ব্রিটেনের ৫৬তম নির্বাচনে বিভিন্ন জরিপ অনুযায়ী হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস থাকলেও একরকম চমক দেখিয়ে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে দ্বিতীয় বারের মতো ক্ষমতায় গেলো কনজারভেটিভ পার্টি। প্রায় পাঁচ কোটি নিবন্ধিত ভোটারের মধ্যে ভোট দিয়েছেন ৭৫ শতাংশ ভোটার।
ক্ষমতার আরেক দাবিদার লেবার পার্টি লড়াইয়ে থাকার আভাস দিলেও তা হয়নি। ২০১০ সালের নির্বাচনে কনজারভেটিভ পেয়েছিলো মোট ৩০৬টি আসন, লেবার ২৫৮টি। উপ-প্রধানমন্ত্রী নিক ক্লেগের দল লিবারেল ডেমোক্র্যাট ৫৭টি আসন পেয়েছিলো।
এবারের নির্বাচনে কনজারভেটিভ একাই পেয়েছে ৩৩১টি আসন। বিপরীতে ২৬টি আসন খুইয়ে লেবার পেয়েছে ২৩২ সিট।
অপরদিকে লিবারেল ডেমোক্র্যাটরা পেয়েছে মাত্র আটটি আসন, যেখানে গত নির্বাচনে ছিলো ৫৭ টি। তাদের হটিয়ে দিয়ে এবার তৃতীয় শক্তি হিসেবে উত্থান হয়েছে ন্যাশনাল স্কটিশ পার্টি এন.এস.পির। ২০১০ সালের নির্বাচনে যেখানে তারা মাত্র ৬টি আসন পেয়েছিলো, সেখানে এবার তারা পেয়েছে ৫৬ টি আসন।
আর গ্রেট ব্রিটেনের কিছু আসনে লেবার তাদের পুরনো কিছু আসন উদ্ধার করলেও স্কটল্যান্ডে একরকম ভরাডুবি হয়েছে। গতবারের ৪১টির মধ্যে রাখতে পেরেছে মাত্র একটি আসন। স্বয়ং স্কটিশ লেবার নেতাও হেরেছেন ৭ মের নির্বাচনে।
তবে কি কারণে ১৯৯৭ থেকে ২০১০ সালের মে পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকা লেবারের এরকম ভরাডুবির কারণ বিশ্লেষণ চলছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা প্রধান কারণ হিসেবে লেবারের নেতৃত্বের কথা বলছেন।
২০১০ সালের নির্বাচনের পর গর্ডন ব্রাউন নেতৃত্ব ছেড়ে দেন। সাবেক ফরেন মিনিস্টার ডেভিড মিলিব্যান্ডের লিডার হওয়ার কথা থাকলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে লিডার হন তারই ভাই এড মিলিব্যান্ড। তখন থেকে নেতৃত্ব নিয়ে সমালোচনা থাকলেও তা বন্ধ করতে একরকম রাজনীতি থেকে অবসর নিয়ে ব্রিটেন ছেড়ে চাকরিতে আমেরিকায় চলে যান ডেভিড।
এতে তখন সমালোচনা বন্ধ হলেও ২০১৫ সালের নির্বাচনের আগে আবারও লেবারের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। বিতর্ক করার মতো অনেক বিষয় থাকলেও প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের সাথে কোনোভাবেই পেরে উঠছিলেন না লেবার নেতা এড মিলিব্যান্ড।
তারপরও নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সম্ভাবনায় ঝুলন্ত পার্লামেন্ট হবে বলে ধারণা হয় সবার মাঝে। তখন জোট সরকার গঠনের বিষয়টি উঠে আসে।
তবে, জরিপে এন.এস.পি এগিয়ে থাকায় তাদের নিয়ে প্রধান দলগুলোর চিন্তা বেড়ে যায়। এরই মাঝে এক টিভি শোতে লেবার নেতা মিলিব্যান্ড সরাসরি জোট গঠনে আগ্রহের কথা জানালে এন.এস.পি তাদের সাথে থাকবে বলে মন্তব্য করেন দলটির নেতা নিকোলা স্টারজেন।
কিন্তু ২১ এপ্রিল সাবেক প্রধানমন্ত্রী স্যার জন মেজর লেবার ও এন.এস.পির জোট প্রসঙ্গে প্রশ্ন তোলেন। বিভিন্ন বিষয়ের সঙ্গে স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতা প্রশ্নে গণভোটের কথা মনে করিয়ে দেন তিনি।
এন.এস.পি স্বাধীনতার পক্ষে ছিলো বলে তাদের সাথে লেবার জোট করলে গ্রেট ব্রিটেন ঐক্যবদ্ধ থাকবে না বলে সরাসরি মন্তব্য করেন মেজর। অনেকে ওই প্রচার সভায় স্যার জন মেজরের বক্তব্যকেই এবারের নির্বাচনে টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে ধরছেন।
এরইমধ্যে দলের ব্যর্থতা নিজ কাঁধে নিয়ে পদত্যাগ করেছেন লেবার নেতা এড মিলিব্যান্ড। তার জায়গায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান করা হয়েছে ডেপুটি লিডার হ্যারিয়েট হারমানকে।
আর প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথের সঙ্গে দেখা করেছেন। খুব শিগগিরই নতুন সরকার গঠন করা হবে। ফলে দ্বিতীয়বারের মতো ১০ ডাউনিং স্ট্রিটে উঠতে যাচ্ছেন ক্যামেরন।