একের পর এক বিস্ময়ের জন্ম দিয়েই যাচ্ছেন বাংলাদেশের বাঁহাতি পেসার
মুস্তাফিজুর রহমান। তার বোলিংয়ের বৈচিত্র্য পড়তে না পেরে বোকা হচ্ছেন বিশ্ব
ক্রিকেটের তারকারা। তিনি এখন টক অব দ্য ক্রিকেট। তার জাদুকরী বোলিং দিয়ে
নিজেকেই প্রতিনিয়ত ছাড়িয়ে যাচ্ছেন তিনি। হয়ে উঠছেন সেরাদের সেরা। সেই সঙ্গে
সারা বিশ্বের ক্রিকেট বিশ্লেষনের উপলক্ষও হয়ে উঠেছেন মুস্তাফিজ।
মুস্তাফিজ এখন এক বিস্ময়ের নাম। চলতি আইপিএলে তার বোলিং প্রতিভায় খেলোয়াড়, ধারাভাষ্যকার, দর্শক– এমন কেউ নেই যে মুস্তাফিজ বন্দনায় মাতছেন না।
আইপিএলে এখন পর্যন্ত ৯ ম্যাচে নিয়েছেন ১৩ উইকেট। সংখ্যাটা এখানে আসলে তার প্রতিভার পুরোটা দেখাচ্ছে না। পরিসংখ্যানের চেয়েও বড় বিষয়: মুস্তাফিজ কখন কী বল করবেন, কেউ তা বুঝতে পারেন না। মুস্তাফিজ তাই আইপিএলে ব্যাটসম্যানদের জন্য এখন ত্রাসের এক নাম।
আর যে ৯ ম্যাচ খেলেছেন তার মধ্যে এখন পর্যন্ত সেরা অর্জনটা পাঞ্জাবের বিপক্ষে। ৪ ওভারে ১ মেডেনসহ ৯ রানে নেন দুই উইকেট।
যেখানে টি-টুয়েন্টি ক্রিকেট মানেই ব্যাট চালিয়ে বল সীমানা পার করা, সেখানে সত্যিই মুস্তাফিজ এক বিরল প্রতিভা যার বল ব্যাটসম্যানরা খেলতে পারেন না। ক্রিকেট বোদ্ধা আর বিশ্লেষকদের কাছে মুস্তাফিজ তাই এক বিস্ময়।
কি আছে ‘দ্য ফিজ’ খ্যাত মুস্তাফিজের বোলিংয়ে? কেনই বা বিশ্বের সেরা সেরা ব্যাটসম্যানদের কাছে দুর্বোধ্য মুস্তাফিজ? এমন প্রশ্নের জবাব খুঁজতে চ্যানেল আই অনলাইন কথা বলেছেন বাংলাদেশের সাবেক পেসার সাইফুল ইসলামের সঙ্গে।
ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সাইফুল অবশ্য পরিসংখ্যানটাই আগে দেখেছেন। চলতি আইপিএলে এখন পর্যন্ত ২০ ওভারের বেশি বল করা পেসারদের মধ্যে সবচেয়ে মিতব্যয়ী বোলার মুস্তাফিজ, এছাড়াও বোলিং গড়ে রয়েছেন তৃতীয় অবস্থানে।
মুস্তাফিজের কিপটে বোলিংয়ের বিশ্নেষণে ৪৭ বয়সী বাংলাদেশের সাবেক পেসার সাইফুল ইসলাম বলেন, মুস্তাফিজ বাঁহাতি বোলার। সাধারণত বাঁহাতি বোলারদের মোকাবেলা করতে ডানহাতি ব্যাটসম্যানদের কষ্টই হয়। তবে বাঁহাতি ব্যাটসম্যানরা সহজেই খেলতে পারে বাঁহাতি বোলারদের। ওই দিকে দিয়ে এবারের আইপিএলে সুরেশ রায়না ছাড়া বাঁহাতি উল্লেখযোগ্য ব্যাটসম্যান কেউ নেই। আর ওয়ার্নার ও শিখর ধাওয়ান তো মুস্তাফিজের সতীর্থ। তাই মুস্তাফিজের মিতব্যয়ী বোলিংয়ের এটা একটা রহস্য।
‘তবে ডান হাতি কিংবা বাঁ হাতি ব্যাটসম্যান বলে কথা না… তার এক্সটা অর্ডিনারি ডেলিভারি আর বৈচিত্র্যপূর্ণ বোলিংয়ে ধাঁধায় পড়ে যান যে কোনো ব্যাটসম্যান। এটাই তার সাফল্যের মূল কারণ,’ বলে মন্তব্য করেন সাইফুল।
পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের একমাত্র টি-টুয়েন্টি দিয়ে ২০১৫ সালের ২৪ এপ্রিল হোম অব ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছিলো মুস্তাফিজুর রহমানের। অচেনা মুস্তাফিজের সামনে সেদিন হাবুডুবু খেয়েছে পাকিস্তানের টি-টুয়েন্টি স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যানরা। চার ওভারে ২০ রান দিয়ে দুই উইকেট নিয়েছিলেন মুস্তাফিজ। তার ২৪ বলের মধ্যে ১৬টিই ছিল ডট বল। তার বলে বাউন্ডারি হয়েছিল মাত্র একটি।
মূলত মুস্তাফিজের অভিষেক থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত চলতি আইপিএল তার বোলিংয়ের মূল অস্ত্র কাটার। আর ফিজের কাটার এতটাই ভয়ংকর যে তাকে পড়তে পারছে না কোনো ব্যাটসম্যানই।
মুস্তাফিজের কাটারের কথা তুলতে স্মৃতিকাতর হয়ে সাবেক ডানহাতি পেসার সাইফুল বলছিলেন: একটা সময় আমার কাটারও অনেক ভালো হতো। সিনিয়রদের প্রশংসাও পেতাম। তবে মুস্তাফিজের কাটার আর আমার কাটার এক নয়।
‘ওই যে বললাম মুস্তাফিজ এক্সটা অর্ডিনারি। মূলত মুস্তাফিজের বলের মাধুর্য্য ভিন্ন। ও যখন পেস বল করছে ঠিক ওই রকম আরেকটা একই গতির বল সে কুইক স্লোয়ার দিয়ে দিচ্ছে। ফলে ব্যাটসম্যান কিছু বোঝার আগেই আউট হয়ে যাচ্ছেন। আবার কখনো আউট সুইং-ইনসুইং দিয়ে ব্যাটসম্যানদের বোকা বানাচ্ছে।’
বাংলাদেশের হয়ে সাত ওয়ানডে খেলে ছয় উইকেট নেওয়া পেসার সাইফুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আমার মনে হয় মুস্তাফিজের ভাণ্ডারে কাটার ছাড়াও অনেক বৈচিত্র্য রয়েছে। অনেক সময় আমরা মুস্তাফিজের বোলিংয়ে কুইক বাউন্স দিয়েও ব্যাটসম্যানকে পরাজিত করতে দেখেছি।’
গত বছরের জুনে ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৫ উইকেট পেয়েছিলেন ২০ বছর বয়সী এই বাঁ-হাতি বোলার। এর ধারাবাহিকতা বজায় ছিল দ্বিতীয় ম্যাচেও সেই ভারতের বিপক্ষেই। সে ম্যাচে তিনি পেয়েছিলেন ৬ উইকেট। তিন ম্যাচের সিরিজে ১৩ উইকেট নিয়ে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতেছিল টিম টাইগার্স। ওই সিরিজে মুস্তাফিজ আর্বিভূত হন কাটার মাস্টার রূপে। তার কাটার বল পড়তে না পেরে ভারতের শক্তিশালী ব্যাটিং লাইন-আপ গুড়িয়ে যায় তাসের ঘরের মতো।
মুস্তাফিজের মতো বোলারের প্রতি যত্নবান হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ১৯৯৭ সালে কেনিয়ার বিপক্ষে নাইরোবিতে শেষ ওয়ানডে খেলা সাইফুল ইসলাম।
চ্যানেল আই অনলাইনকে তিনি বলেন, দীর্ঘ মেয়াদে ক্রিকেট খেললে অনেক সময় ইনজুরি আক্রান্ত হওয়ার আশংকা থাকে। এছাড়া প্রতিনিয়ত কাটার দিলে রিস্টের নার্ভেও ইনজুরি হওয়ার প্রবণতা দেখা যায়।
তাই যেকোন ধরনের ইনজুরি থেকে মুক্ত রাখতে ক্রিকেট বোর্ডের পাশাপাশি মুস্তাফিজের নিজেরও যত্নবান থাকা উচিত বলে মনে করেন সাবেক পেস বোলার সাইফুল ইসলাম।