সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। আবারও গ্যাস লাইনে বিস্ফোরণ। তবে পার্থক্য শুধু স্থান, কাল আর হতাহতের সংখ্যায়। রোববার চট্টগ্রামের পাথরঘাটায় গ্যাস লাইন বিস্ফোরণের পর পাশের একটি আবাসিক ভবনের দেয়াল ধসে ৭ ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১৫ জন। যাদের মধ্যে আবার কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
গত মাসের শেষের দিকে রাজধানীর মিরপুরের রূপনগর এলাকায় বেলুনের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে ৭ শিশুর নিহত হওয়ার ঘটনার এখনো আমাদের সামনে জ্বলজ্বল করছে। সেই ঘটনার কয়েকদিন আগে এবং পরে একই রকম আরো অন্তত দুটি ঘটনার কথা আমরা বলতে পারি। যার একটি ঘটে ১১ নভেম্বর, কুমিল্লার দেবিদ্বারে। সেদিন একটি মাইক্রোবাসের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে শিশুসহ তিন নিহত হয়।
আর আগের মাসে ১৭ অক্টোবরের অন্য একটি ঘটনায় চট্টগ্রামের আনোয়ারায় অ্যাম্বুলেন্সের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে নিহত হন তিনজন। আহত হয় আরও তিনজন। এই তিন ঘটনার এক মাসের মধ্যেই আবার চট্টগ্রামের পাথরঘাটায় আবারো একই ঘটনা আমাদেরকে অনেকগুলো প্রশ্নের সামনে দাঁড় করিয়েছে।
আমরা জানি, এই ধরণের ঘটনার পর সরকারের বিভিন্ন সংস্থা পরস্পরকে দোষারোপ করতে থাকে। পাথরঘাটার ঘটনাতেও তার কোনো ব্যত্যয় হয়নি। ফায়ার সার্ভিস বলছে, গ্যাসলাইনে ত্রুটি এর দায়ী। এছাড়াও বিস্ফোরক অধিদপ্তর এবং পুলিশ কর্মকর্তাও তাই ধারণা করছেন। কিন্তু কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) কর্মকর্তারা দাবি করছেন, গ্যাস লাইনে ত্রুটি থেকে ওই বিস্ফোরণ ঘটেনি।
আরেকটি কমন বিষয় হলো; একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন, একটা নির্দিষ্ট সময় পর কিছু সুপারিশসহ সেই কমিটির প্রতিবেদন দাখিল। ঠিক তার কিছুদিন পর আবার একই ধরণের ঘটনার পুনরাবৃত্তি। তাহলে আমরা কি শিখছি? সেই সব প্রতিষ্ঠান বা তার কর্মকর্তারা কি করেন? তার কি কোনো ব্যবস্থা নেন? যদি নেন, তাহলে একই ঘটনা বারবার ঘটবে কেন?
আসলে এসব প্রশ্নের একটাই উত্তর তা হলো অবহেলা। কিছু প্রতিষ্ঠান এবং সেই প্রতিষ্ঠানের কিছু কর্মকর্তার অবহেলার কারণে বহু নিরীহ মানুষকে এভাবেই রাস্তা পড়ে পড়ে মরতে হয়। কিন্তু দায়ী ব্যক্তিদের কোনো শাস্তি হয় না। আর শাস্তি হয় না বলেই তারা একই ঘটনার বারবার জন্মের পেছনে ভূমিকা রাখে।
আজকের ঘটনার পর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রীও নসরুল হামিদ বিপু সরাসরিই গ্যাস বিতরণ সংস্থা এবং পেট্রোবাংলার গাফিলতিকে দায়ী করেছেন। শুধু তাই নয়, ঝুঁকিপূর্ণ গ্যাস লাইন থেকেই যে বারবার হতাহতের ঘটনা ঘটছে; সেটাও জানিয়েছেন তিনি।
আমাদের প্রশ্ন তাহলে নিজ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ প্রতিষ্ঠানের দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তিনি ব্যবস্থা নিচ্ছেন না কেন? কেন বছরের পর বছর দীর্ঘদিনের পুরানো আর জরাজীর্ণ গ্যাস লাইন দিয়েই রাজধানীসহ সারাদেশ গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে? এই যে, লাখ লাখ যানবাহন মেয়াদোত্তীর্ণ গ্যাস সিলিন্ডার নিয়ে চলাচল করছে তার বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নিচ্ছিন তিনি?
আসলে একটা ঘটনা ঘটনার পরই শুধু আমরা সেই বিষয় নিয়ে আলোচনা করি। কিন্তু দু’দিন পর আবার নতুন কোনো ঘটনা এলে তা ভুলে যাই। এখানেই আমাদের আসল সমস্যা। আর এই সমস্যার মূলে না গেলে তার সমাধান কোনোদিন হবে বলেই আমরা মনে করি।