গেল রোববার থেকে তিনদিনে দেশে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা যথাক্রমে ১৮, ২৬ এবং ২৬। আবার এই সময়ে আক্রান্ত শনাক্তের সংখ্যা ১১৫৯, ১৭৭৩ এবং ১৭১৯ জন। মানে মাত্র তিনদিনে মোট মৃত্যু ৭০ আর আক্রান্ত শনাক্ত ৪ হাজার ৬’শ ৫১ জন। এই পরিসংখ্যানই বলছে, বাংলাদেশে হঠাৎ করেই অন্য রূপ ধারণ করেছে করোনাভাইরাস। বিশেষ করে যুক্তরাজ্য ও সাউথ আফ্রিকায় পাওয়া করোনার দুই নতুন প্রজাতি এদেশেও শনাক্ত হওয়ার পর।
আমরা আগেই জেনেছি, যুক্তরাজ্য এবং সাউথ আফ্রিকায় করোনাভাইরাসের যে নতুন প্রজাতি চিহ্নিত হয়েছে, তা কয়েকগুণ দ্রুত গতিতে মানুষের মধ্যে সংক্রমণ ছড়ায়। এমনকি আক্রান্ত শনাক্ত হওয়ার কয়েকদিনের মধ্যেই রোগীকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়। করোনার নতুন এই দুই প্রজাতি আগের প্রজাতির মতো শুধু বয়স্কদেরই চরমভাবে আক্রমণ করে না, তরুণরাও সমানভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। এমনকি এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত ভ্যাকসিনও নতুন প্রজাতির বিরুদ্ধে যথেষ্ঠ কার্যকর নয় বলে দাবি করছেন বিজ্ঞানীরা।
তাহলে বাঁচার উপায়? এক্ষেত্রে চিকিৎসকদের একটাই পরামর্শ, সেই আগের মতই আমাদেরকে সবকিছু মেনে চলতে হবে। বিশেষ করে মাস্ক ব্যবহার-সহ গত বছর যে যে স্বাস্থ্যবিধি আমরা মেনে চলেছি। যেভাবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে দৈনন্দিন কাজে অংশ নিয়েছি; ঠিক সেই বিষয়গুলোই মেনে চলতে হবে। এ ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।
গত বছরের ৮ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে দেশে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত তার দাপট আমরা দেখেছি। তারপর থেকে শীতকে কেন্দ্র করে নানা আশঙ্কা ভুল প্রমাণিত করে কমতে থাকে করোনাভাইরাস আক্রান্ত শনাক্তের সংখ্যা। একই সাথে কমতে থাকে মৃত্যুর সংখ্যাও। এমনকি শনাক্তের সংখ্যা নেমে আসে ৩ শতাংশের নিচে। কিন্তু প্রায় আড়াই মাস বিরতির পর আবারও আগের চেহারায় ফিরে যেতে শুরু করেছে ভাইরাসটি।
এমন অবস্থায় স্বাস্থ্যবিজ্ঞানীরা বলছেন, প্রকৃতপক্ষে বহু বছর ধরে গরমের সময়টাইতেই এই অঞ্চলে ভাইরাল ডিজিজের প্রকোপ বাড়তে থাকে। এই ধারা নতুন নয়। তার মানে পরিস্থিতি এখন করোনার অনুকূলে। বিশেষ করে আমরা যখন হাট-বাজার, দোকানপাট-গণপরিবহনে মাস্ক ছাড়া বা অন্য কোনো স্বাস্থবিধি না মেনেই চলছি। কোনো কিছুই পাত্তা না দিয়ে বলছি, ‘ভ্যাকসিনতো এসেই গেছেই- করোনাকে আর ভয় কি?’
ঠিক এই ভুলেই আমরা আবার নতুন করে করোনাভাইরাসকে ডেকে আনছি। অথচ দেখা গেছে, প্রথম ডোজ টিকা নেওয়ার পরও কয়েকজনের মৃত্যু ঘটেছে করোনা আক্রান্ত হয়ে। হয়তো সাবধান হলে তাদের মৃত্যু এড়ানো যেত।
আমরা মনে করি, বর্তমানে যে অবস্থা চলতে তাতে কড়াকড়ি আরোপ না করলে আবারও আমরা করোনার কাছে জিম্মি হয়ে যাবো। যতই ভ্যাকসিন আসুক না কেন, স্বাস্থ্যবিধি এবং সামাজিক দূরত্ব মেনে না চললে করোনাকে ঠেকানো সম্ভব না।