গোল্ডেন গ্লোবসের মঞ্চে এবার শোনা গেল রাজনীতির চড়া সুর। আর রাজনীতির সেই তীরে বিদ্ধ হলেন নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ক্যারিয়ারে স্মরণীয় সব কাজের জন্য ৭৪তম আসরে আজীবন সম্মাননা পান অস্কারজয়ী অভিনেত্রী মেরিল স্ট্রিপ। পুরস্কার গ্রহণের সময় নিজের বক্তব্যে মেরিল কথা বলেন রাজনীতি, ট্রাম্প, সংবাদমাধ্যম, হলিউড, বিদেশী নাগরিক ও আমেরিকান সমাজের বিভক্তি নিয়ে।
মেরিল স্ট্রিপের বক্তব্যের সময় অভিনেত্রী কেরি ওয়াশিংটনসহ অনেককেই কাঁদতে দেখা যায়।
সরাসরি নাম উচ্চারণ না করলেও ২০১৫ সালে একজন প্রতিবন্ধী সাংবাদিককে উপহাসের জন্য ট্রাম্পের সমালোচনা করেন স্ট্রিপ।
ট্রম্পের অভিবাসী নীতির সমালোচনা করতে হলিউডকে উদাহরণ হিসেবে নেন অভিনেত্রী। তিনি বলেন, হলিউড এখন প্রবাসী ও বিদেশীদের উপর ভর করে চলছে। আমরা যদি তাদের সবাইকে বের করে দেই আপনি আর কিছুই দেখতে পাবেন না।
একজন শিল্পীর কাজের কথা উল্লেখ করে স্ট্রিপ বলেন, একজন শিল্পীর একমাত্র কাজ মানুষের জীবনে প্রবেশ করা, যারা আমাদের চেয়ে আলাদা এবং তারা কি চায় সেটা অনুভব করা। এই বছর অনেক অনেক ভাল কাজ হয়েছে, এর মধ্যে উদ্দীপক এবং সহানুভূতিশীল কাজও আছে।
এরপর মেরিল বলেন, এই বছরের একটি ‘পারফর্মেন্স’ তাকে ‘স্তব্ধ’ করেছে। তবে সেটা ভাল হয়েছে এই জন্য না-বরং তার কিছুই ভাল ছিল না বলে।
ট্রাম্পের নাম উল্লেখ না করে স্ট্রিপ বলেন, আমি স্তম্ভিত হই যখন দেখি এমন একজনকে ব্যক্তি আমাদের দেশে সবচেয়ে সম্মানিত আসনে বসনো হয় যিনি একজন প্রতিবন্ধী সাংবাদিককে উপহাস করেন, অন্যকে বেশি গুরুত্ব দেন এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করেন।
সাংবাদিককে উপহাস করার বিষয়টি যদিও আগেই অস্বীকার করেছেন ট্রাম্প। তার বিরুদ্ধে নিউইয়র্কস টাইমসের প্রতিবন্ধী সাংবাদিক সার্জি কোভালেস্কিকে বিদ্রুপ করার অভিযোগ উঠেছিল।
স্ট্রিপ বলেন, যখন আমি এটা দেখি তখন আমার হৃদয়টা ভেঙে যায়, আমি এখনো এটা নিজের মাথা থেকে সরাতে পারিনি। কারণ এটা কোনো সিনেমা ছিল না, তা ছিল বাস্তব।..
সাংবাদিককে ব্যঙ্গ করা ট্রাম্পের সেই ভিডিও…
একজন ক্ষমতাবান মানুষের এই ধরনের আচরণ যে অন্যের উপর প্রভাব ফেলে সে কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে অভিনেত্রী বলেন, কোনো একজন ক্ষমতাবান মানুষের দ্বারা এই রকম একটি কাজ যখন জনসম্মুখে হয় তখন সেটা অন্যের জীবনে প্রভাব ফেলে। সেই সাথে একই রকম কাজ অন্যকে করতে বৈধতা দেয়ার মতো হয়ে যায়।
চােখে ছল ছল জ্বল নিয়ে স্ট্রিপ বলতে থাকেন, ক্ষমতাবানরা যখন ক্ষমতার অপব্যবহার করে, ক্ষমতা দ্বারা দুর্বলকে নিপীড়ন করে তখন আমরা সবই হারাই।
সাংবাদিকদের রক্ষায় অলাভজনক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে স্টিপ বলেন, তাদের রক্ষা করুণ, কারণ সামনে এগনোর জন্য আমাদেরকে তাদের কাছে যেতে হয়, সত্যকে রক্ষার করার জন্য তাদের কাছে আমাদের যাওয়া প্রয়োজন।
সদ্য প্রয়াত বন্ধু কেরি ফিশারের ‘যদি ভাঙা হৃদয় নিয়ে যাও, তাকে শিল্পে রূপ দাও’ উক্তির মধ্যদিয়ে ছয় মিনিটের আবেগময় বক্তব্য শেষ করেন মেরিল স্ট্রিপ।