের মত ২০১৭ সালের নিষেধাজ্ঞার কড়া জবাব দিতে পারবে আরব আমিরাতকে।