চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

মৃত মানুষটা তখন শুধুই একটা সেলফি আনন্দ!

বীর মুক্তিযোদ্ধা, গীতিকার, সুরকার ও সংগীত পরিচালক আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলকে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানানো শেষে সেলফি প্রবণ নাগরিক জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন অভিনেত্রী শাহনাজ খুশি।

ফেসবুকে দেয়া এক স্ট্যাটাসে শহীদ মিনারে গিয়ে যারা সেলফি তোলায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন তাদের তীব্র সমালোচনা করেন এই অভিনেত্রী।

শাহনাজ খুশি তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেন: ‘‘শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানানোর মানুষের চেয়ে, সেলফি তোলার মানুষই এখন বেশী। প্রতিবার গেলে, আগের বারের তিক্ত অভিজ্ঞতাকে ছাড়িয়ে যায়। একজন প্রাণহীন দেহ সামনে রেখে কিভাবে এ ইচ্ছা হয় তা আমার মাথায় আসে না। খুবই বিব্রতকর এবং সেই সাথে বেদনারও আমার কাছে। শহীদ মিনারে যাদের নেয়া হয় তারা কোন না কোন ভাবে শ্রেষ্ঠা স্থানের। কিছু বন্ধু-স্বজন ছাড়া আগত সব মানুষের মোবাইল হাতে নিয়ে একই আবদার। কে মারা গেছে, কেন, কত বয়স, কি হয়েছিল, তার পরিবারের জন্য কত বেদনার কোনদিক্ ভ্রুক্ষেপ নাই!

শহীদ মিনারে দাঁড়িয়ে বিব্রত আমি তখন অন্তত একটা মানবিক, শোকাতুর চোখ খুঁজি! শহীদ মিনারে আনা মৃত শ্রেষ্ঠ মানুষটা তখন শুধুই একটা সেলফি ফটোর আনন্দ ছাড়া কিচ্ছু না!

গত সেপ্টেম্বরে বৃন্দাবনের মা মারা গেলেন, বাবা একই ভাবে তার ৩ বছর আগে। গ্রামে যেহেতু কেউ থাকে না, তাই এলাকার বন্ধুজনদের একটা ফোন করে আমরা রওনা হই। আমার প্রাণের গ্রামের, সব মানুষ কোথায় কী করতে হবে, এমনকি মাইকিং সহ সব করে নির্ভার করেছে। অনেক রাত অবধি জংগলের ভেতর সামাধিস্থলে অন্ধকারে কুপির আলো হাতে শত শত মানুষ সমাহিত না করা পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থেকেছে। বসার জন্য চেয়ার/হাত পাখা/কলসে করে কলের পানি দিয়েছে। আমাদের চোখের পানির ধারায় সিক্ত হয়েছে তাদের চোখ। আমাদের সৌভাগ্য, আমরা দুজনই দর্শকের অনেক ভালবাসার, নিজ এলাকায় সেটা আরও বেগবান হয়। সেই সাথে যুক্ত ছিল আয়নাবাজীর তুমুল জনপ্রিয়তার পর পরই চঞ্চল চৌধুরী। তিনি সমব্যথী হয়ে দুইবারই আমাদের সাথে ছিল সর্বক্ষণ। পুরো সময়, এমনকি পরদিনও কেউ ফোন নিয়ে কাছে আসেনি। এসেছে সমবেদনা জানাতে, সুবিধা অসুবিধার খোঁজ করতে।

নাগরিক জীবন কি মানুষের মানবিক জায়গাটাকে কার্পেটে মুড়ে দিয়েছে? বলবার/করবার/অথবা যন্ত্রের স্বাধীনতা কি মানুষের সহজাত মমত্ববোধকে গ্রাস করেছে? একটা মোবাইল ফোন কি এতো অচেনা করে ফেলে মানবিক আচরণের? তা কেমন করে হয়? এসব মানুষগুলোর শেকড় তো গ্রামেই!

এলোমেলো ভাবনা গুলোই ব্যথিত আমি খুব সংগোপনে চলে আসি, বাইরে এসে লম্বা শ্বাস ফেলি এই ভেবে যে, ভাগ্যিস মৃত বন্ধু-জন কিছু বলতে পারছে না/দেখতে পারছে না!’’